দ্লিত্দের ডাকা বন্ধে উত্তাল চেহারা নিল উত্তর ও মধ্য ভারত
দলিতদের ডাকা ভারত বনধের জেরে কোথাও বন্ধ হয়ে গেল সিবিএসই-র পরীক্ষা, কোথাও সংঘর্ষে প্রাণ হারালেন মানুষ, কোথাও রেল-সড়ক অবরোধের জেরে নাস্তানাবুদ হতে হল হাজার হাজার মানুষকে ৷ এখনও অবধি ৯ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে ৷ ১৭০০ অ্যান্টি রায়ট পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে ৷ তফশিলি জাতি-উপজাতি সংরক্ষণ আইন শিথিল করার প্রতিবাদে সোমবার সকাল থেকেই অগ্নিগর্ভ চেহারা নিল উত্তর ও মধ্য ভারত ৷
গত ২০ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল, সরকারি কর্মীদের বিরুদ্ধে তফশিলি জাতি ও উপজাতিদের উপর অত্যাচার বন্ধের আইনের যথেচ্ছ অপব্যবহার করা হচ্ছে। তাই এখন থেকে আর নিয়োগ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া এই আইনে কোনও সরকারি কর্মীকে গ্রেফতার করা যাবে না। তফশিলি জাতি–উপজাতির উপর অত্যাচারের কোনও মামলা দায়ের করার আগে সেই ঘটনা ডিএসপি পর্যায়ের কোনও আধিকারিককে দিয়ে তদন্ত করাতে হবে। এছাড়া এই ঘটনায় অভিযুক্ত কোনও সরকারি আধিকারিককে গ্রেপ্তারের আগে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে। শীর্ষ আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধেই ২ এপ্রিল ভারত বনধের ডাক দিয়েছিল পিস্যান্টস অ্যান্ড ওয়ার্কার্স পার্টি, ভারিপ বহুজন মহাসঙ্ঘ, সিটু, জাতি অন্ত সংঘর্ষ সমিতি, রাষ্ট্রীয় সেবা দল, ন্যাশনাল দলিত মুভমেন্ট ফর জাস্টিস সহ বিভিন্ন সংগঠন। সেই বনধকে পরে সমর্থন জানায় অল ইন্ডিয়া আদি ধর্ম মিশন এবং অল ইন্ডিয়া আদি ধর্ম সমাজ ৷
এই বনধকে সফল করতে সোমবার সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পথে নামে দলিত সমাজ ৷ বিহার ওড়িশাতেও রেল অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখানোর খবর এসেছে ৷ বিক্ষোভের জেরে গাজিয়াবাদের কাছাকাছি আটকে পড়েছে বহু ট্রেন ৷ দেরাদুন এক্সপ্রেস, রাঁচি রাজধানী এক্সপ্রেস, উৎকল এক্সপ্রেস, সপ্তক্রান্তি এক্সপ্রেস, কানপুর শতাব্দী এক্সপ্রেসসহ একাধিক ট্রেন দাঁড়িয়ে রয়েছে ৷ রাজস্থানের জয়পুর, বারমের, দিল্লির মান্ডি হাউস, উত্তরপ্রদেশের মেরঠ, মধ্যপ্রদেশের বিভিন্ন জায়গায় শুরু হয় বিক্ষোভ। বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের বচসা, ধস্তাধস্তি হয়। বারমেরে বেশ কয়েকটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন বিক্ষোভকারীরা। মেরঠে কয়েকটি গাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়। বিহারের পটনা সহ আশেপাশের বিভিন্ন জায়গায় টায়ার জ্বালিয়ে পথ অবরোধ করেন ভীম আর্মির সদস্যরা। তাঁরা জোর করে বহু দোকানও বন্ধ করে দেন।গোলমালের আশঙ্কায় পাঞ্জাবে সিবিএসই-র দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ৷ আজ পঞ্জাবের সমস্ত স্কুল-কলেজ, ব্যঙ্ক এবং যানবাহন পরিষেবা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ৷ রাত ১১টা পর্যন্ত বন্ধ থাকবে ইন্টারনেট পরিষেবাও ৷ পঞ্জাবে গোলমাল বাড়ার আশঙ্কায় সেনাবাহিনীকেও তৈরি রাখা হয়েছে। পঞ্জাবের ফিরোজপুরে খোলা তলোয়ার নিয়ে মিছিল করছেন দলিতরা ৷ মধ্যপ্রদেশের গোয়ালিওরে বিক্ষোভ চলাকালীন প্রকাশ্যেই চলেছে গুলিবর্ষণ ৷ গোয়ালিয়র ও মোরেনায় চার জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে ৷ আহত বহু ৷ এদের মধ্যে অনেকেরই অবস্থা আশঙ্কাজনক ৷ এলাকায় জারি হয়েছে ১৪৪ ধারা ৷ নামানো হয়েছে আধা সেনাও ৷ রাজধানীতেও আছড়ে পড়েছে দলিত আন্দোলনের ঢেউ ৷ দিল্লির কনাট প্লেসে বিক্ষোভ অবরোধ চলছে ৷ বিক্ষোভ মিছিল বেরিয়েছে লখনউয়ের হজরতগঞ্জে ৷ উত্তরপ্রদেশ, ওড়িশা, বিহারের একাধিক জায়গায় গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে ৷ উত্তরপ্রদেশের হাপুর, মেরঠ, গাজিয়াবাদ, আগ্রা, আজমগড়ে নামানো হয়েছে আধা সেনা ৷