শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

প্রত্যন্ত সুন্দরবনে পালিত হল এক ভিন্ন স্বাদের  নারী দিবস

News Sundarban.com :
মার্চ ১০, ২০২০
news-image

 

দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার প্রত্যন্ত সুন্দরবনের পিছিয়েপড়া বাসন্তী ব্লকে এক ভিন্নস্বাদের “আর্ন্তজাতিক নারী দিবস” পালিত হল।রবিবার বিকালে বাসন্তী ব্লকের শিবগঞ্জে নারী আধিকার,নারী স্বাধীনতার দাবীতে প্রত্যন্ত সুন্দরবনের শতাধিক মহিলা স্থানীয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের আশ্রমে মিলিত হন সাথে ছিল পিছিয়েপড়া,বঞ্চিত কিশোরী মেয়েরা।
মুলত তাদের দাবী ছিল নারীপাচার,শিশুপাচার বন্ধ হোক এবং নাবালক নাবালিক বিবাহ রুখছি রুখবো।
রবিবার প্রত্যন্ত সুন্দরবনে অার্ন্তজাতিক নারী দিবস অনুষ্ঠানে উদ্যোক্তা ছিলেন বাসন্তী ব্লকের “চম্পা মহিলা সোসাইটি” ও “বাসন্তী মহিলা কো-অপারেটিভ ক্রেডিট সোসাইটি লিমিটেড।
মহিলারা আগামীতে এগিয়ে যেতে চায়,স্বনির্ভর হতে চায় কিন্তু প্রতি মুহূর্ত কঠিন বাধা ও অন্তরায়।অনবরত চলছে নারী নির্যাতন বধুহত্যা পাশাপাশি ঘরে বাইরে মহিলাদের নানান সমস্যার মাঝে পড়ে জর্জরিত হতে হয়। বিশেষ করে সুন্দরবনের বাসন্তী,গোসাবা ব্লকে হাজার হাজার মায়েদের অগ্রগতির পিছনে লুকিয়ে রয়েছে এক ইতিহাস। পুরুষ হয়েও মহিলা উন্নয়নে ও মহিলাদের ক্ষমতায়নের জন্য দীর্ঘদিন লড়াই করে আসছেন তিনি হলে বাসন্তী হাইস্কুলের শিক্ষক তথা সমাজসেবী অমল নায়েক।
গ্রাম্য এলাকার কাজ করার নিরীখে চোখের সামনে বধুহত্যা,নারী নির্যাতন দেখেছেন।
থেমে থকেনি তার লড়াই।১৯৮১ সালে তাঁর মায়ের মৃত্যু হয়। তাঁর মায়ের মৃত্যুর পর মায়ের নামে গঠন করেন “চম্পা মহিলা সোসাইটি স্বনির্ভর” নামে একটি মহিলা দল । এই স্বনির্ভর দলটি আধিকার ছিনিয়ে নেওয়ার লড়াই শুরু করে। পাশে পেয়ে গেলেন নিলিমা বেরা, সন্ধ্যা রানি দাস, কপাল কুন্দলা লস্কর,
সুনিতা মজুমদার, সঙ্গীতা হালদার, ও তাঁর স্ত্রী মমতা নায়েকদের মতো লড়াকু মহিলাদের। পরবর্তী কালে প্রায় তিন বছর বিরামহীন লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে গঠন করলেন “বাসন্তী মহিলা কো-অপরেটিভ ক্রেডিট সোসাইটি লিমিটেড”।
বর্তমানে প্রায় ১০ হাজার “মা” স্বাবলম্বিতার পথে ,সুন্দরবন তথা জেলা ও রাজ্যের ক্ষেত্রে এই সমবায় ব্যাঙ্ক মহিলাদের অগ্রগতির ক্ষেত্রে এক নজির গড়েছে।
এরপর অমল বাবু ২০০৯ সালে তৈরি করেন “মা চম্পাবতি বালিকা আশ্রম” যেখানে সুন্দরবনের পিছিয়েপড়া মেয়েরা পড়াশোনার সুযোগ পাচ্ছে।
বর্তমানে তিনি সুন্দরবনের মৎস্যজীবী ও মধু সংগ্রহ কারীরা মাছ কাঁকড়া ধরতে গিয়ে ও মধু সংগ্রহ করতে গিয়ে বাঘের আক্রমণে মারা যান, সেই সকল
বিধবা মা ও তাঁদের অর্ধ অনাথ সন্তানদের পাশে দাঁড়িয়ে রাজ্যবাসীর কাছে আওয়াজ তুলেছেন। পাশাপাশি সেভ টাইগার এ্যাফ্যাক্টেড ফ্যামিলি এই ব্যাঘ্র বিধবা মায়েদের স্বাবলম্বী করে তুলেছে।
এদিনের অনুষ্ঠানে কয়েকজন মহিলা নেত্রী বলেন অমল স্যারের মতও মানুষ পেয়ে আমরা এগিয়ে চলতে সক্ষম হয়েছি,আজ মেয়েদের মুখে হাসি ফুটেছে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাসন্তীর বি ডি ও
সৌগত সাহা, সেন্ট টেরিজা স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষিকা জয়তি সাহা কুণ্ডু, প্রাক্তন শিক্ষক প্রভুদান হালদার বিশিষ্টরা।
এদিন অনুষ্ঠানে আশ্রমের মেয়েদের নাচ,গানে অনুষ্ঠান মুখরিত হয়ে ওঠে।এদিনের আর্ন্তজাতিক নারী দিবস অনুষ্ঠান আরও প্রানোজ্জল হয়ে ওঠে যখন সম্মানীয় অতিথীবৃন্দের হাত থেকে বাসন্তী ব্লকের বিভিন্ন বাজারের ফুটপাথে বসে সবজী বিক্রি করে দীন যাপন করেন এমন ৫ জন বিধবা মায়েদের কে আর্থিক সাহায্য করায়।এছাড়াও শিবগঞ্জ বাজারের ফুটপাথের বেশ কয়েকজন মহিলা সবজী বিক্রেতা এবং সুন্দরবনের ব্যাঘ্র বিধবা মায়েদের ও তাদের কন্যা সন্তানদের শাড়ি বেডসিট,মসারি এবং ব্যবসার জন্য আর্থিক সহায়তা করেন এবং শিক্ষা সরঞ্জাম দিয়ে সম্মানিত করা হয়।সবজী বিক্রেতা সবিতা সরদার,নেচারুন সরদার,ব্যাঘ্র বিধবা মা অপর্না,শিবানী,গীতা সরদার’রা বলেন “আমরা প্রতি মুহূর্তে জীবন সংগ্রামে লড়াই করে চলেছ।আর্ন্তজাতিক নারী দিবস এ সম্মানিত হতে পেরে ভীষণ খুশি। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি একজন পুরুষ হয়েও অমল স্যার যেভাবে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে তার কোন তুলনা হয় না। আমরা তাঁর জন্য আজ জীবন সংগ্রামের লড়াইয়ে এগিয়ে গিয়ে বেঁচে থাকার স্বাদ পেয়ে আনন্দিত।