শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১১৫ যাত্রী নিয়ে আপ ক্যানিং লোকালের চাকা গড়ালো

News Sundarban.com :
নভেম্বর ১১, ২০২০
news-image

নিউজ সুন্দরবন ডেস্ক: বুধবার ভোর ৩ টা ৪৫ মিনিট। ষ্টেশনে জ্বলে উঠলো সবুজ সিগন্যালের আলো। ব্যাপক শব্দে বেজে উঠলো ট্রেনের বাঁশী। শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার ক্যানিং ষ্টেশনের ১ নম্বর প্লাটফর্ম থেকে দীর্ঘ প্রায় ৮ মাস পর যাত্রীবাহী লোকাল ট্রেনের চাকা গড়ালো। আর এই প্রথম ট্রেনে ক্যানিং থেকে ১১৫ জন যাত্রী উঠলেন ট্রেনে। গত ২০ মে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের দাপটে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ছিল সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকা।

সুন্দরবনের প্রত্যন্ত সব গ্রাম গুলি থেকে অসহায় মানুষজন ট্রেনে উঠতে পেরে খুবই খুশি। বহু মহিলা কলকাতায় পরিচারিকার কাজ করতে যায়।করোনা ভাইরাস অতি মহামারীতে এবং লকডাউনে তাঁরা কাজ হারিয়েছিলেন। তাই অনেক মহিলা ট্রেনের টিকিট কাটতে পারেনি। লোকাল ট্রেন চালু হওয়ায় তাঁরা ট্রেনে চেপে বেরিয়েছে কাজের সন্ধানে। প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে পাড়ি দিয়েছেন চেনা শহর কলকাতায়।

অন্যদিকে ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতে সচেতনতার বার্তা দিতে সুন্দরবনের বিশিষ্ট সমাজসেবী সমরেশ দোলুই মাস্ক, স্যানিটাইজার, সাবান নিয়ে হাজির ক্যানিং ষ্টেশনে। এই সব অসহায় মানুষের মুখে পরিয়ে দিচ্ছে মাস্ক, হাতে তুলে দিয়েছেন স্যানিটাইজার। এ দিকে বেলা বাড়ার সাথে সাথে টিকিট কাউন্টারে নিত্যযাত্রীদের লম্বা লাইন পড়তে শুরু করে ক্যানিং স্টেশনে। ফলে দীর্ঘ ৮ মাস পর প্রথম লোকাল ট্রেন চলাচলে আশায় বুক বেঁধেছেন সর্বস্তরের সাধারণ মানুষজন।

উল্লেখ্য করোনা তান্ডবে গত ২৩ মার্চ থেকে লোকাল ট্রেন চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে পড়ে।দীর্ঘ ২৩৪ দিন বন্ধ ছিল লোকাল ট্রেন। অবশেষে বুধবার ভোরে ১১৫ জন যাত্রী নিয়ে আপ ক্যানিং লোকাল শিয়ালদহের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। এদিন প্রথম থেকেই সুন্দরবনের প্রবেশদ্বার ক্যানিং ষ্টেশনে স্বাস্থ্যবিধি সুরক্ষার জন্য ছিল ব্যাপক কড়াকড়ি। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন সহ আরপিএফ,জিআরপি পুলিশের সংখ্যা ছিল নজরকাড়া। এদিন সাধারণ যাত্রীরা স্বাস্থ্যবিধি মেনেই টিকিট কাউন্টার থেকে টিকিট কেটেই ট্রেনে চড়ে বসেন। প্রতিটি সচেতন যাত্রীদের মুখে ছিল মাস্ক। সবিতা সরদার,মৃন্ময়ী মন্ডল,অলোকা তরফদার,বিমলা সরদার,অমলা সরদার’রা দীর্ঘ প্রায় সাড়ে সাতমাস পর কলকাতায় পরিচারিকার কাজে ফিরতে পেরে খুশি। তাঁদের দাবী লোকাল ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়া কলকাতায় আর কাজে যাওয়া সম্ভব হয়নি। সংসারের হাল বেহাল হয়ে পড়ে। তারপর আম্ফান তান্ডব চালিয়ে সমস্ত কিছু শেষ করে দিয়েছে। লোকাল ট্রেন চলাচল শুরু হওয়ায় কয়েকদিনের মধ্যে আবারও স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে পারবেন বলে তাঁদের দাবী।”

লোকাল ট্রেন চালু হওয়া আশা বুক বেঁধেছেন স্থানীয় হকার সিকান্দর সাহানী, তারক দাস, বলরাম দেবনাথ, অনিল মন্ডলরা। তাঁদের দাবী করোনা তান্ডবে দীর্ঘদিন ব্যবসা বন্ধ। তার উপর আম্ফনে আমরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি। কখনও অর্ধাহারে কখনওবা অনাহারে দিন কাটাতে হয়ে। ট্রেন চালু হওয়ায় পুরাতন ব্যবসায় ফিরতে পারবো। হাল ফিরবে বেহাল সংসারের।”