মঙ্গলবার, ১৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিশুর নাকে আস্ত পাথর, চিকিৎসকের প্রচেষ্টায় হাসি ফিরলো পরিবারের 

News Sundarban.com :
সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২২
news-image

বিশ্লেষণ মজুমদার, দক্ষিণ ২৪ পরগনা :

প্রত্যন্ত সুন্দরবনের বাসন্তী ব্লক। বাসন্তী ব্লকের কাঁঠালবেড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের উত্তর ভাঙনখালি গ্রাম। গ্রামেই বসবাস করেন দম্পতি এজাহার ও ছায়মা লস্কর। পরিবারের এক বছর দুই বয়সের শিশুকন্যা রয়েছে।

অন্যান্য দিনের মতো বাড়িতেই খেলছিলো ছোট্ট শিশুকন্যা রোহানা লস্কর। সকলের অলক্ষে ছোট্ট শিশুকন্যা সে তার নিজের জামায় লাগানো একটি পাথরের আস্ত বোতাম খুলে নিয়ে খেলছিলো। খেলার সময় আচমকা আস্ত পাথর টি ওই শিশুর নাকের ছিদ্রের মধ্যে ঢুকে যায়। শুরু হয় শ্বাসকষ্ট। পরিবারের লোকজন কিছুই না বুঝে কি করবেন ভেবে উঠতে পারছিলেন না। কেন শ্বাসকষ্ট হচ্ছে তা দেখতে শিশুকন্যার নাকের মধ্যে টর্চ জ্বেলে দেখার চেষ্টা করে।

নাকের ছিদ্রের মধ্যে টর্চের আলো পড়তেই চকচক করে করে ওঠে আস্ত পাথরটি। বিপদ বুঝেই মুহূর্তে ওই শিশুর পরিবারের লোকজন স্থানীয় এক চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যায়। পাড়ার ওই চিকিৎসক দীর্ঘক্ষণ চেষ্টা করেন। কয়েক ঘন্টার চেষ্টা বিফলে যায়। পাথর টি আরো বেশি করে নাকের ছিদ্রের মধ্যে আটকে যায়। পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে পাড়ার ওই গ্রামীণ চিকিৎসক শিশু কন্যা কে ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয়। এমন পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন লস্কর পরিবারের লোকজন।

পাড়ার ওই চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালের যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। কিন্তু বিধিবাম!রাতের অন্ধকারে কোন যানবাহন না পেয়ে আরো বিমর্ষ হয়ে পড়েন লস্কর পরিবার। ইতিমধ্যে ঘটনার খবর পেয়ে প্রতিবেশী এক যুবক একটি মোটর চালিত ইঞ্জিন ভ্যানে করে ওই শিশু কন্যাকে চিকিৎসার জন্য ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে আসে।ঘড়ির কাঁটা তখন রাত প্রায় ১০ টার ঘরে। সেই মুহূর্তে ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালের জরুরী বিভাগে ইএনটি বিশেষঞ্জ কোন চিকিৎসক ছিলেন না। আবারও চরম উদ্বেগের পারদ চড়তে থাকে লস্কর পরিবারের সদস্যদের মধ্যে।

ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালের জরুরী বিভাগে ছিলেন শিশু বিশেষঞ্জ চিকিৎসক গৌতম মন্ডল। তিনি উদ্বিগ্ন পরিবার কে স্বান্ত্বনা দিয়ে শিশুকন্যা কে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যান।নাকের মধ্যে আটকে থাকা আস্ত পাথর টি বের করার চেষ্টা করতে থাকেন। সেই মুহূর্তে শিশুটি প্রচন্ড জোরে চিৎকার করতে থাকে। অপারেশান থিয়েটারের বাইরে বসে লস্কর পরিবারে লোকজন সেই চিৎকার শুনে আরো বেশি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে।হয়তো বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। কয়েক মিনিটের মধ্যে ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালের শিশু বিশেষঞ্জ চিকিৎসক শিশু কন্যা কে নিয়ে হাসি মুখে অপারেশান থিয়েটার থেকে বেরিয়ে আসেন।শিশুকন্যাকে কোলে নিয়ে মুহূর্তে চিকিৎসকের প্রসংশায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন লস্কর দম্পতি।

লস্কর দম্পতির দাবী ‘সবই ঈশ্বরের কৃপা। দ্বিতীয় ভগবান চিকিৎসকের চেষ্টায় শিশুর নাক থেকে আস্ত পাথর বেরিয়ে আসে। চিকিৎসক কে অসংখ্য ধন্যবাদ।’