মঙ্গলবার, ১৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বর্ষার আকাল দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে, কিভাবে হবে ধান চাষ চিন্তায় চাষীরা 

News Sundarban.com :
জুন ৩০, ২০২২
news-image

ঝোটন রয়, সুন্দরবন: উত্তরবঙ্গের প্রবল বর্ষা হলেও দক্ষিণবঙ্গে চলছে খরাপ্রবণ। মাঝে মাঝে উড়ো বৃষ্টি হলেও মন ভরছে না চাষীদের। ফলে বর্ষার অভাবে মার খাচ্ছে দক্ষিণবঙ্গের চাষিরা। বর্ষার আকাল পড়েছে সমগ্র দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে। কিভাবে হবে ধান চাষ। সময়মতো বর্ষা না হলে ফসল ফলাবে বা কিভাবে। বর্ষা নিয়ে চাষিরা আছেন চিন্তাতে।

অনেক চাষী লাঙ্গল করে ধান ফেলার জন্যই উপযুক্ত তলা তৈরি করে ফেলেছেন। মেঘ দেখা গেলেও কিন্তু বৃষ্টির দেখা নেই। আবার কিছু কিছু চাষীর আকাশে মেঘ দেখে কাঁখড়ি তলার জন্যই জমিতে ধান ঘুনে দিয়েছেন। কিন্তু বৃষ্টি নাই প্রবল সূর্যের তাপে সেই ধানের ছোট ছোট অঙ্কুর নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে অনেক চাষীকে পুনরায় বাজার থেকে ধানের বীজ কিনতে হচ্ছে।

প্রাকৃতিক রোসাতলে পড়েছে সুন্দরবনের মানুষ। প্রতিবছর কোনো না কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয় সুন্দরবনের পিছু ছাড়ছে না। আইলা থেকে শুরু করে আম্ফান, বুলবুল, ফনি, ঝড়ের মতো সুপার সাইক্লোন গুলো সুন্দরবনের 60 শতাংশ এলাকা নোনা জলে প্লাবিত হয়েছিল। তার রেশ এখনো কাটেনি বললেই চলে। ফলে নোনা জলের লবণাক্ত ভাব জমিনের মাটির অনেকটা লেয়ার ভেদ করেছে। যার দরুন এই নোনা প্রবল এলাকায় কোন কোন ধান চাষ করা যেতে পারে সে নিয়েও দিশাহীন হয়ে পড়েছে চাষিরা।

এই প্রসঙ্গে টালিগঞ্জ সিট সার্টিফিকেশনের এক আধিকারিক সুকান্ত দাশগুপ্ত বলেন, নোনা প্রবল এরিয়ায় গোসাবা 5, গোসাবা 6, লুনা সম্পদ, লুনা সুবর্ণ, লুনি শ্রী, সিআর ধান 403, সিএসআর 36, সিএসআর 43, এর মত উন্নতশীল ধানের চাষ চাষীরা করতে পারেন।

কাকদ্বীপের এক প্রবীণ চাষী বলেন, এবছর আমি দুধেশ্বর, লূনা স্বর্ন, মালি ৪ এর মতো ধান চাষ করব।

অন্যদিকে নামখানা ব্লকের একজন ধান বীজ ব্যবসায়ী ধর্মাদেব পাত্র বলেন, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে সুন্দরবন এলাকায় নদীর নোনা জল মাটির অনেক গভীরে চলে যাওয়ার সুন্দরবনের চাষীরা আশানুরূপ ধান চাষ করতে পারছেন না। কারণ, নোনা প্রবল এরিয়াতে যে ধান চাষ করে অধিক ফলন হতে পারে সেই ধান চাষিরা চাষ করছেন। কিন্তু বাজারে প্রতীক্ষা, সবিতার মতো অধিক ফলনশীল ধান এর চাহিদা খুবই কম রয়েছে।

এই প্রসঙ্গে নোনা জল বিশেষজ্ঞ ডক্টর ধীমান বর্মন বলেন, এই সময়টা বীজতলা ফেলার সময়। কিন্তু সময়ে বৃষ্টি হচ্ছে না। এদিকে প্রচন্ড রৌদ্র তাপে জমিনে নোনার ভাবটাও রয়েছে। আমি সুন্দরবনের চাষীদের উদ্দেশ্যে বলবো, বর্ষা হলে জমির নোনা ভাবটা ধুয়ে যাবে। এই সময় কিন্তু ভালো জল দিয়ে বীজতলা করতে হবে। এই বীজতলার জন্যই দুটি দিক খুবই সেনসিটিভ রয়েছে। প্রথমত: বীজতলা অর্থাৎ একদম চারা অবস্থায় জমিতে নোনা জল বা নোনা ভাব যেন না থাকে সে দিকটা লক্ষ করতে হবে। দ্বিতীয়ত: ফুল আসছে এমন সময় যাতে কোনো ধানের অসুবিধা না হয়। বাজারে নোনা সহনশীল ধান বীজ পাওয়া যায় ঠিকই কিন্তু অন্যান্য ধান চাষ করতে হলে বীজতলাটা ঠিকঠাক ভাবে তৈরি করতে হবে।

নামখানা ব্লকের এক চাষী সুনির্মল পন্ডিত বলেন, বীজ ফেলে দিয়েছি। কিন্তু বৃষ্টির দেখা নেই। জমিতে জল দেওয়ার জন্যই অনেক দূর থেকে পাইপ দিয়ে নিয়ে আসতে হচ্ছে জল। এদিকে প্রচন্ড রোদ্দুর জানিনা এই বীজতলা কি হবে।

আগের মত এখন দো-ফসলি ধান চাষ হয় না বললেই চলে। খোরাটি চাষ করতে গেলে চাষীদের পর্যাপ্ত জলের যোগান দরকার। কিন্তু ওই খোরাটি ফসলের জন্য জলের সংকট এর ফলে ওই চাষ একেবারেই উঠে গেছে বললেই হয়। ক্যানিংয়ের এক চাষী বাদল ওঝা বলেন, আমি বিগত ছয় বছর আগে খরাটি ফসলের ধান ফলাতাম। ৮ থেকে ১০ বিঘা জমি নেই খরাটি চাষ করতাম। কিন্তু দীর্ঘ ৪-৫ বছর হল আর সেই চাষ করছি না। বর্ষাকালে নদীর বাঁধ ভেঙ্গে আমাদের এলাকায় নোনা জল চলে আসে । ফলে সেই নোনা ভাব খরাটি চাষের সময় আমরা দেখেছি জমির মাটিতে নুন ফুটে যেত। একবার নোনা জল ঢোকার পর খরাটি চাষ করেছিলাম। কিন্তু তাতে কোন ধান তো পায়নি বরং অনেকটাই ক্ষতি হয়ে গিয়েছিল। সেই থেকে আমি বর্ষাটি ধানের চাষ করি।