শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

রোহিঙ্গাদের রক্ষায় জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান শেখ হাসিনার

News Sundarban.com :
সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৭
news-image

মিয়ানমারে নির্যাতনের শিকার বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সমস্যার স্থায়ী সমাধানে দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের জন্য জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সমস্যা সমাধানে তিনি কিছু সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব তুলে ধরেন।

নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় (বাংলাদেশ সময় শুক্রবার ভোরে) জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭২তম অধিবেশনে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী প্রস্তাবগুলো তুলে ধরেন।

ভাষণে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষার পাশাপাশি সব ধরনের সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের অবস্থানের কথাও বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে স্পষ্ট করেন শেখ হাসিনা।

মুসলিম রোহিঙ্গাদের জন্য জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে মিয়ানমারে ‘সেইফ জোন’ গঠনের প্রস্তাব বিশ্ব সংস্থায় তুলেছেন তিনি।

শেখ হাসিনা স্পষ্ট ভাষায় বলেন, ‘আমরা যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই। আমরা অর্থনৈতিক উন্নতি চাই, মানব ধ্বংস নয়, মানব কল্যাণ চাই।’

রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচনার মধ্যে জাতিসংঘের অধিবেশনে আট লাখ শরণার্থীর আশ্রয়দাতা দেশ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা ছিলেন সবার মনোযোগের কেন্দ্রে।

রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ৫ দফা প্রস্তাব হলো:
এক, কোনও শর্ত আরোপ ছাড়াই অবিলম্বে রোহিঙ্গাদের ওপর সব ধরনের সহিংসতা ও জাতিগত নিধন স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে হবে;
দুই, অনতিবিলম্বে মিয়ানমারে জাতিসংঘের মহাসচিবের নিজস্ব একটি অনুসন্ধানী দল প্রেরণ করা;
তিন, জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সব সাধারণ নাগরিকের নিরাপত্তা বিধান এবং এ লক্ষ্যে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সুরক্ষা বলয় (safe zones) গড়ে তোলা;
চার, রাখাইন রাজ্য হতে জোরপূর্বক বিতাড়িত সকল রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে তাদের নিজ ঘরবাড়িতে প্রত্যাবর্তন ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করা;
পাঁচ, কফি আনান কমিশনের সুপারিশমালার নিঃশর্ত, পূর্ণ এবং দ্রুত বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা।

সাধারণ পরিষদ অধিবেশনে চতুর্দশবারের উপস্থিত হওয়ার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার হৃদয় আজ দুঃখে ভারাক্রান্ত। কেননা আমার চোখে বারবার ভেসে উঠছে ক্ষুধার্ত, ভীত-সন্ত্রস্ত এবং নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের মুখচ্ছবি। আমি মাত্র কয়েক দিন আগেই আমার দেশে আশ্রয় নেওয়া কয়েক লাখ রোহিঙ্গার সঙ্গে দেখা করে এসেছি। যারা ‘জাতিগত নিধনে’র শিকার হয়ে নিজ দেশ থেকে জোরপূর্বক বিতাড়িত। অথচ তারা হাজার বছরেরও অধিক সময় মিয়ানমারে বাস করে আসছেন। এদের দুঃখ-দুর্দশা আমি গভীরভাবে অনুধাবন করতে পারি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট আমার বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করার পর আমার ছোট বোনকে নিয়ে ছয় বছর উদ্বাস্তু জীবন কাটিয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশের হয়ে প্রথমবারের মতো এখানে ভাষণ দেওয়ার সময় এ মঞ্চে দাঁড়িয়ে আমার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শান্তি ও ন্যায়বিচারের পক্ষে তার অঙ্গীকারের কথা বলে গেছেন। সেই ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘এমন এক বিশ্বব্যবস্থা গঠনে বাঙালি জাতি উৎসর্গীকৃত, যে ব্যবস্থায় সব মানুষের শান্তি ও ন্যায়বিচার লাভের আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হবে। এবং আমি জানি আমাদের এ প্রতিজ্ঞা গ্রহণের মধ্যে আমাদের লাখ লাখ শহীদের বিদেহী আত্মার স্মৃতি নিহিত রয়েছে।’

১৯৭১ সালের পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যার ঘটনা তুলে ধরে ২৫ মার্চকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনে বাংলাদেশের পদক্ষেপ জাতিসংঘে জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের কোথাও যাতে কখনই আর এ ধরনের জঘন্য অপরাধ সংঘটিত না হয়, সেজন্য আমি বিশ্ব সম্প্রদায়কে সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণের আহবান জানাচ্ছি।

মিয়ানমারে চলমান সহিংসতা বন্ধে এবং সেখানে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় উদ্যোগ গ্রহণ করায় নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য রাষ্ট্রগুলো ও জাতিসংঘের মহাসচিবকেও ধন্যবাদ জানান শেখ হাসিনা। উদ্বেগময় পরিস্থিতির বর্ণনা করে তিনি বলেন, এ সব মানুষ যাতে নিরাপদে এবং মর্যাদার সঙ্গে নিজ দেশে ফিরে যেতে পারেন, এখনই তার ব্যবস্থা করতে হবে।