মঙ্গলবার, ১৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

মাধ্যমিকে ইতিহাস প্রশ্ন নিয়ে বিতর্ক, অংকের পরীক্ষায় দেওয়া হয়নি গ্রাফ পেপার 

News Sundarban.com :
মার্চ ২, ২০২৩
news-image

নিজস্ব প্রতিনিধি, নামখানা: গত বছরের ন্যায় এই বছরেও মাধ্যমিক ইতিহাস প্রশ্নপত্র নিয়ে বিতর্ক রয়েই গেল। অংক কিংবা ইংরেজি থেকে বেশিরভাগ ছাত্রছাত্রীদের কাছে ইতিহাস পরীক্ষা কিন্তু সহজ হয়ে থাকে।

ইতিহাস যারা পড়াশোনা করেন তাদের জানা থাকলে ‘কমন’ আর জানা না থাকলে ‘ আনকমন’ এই ধারণায় বিশ্বাসী পরীক্ষার্থীরা। বুধবার দিন ছিল পরীক্ষার্থীদের ইতিহাস পরীক্ষা। সেই পরীক্ষাতে ছাত্রছাত্রীরা শর্ট কোশ্চেন টাচ করতে পারে নি। যেসব ছাত্রছাত্রীরা একটু মেধাবী তাদের ক্ষেত্রেও শর্ট কোশ্চেনের উত্তর তেমন ভাবে আশানুরূপ করতেই পারেনি বলে ছাত্রছাত্রীরা মত প্রকাশ করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নামখানা ব্লকের এক মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী বলেন, ‘ইতিহাসের শর্ট কোশ্চেন বইয়ের বাইরে থেকেও এসেছে। আমাদের জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষায় ইতিহাস বিষয়ে এত কঠিন প্রশ্নের সম্মুখীন হব আমরা ভাবতে পারিনি।’

যেমন ,১. প্রশ্নপত্রে ১.১ দাগে রাচেল কারসন নামক এক ব্যক্তির উল্লেখ আছে। উত্তর হবে- (গ) পরিবেশের ইতিহাসে। মধ্যশিক্ষা পর্ষদের পাঠ্যক্রম বলছে- আধুনিক ইতিহাস চর্চার বৈচিত্র‍্য। এখানে প্রায় লক্ষাধিক ব্যক্তির নাম আসবে যারা আধুনিক ইতিহাস চর্চার সাথে যুক্ত। সেক্ষেত্রে মাধ্যমিক স্তরে ছাত্রছাত্রীদের কিভাবে ব্যক্তি নাম অনুযায়ী ইতিহাস চর্চার বৈচিত্র‍্য মনে রেখে উত্তর লেখা সম্ভব। ২. প্রশ্ন ১.২ বঙ্কিমচন্দ্র ‘বঙ্গদর্শন’ পত্রিকার সম্পাদনা কত বছর করেছিলেন।

এক্ষেত্রে পর্ষদ পাঠ্যক্রমে বলছেন- আধুনিক ভারতের ইতিহাস চর্চার উপাদান ব্যবহারের পদ্ধতি (ঘ. সাময়িক পত্র ও সংবাদ পত্র- সোমপ্রকাশ ও বঙ্গদর্শন) উপদান ব্যবহারের পদ্ধতি বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা। এখানে ছাত্রছাত্রীরা কিভাবে বুঝতে পারবে এই দুটি বা পাঠ্যক্রমে অন্যান্য যে সকল পত্রিকা রয়েছে তার সকল সম্পাদকের কার্যকালের মেয়াদ কত।

এক্ষেত্রে সংবিধানের ধারার মতো সম্পাদকের কার্যকালের তো সুনির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা নেই। তাহলে এত জন সম্পাদকের কার্যকালের মেয়াদ ছাত্রছাত্রীরা কিভাবে মনে রেখে পরীক্ষায় উত্তর দেবে।

