শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

দরিদ্র মানুষের দ্বারে দ্বারে নিঃশব্দে ত্রাণ পৌঁছে দিলেন সমাজকর্মী প্রতিবন্ধী যুবক

News Sundarban.com :
মে ১২, ২০২০
news-image

সুভাষ চন্দ্র দাশ,ক্যানিং –

নাম কাজল শীল। পরিবারে তাঁর দ্বিতীয় আর কেউ নেই। একাই থাকেন বাড়িতে। পরিচারিকার কাজ করে দিন চলতো। বর্তমানে করোনার দাপটে কাজ হারিয়ে বাড়িতে রয়েছেন।বাড়িতে কোন খাদ্য সামগ্রী না থাকায় গত দুদিন অনাহারে রয়েছেন।এছাড়াও অভাবের তাড়নায় মাঝে মাঝে শুধু শাক সিদ্ধ করে খেয়ে কোন রকমে প্রাণে বেঁচে রয়েছেন।সোমবার বিকালে ঘুম থেকে উঠে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে দেখতে পায় একটি প্যাকেট রাখা আছে।কোন লোকজন নেই।ভয় ভয় করে প্যাকেট টি নিয়ে বাড়ির মধ্যে চলে যায় কাজল দেবী। প্যাকেট খুলতেই চক্ষু চড়ক গাছ!কি নেই প্যাকেটে!প্যাকেটে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ চাল,ডাল,আলু,সোয়াবিন।খুশিতে মন ভরে যায় কাজল শীলের।গত প্রায় দুইদিন অনাহারে থাকায় তড়িঘড়ি রান্না করতে থাকেন।পাশাপাশি চিন্তা করতে থাকেন এমন সংকটময় মুহূর্তে কে দিয়ে গেল এমন ত্রাণ সামগ্রী?যদিও কোন উত্তর নেই।একই ভাবে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে দরজার সামনে বাইরে খাদ্য সামগ্রী ভর্তি প্যাকেট পেয়ে আশ্চর্য হয়ে গিয়েছেন শম্পা,পূর্ণিমা,দিপালীদের মতো ক্যানিং ১ ব্লকের অসহায় দরিদ্র গৃহবধুরা।

কে দিয়ে গেলো এমন ত্রাণ?এমন খবর চাউর হতেই খোঁজ শুরু হয় এলাকায়।
জানা যায় করোনা আর লকডাউনের জেরে অসহায় দরিদ্র মানুষের দ্বারে দ্বারে এমন খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দিয়েছিলেন প্রতিবন্ধী এক যুবক ও তার কয়েকজন বন্ধুবান্ধব।
জীবনতলা থানার মঠেরদিঘীর এলাকার “মঠেরদিঘী পল্লি সেবাসদন” নামক একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রয়েছে। এই সংগঠনেরই কর্মকর্তা খোকন মন্ডল।তিনি শারীরিক ভাবে অক্ষম।কোন রকমে দুটি ক্রাচে ভর দিয়ে যাতায়াত করেন।করোনা আর লকডাউনের শুরু থেকেই বিভিন্ন জায়গায় উপস্থিত হয়ে দরিদ্র মানুষ কে ত্রাণ সামগ্রী দিয়ে সাহায্য করে আসছেন।সোমবার বিকালে খোকন মন্ডল ও তাঁর দুই সহযোগী বন্ধু সঞ্জীব মন্ডল ও তাপস দাস ক্যানিংয়ের কোড়াকাঠি,দুমকি,সাতমূখী এলাকায় হাজীর হয়ে প্রায় ৫০ টি অসহায় দরিদ্র পরিবারের বাড়ির দরজার সামনে পর্যাপ্ত পরিমাণ চাল,ডাল,আলু, সোয়াবিনের প্যাকেট রেখেদিয়ে চলে আসেন নিঃশব্দে।
সংকটময় মুহূর্তে রাড়ির দরজার সামনে আচমকা এমন ত্রাণ পেয়ে খুশি দরিদ্র অসহায় পরিবার গুলি।
কেন এমন নিঃশব্দে ত্রাণ বিতরণ জানতে চাওয়া হলে খোকন মন্ডল সপাটে জবাব দেন “বর্তমানে মানুষ পরিস্থিতির স্বীকার। সামান্য ত্রাণ দিয়ে ছবি তোলা কেমন যেন বেমান লাগে । তাই সকলের অগোচরে এমন ত্রাণ বিতরণ করার চেষ্টা করেছি।”