শনিবার, ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

হ্যালো আমার প্রিয় পরিবারের ইউটিউবার অমিত মন্ডল আজ অনেক দূরে

News Sundarban.com :
ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৩
news-image

ঝোটন রয়
….……………………

“তুমি রবে নীরবে হৃদয়ে মম”

তুমি চলে গেছো তারাদের দেশে। কিন্তু রেখে গেছো তোমার অনেক স্মৃতি। যে স্মৃতিগুলো লাখ লাখো মানুষ আঁকড়ে ধরে থাকবে। তোমার সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিলই। তোমার সঙ্গে দেখা করতে বাড়িতেও গিয়েছি। একসাথে বসে হয়েছে অনেক কথা, অনেক পরামর্শ, অনেক আলোচনা। তুমি চলে গেছো। তবুও সেই আলোচনাগুলো আমার বারবার মনে পড়ে।

২২ বছরের তরতাজা যুবক অমিত মন্ডল। নামখানা ব্লকের পরমেশ্বর মহাবিদ্যালয় এর প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলেন। ছোটবেলা থেকে অঙ্গ পতঙ্গের অসুবিধার কারণে হাঁটতে পারতেন না। ভালো লাগা ছিল অনেক কিছু। পড়াশোনার বই ছাড়াও ভালো ভালো লেখক এর বই পড়ার নেশা ছিল বেশ। সবার সাথে হেসে কথা বলতেন। সৎ ভাব বজায় রেখে জীবন চালিয়েছেন বাইশটা বছর। বাবাও ছিলেন পঙ্গু। তিন জনের পরিবারের মা কেবলই চলাফেরা করতে পারতেন। গ্রামে বাস করেও সবকিছু কাজেই পারদর্শী ছিলেন মা। সংসার সামলানো থেকে শুরু করে পঞ্চায়েতের মাধ্যমে নামখানা ব্লকের জেটিঘাট বাজার ও দশ মাইল বাজার ঝাঁট দেওয়া মা সবই করতেন নিজের হাতে। প্রতিবন্ধী ট্রাই সাইকেলে করে স্বামীকে নিয়ে আসতেন দুটি বাজারে।

প্রতিবন্ধী ট্রাই সাইকেলের  উপরে বসিয়ে বেশ কয়েক কিলোমিটার পথ হাঁটতে হাঁটতে বাজারে আসতেন। হাঁটাই ছিল অমিতের মায়ের নিত্যদিনের একটা কর্ম। যতই কষ্ট হোক না কেন স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে কাঠফাটা রোদ কিংবা বর্ষায় হাজির হতেন বাজারে। বাজার হয়ে যাওয়ার পর যত জঞ্জাল সব নিজের হাতে সাফ  করতেন অমিতের মা। বাবা যে সাহায্য করতেন না সেটা নয় বাবা যেটুকু পারতেন সেটাই করতেন।  “এই জায়গাটা একটু ভালো করে পরিষ্কার করে দে।” অমিতের বাবা চোখে তেমন একটা ভালো দেখতে পায় না। যতদূর চোখ যায় ততটুকুই যেন কোনো নোংরা না পড়ে থাকে।

বেলা বয়ে যায় বাজার পরিষ্কার করে দুজনেই আবার সেই পায়ে হেঁটে বাড়িতে আসতেন। কত কষ্টের জীবন ছিল তিন জনের। তবুও বাড়িতে এলে ছেলেই ছিল সব কষ্টের সান্তনা। কিন্তু সেই ছেলে আজ তাদের মধ্যে নেই। দুটি বাজারে সপ্তাহে দুদিন বাজার বসে। যে বাজারে হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটে। কয়েকটা ঘন্টার মধ্যে শাকসবজি থেকে শুরু করে সাংসারিক জিনিসপত্র সবই কেনাবেচা হত বাজারে। শহরের মতো প্রত্যেকদিন বাজার না বসলেও সপ্তাহে দুদিন করে বাজার বসে। বাজার শেষ হওয়ার পর তার পরের দিন সেই একই কাজ বাজার পরিষ্কার করা। দিনের শেষে বাজারে প্রতি দোকান থেকে আসে মাত্র দু টাকা।

এইভাবে কোনরকম দিন চলছিল। এই টাকার উপরে নির্ভর করত সংসার থেকে শুরু করে নিজেদের অসুখ বেসুখ, ছেলের পড়াশোনা। অমিতের একটুও বুঝতে অসুবিধা হয়নি যে বাবা মায়ের এই জীবন যন্ত্রণা কতটা কষ্টের। তাই কোনো রকমের একটা এন্ড্রয়েড ফোন কিনে দিয়েছিল তার বাবা-মা। আর সেই ফোন দিয়ে ভালো লাগার মধ্যে ছোট ছোট ভিডিও বানাতে শুরু করলো। সারাদিনে সে কি করে। তার বাবা-মা কিভাবে জীবন যাপন করে। সবই উল্লেখ করতেন তার ভিডিওর মধ্যে। দিনের পর দিন ছোট ছোট করে ভিডিও বানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ার মানুষদেরকে আনন্দ দিত। বাড়তে থাকলো সাবস্ক্রাইবের সংখ্যা।  আস্তে আস্তে করে মানুষের ভালোবাসা পেতে থাকল। কলিকাতার তাবড় তাবড় ইউটিউবার দের সঙ্গে যোগাযোগ হতে থাকলো। তাদের কাছেও ভালো লাগার পাত্র হয়ে উঠলো অমিত মন্ডল। আস্তে আস্তে করে তার ভিডিওর জনপ্রিয়তা পেতে লাগলো। হয়ে উঠল একজন ইউটিউবার।

যেখানে তার সাবস্ক্রাইব ছিল প্রায় সাড়ে তিন লক্ষের বেশি। একটা ভিডিও পোস্ট করা মানে নিমেষের মধ্যেই বেশ কয়েক লক্ষ ভিউ হয়ে যেত। দর্শক আনন্দ পেত। হাজার হাজার মানুষের ভালোবাসায় ভরে যেত কমেন্টের বাক্স। একজন সম্পূর্ণ সুস্থ সবল মানুষ না হয়েও একজন পঙ্গু যুবক দিনের পর দিন ভিডিও বানিয়ে নেট দুনিয়ায় তাক লাগিয়ে দিচ্ছে। এটাই তাঁর কাছে ছিল একটা বড় চ্যালেঞ্জ।

-পরবর্তী অংশ আগামী সোমবার