মঙ্গলবার, ১৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

হ্যাম রেডিও এর প্রচেষ্টায় বাড়ি ফিরছেন ভেমুলা

News Sundarban.com :
ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২৩
news-image

নিজস্ব প্রতিনিধি, গঙ্গাসাগর: তীর্থস্থান গঙ্গাসাগর অর্থাৎ বাবা কপিলমুনির মন্দির। প্রতি বছরই পৌষ সংক্রান্তির দিন পূর্ণ অর্জনের উদ্দেশ্যে ভক্তরা ডুবদেন গঙ্গাসাগরে। লাখো মানুষের সমাগমে দ্বীপভূমি হয়ে উঠে এক মহামিলনতীর্থ।

“সব তীর্থ বারবার, গঙ্গাসাগর একবার।” মেলা শেষ হয় কালের নিয়মে। পূর্ণ অর্জন করে পুন্যার্থীরা ফেরেন তাঁদের আপন ডেরায়। অনেকে আবার সাথীহারা হয়ে কিংবা প্রিয়জনদের অবহেলায় রয়ে যান এই গঙ্গাসাগরে। দিশেহারা হয়ে পড়ে সেই সব অসহায় পুণ্যার্থী । তাঁদেরকে বাড়ি ফেরাতে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কোমর বেঁধে নেমেছে ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিও ক্লাব বা হ্যাম রেডিও। হ্যাম রেডিওর উদ্যোগে ইতিমধ্যেই বাড়ি ফিরেছেন অনেকই। আর আজ ফিরছেন এক মূখ ও বধির মানুষ। বাড়ি অন্ধ্রপ্রদেশের খাম্মাম জেলার বেলেপল্লী গ্রামে। নাম ভেমুলা ভেঙ্কটস্বামী (৫৯)। প্রিয়জনকে হারিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েছিলেন তিনি। তেমন ভাবে কথা না বলতে পারায় শুধুই কাঁদছিলেন। বিষয়টি প্রথমে যোগীরাজ শ্যামাচরণ সনাতন মিশনের এক আবাসিকের নজরে আসে। এর পরে তার থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেন। যোগাযোগ করেন ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিও ক্লাব হ্যাম রেডিওর সদস্য দিবস মণ্ডল-এর সঙ্গে।

খবর দেন কাকদ্বীপ থানাতেও। আশ্রমের আবাসিকরা জানান, আপনারাই এনার ত্রাতা। একজন মানুষ যিনি কথা বলতে পারেন না লিখতে পারেন না ইঙ্গিতে হয়ত কিছু বলছেন। আর আবেগে কেঁদে ফেলছেন প্রায়ই। এমন মানুষের বাড়ি খুঁজে বের করা কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায় আমাদের কাছে। মানুষটির কাছে দীর্ঘক্ষণ থেকে কিছু বোঝার চেষ্টা করেন হ্যাম রেডিও-র সদস্য পেশায় শিক্ষক দিবস মণ্ডল। সংগ্রহ করা কিছু তথ্য নিয়েই শুরু হয় হ্যামেদের খোঁজ “মিশন গঙ্গাসাগর”। বিষয়টাকে অতিরিক্ত গুরুত্ব দিয়ে কয়েকদিনের চেষ্টায় হ্যাম রেডিওর নিজস্ব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে মেলে তার বড় ছেলে ভেমুলা রামবাবু। এখানেও দেখাদেয় এক নতুন সমস্যা ভাষার। ছেলে তেলেগু ছাড়া অন্য কিছুই জানে না। আবারও অন্ধ্রপ্রদেশের হ্যাম সদস্যদের সহায়তায় আমরা তাকে বোঝাতে সক্ষম হই।

জানা যায় গ্রামের কিছু মানুষের সঙ্গে গঙ্গাসাগরে এসে সাথীহারা হন তিনি। দুই ছেলে-বৌমা নাতি-নাতনিদের নিয়ে তাঁর সংসার। ছেলে নাতি নাতনিদের ছবি দেখে কান্নায় আবেগে ভেঙে পড়েন বৃদ্ধ । আর আশ্রমের আবাসিকরা অবাক হয়ে দেখলেন সেই দৃশ্য ।

সুন্দরবন পুলিশ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হেডকোয়ার্টার ইন্দ্রবদন ঝাঁ IPS, কাকদ্বীপ মহকুমাশাসক অরণ্য বন্দ্যোপাধ্যায়, আই, সি কাকদ্বীপ থানা শিবু ঘোষ ও হ্যাম রেডিও-র সদস্য দিবস মণ্ডল এর উপস্থিততে সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে ছেলের সঙ্গে রওনা দিলেন বাড়ির ঠিকানায়।