৩. গত বছরের ন্যায় প্রশ্নকর্তা এবছরেও মধ্যশিক্ষা পর্ষদের পাঠ্যক্রম কে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে প্রশ্নপত্রে (১.৮) ‘মহাবিদ্রোহ’ তকমা ১৮৫৭ খ্রিঃ বিদ্রোহকে ( যা পর্ষদ পাঠ্যক্রমে উল্লেখিত) দিয়েছেন। এক্ষেত্রে প্রশ্নে ভাষাগত বিভ্রান্তি রয়েছে। ঠিক একই যুক্তি ২.৪.১ মানচিত্রে স্থান চিহ্নিত কারণ এর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

৪. পশ্চিমবঙ্গে যোগদানের পূর্বে পুরুলিয়া কিভাবে পুরুলিয়া জেলা ছিলো?  মধ্যশিক্ষা পর্ষদের পাঠ্যক্রম বলছে- ৮.১ দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তির উদ্যোগ ও বিতর্ক।

৮.৩ ভাষার ভিত্তিতে রাজ্য পুনঃগঠনের উদ্যোগ ও বিতর্ক। সেক্ষেত্রে ‘পুরুলিয়া জেলা’ শব্দবন্ধ ব্যবহার কতটা যুক্তিপূর্ণ। ৫. পর্ষদের পাঠ্যক্রম অনুযায়ী প্রতিটি অধ্যায় থেকে মান ২ এর দুটো করে প্রশ্ন থাকবে। ৩.১ দাগের প্রশ্নটি সেক্ষেত্রে ষষ্ঠ ও সপ্তম অধ্যায়কে কেন্দ্র করে করা হয়েছে।

তাহলে প্রথম অধ্যায় থেকে মান ২ এর দুটি প্রশ্ন কোথায়? ৬. একই প্রশ্ন বারংবার – ছাপাখানা থেকে ৩.১০ দাগে মান ২, ৪.৫ দাগে মান ৪, ৫.২ দাগে মান ৮ এ পড়েছে। একই ভাবে ৩.১৬, ৪.৭ একই প্রশ্ন রাজ্য পুনঃগঠন কমিশন ও ভাষার ভিত্তিতে রাজ্য পুনঃগঠনের প্রচেষ্টা। একই জায়গা থেকে বারবার প্রশ্ন আশায় ইতিহাস বিষয়ে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে বলে পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্র ফেরত সমীক্ষা বলছে।

মজার বিষয় হলো, ভারতের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস যা পাঠ্যক্রমের ষষ্ঠ ও সপ্তম অধ্যায় জুড়ে চারটি আন্দোলনের গতিপ্রকৃতির মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের কাছে উপস্থাপন করা হয়েছিল। সেখান থেকে তথাকথিত অর্থে ‘কমন’ প্রশ্নের দেখা পাচ্ছি না। এটা ভারতবর্ষের সুমহান স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসকে কি ভুলিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। ৭. বিভাগ ঙ – ৫.১, ৫.৩ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের পাঠ্যক্রম অনুযায়ী প্রশ্ন হয়েছে ঠিকই। কিন্তু মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা সমালোচনামূলক মানসিকতা থেকে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে কি সত্যি সক্ষম হবে।

অন্যদিকে বৃহস্পতিবার ছিল মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের অংকের পরীক্ষা। পরীক্ষার্থীদের অভিযোগ, অংকের পরীক্ষায় তাদের গ্রাফ পেপার দেওয়া হয়নি। জানা গ্রাফ কিভাবে হবে? কিভাবে অংক পরীক্ষায় নাম্বার তোলা যাবে। পরীক্ষার শেষে ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের স্কুলের শিক্ষকদের পেয়ে তাদের একরাশ ক্ষোভ উগরে দেয়।

যদিও মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি রামানুজ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, পরীক্ষার্থীরা যদি খাতায় সঠিক উত্তর লেখে তাহলে সে গ্রাফ আঁকলেও নম্বর পাবে না আঁকলেও নম্বর পাবে।