শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সুন্দরবনে বনসৃজনে লাগানো হবে ৫ কোটি ম্যানগ্রোভ

News Sundarban.com :
জুলাই ৬, ২০২০
news-image

নিউজ সুন্দরবন ডেস্কঃ ভবিষ্যতের সম্ভাব্য প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেতে সুন্দরবনে নতুন করে বনসৃজনের জন্য রাজ্য সরকার প্রস্তুতি শুরু করেছে। ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের পর মুখ্যমন্ত্রী সুন্দরবনে ৫ কোটি ম্যানগ্রোভ গাছ লাগানোর কথা ঘোষণা করেন। সেই মতো আগামী ১৪ জুলাই রাজ্য বন মহোৎসবের দিন থেকে সুন্দরবন এবং তার আশপাশে ম্যানগ্রোভ রোপনের কাজ শুরু হবে বলে বনদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে। এই প্রকল্প রূপায়ণ করার জন্য জেলা ও ব্লক প্রশাসন এবং বন দপ্তরের আধিকারিকদের নিয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারাই গাছ লাগানোর জন্য উপযুক্ত জমি খুঁজে বের করতে সমীক্ষা চালানোর পাশাপাশি ম্যানগ্রোভের বীজ সংগ্রহের কাজ করছেন।সুন্দরবন বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভের বাইরে নদীর চর, সমুদ্র তীরবর্তী এলাকা এবং পরিত্যক্ত সরকারি জমিতে ম্যানগ্রোভ লাগানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। মূলত দক্ষিণ ও উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার সুন্দরবন লাগোয়া অঞ্চলেই ম্যানগ্রোভ লাগানো হবে। এর জন্য মোট ১৬টি ব্লককে প্রাথমিক ভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে গোসাবা, বাসন্তী, কুলতলি, সাগর, কাকদ্বীপ, পাথরপ্রতিমা, সন্দেশখালি, হাড়োয়া, মিনাখা, হিঙ্গলগঞ্জ এবং হাসনাবাদ ব্লক। এই কাজ যাতে মসৃণ ভাবে হয় সেজন্য আলাদা নজরদারি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাতে বন দপ্তরের ডেপুটি ফিল্ড ডিরেক্টর পদমর্যাদার অফিসাররা ছাড়াও স্থানীয় বিডিও-দের রাখা হয়েছে। কমিটির মাথায় রয়েছেন জেলাশাসক।

বন দপ্তরের হিসেব অনুযায়ী, প্রতি হেক্টর জমাতে ২০ হাজার ম্যানগ্রোভ লাগানো যায়। ফলে পাঁচ কোটি ম্যানগ্রোভ লাগাতে কম করে ২৫০০ হেক্টর জমি লাগবে। সুন্দরবনের সংরক্ষিত এলাকায় এত খালি জমি পাওয়া মুশকিল। তাই বিকল্প জমির খোঁজ চলছে। বনদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, তিনটি ধাপে ম্যানগ্রোভ রোপণের কাজ হবে। প্রথম ধাপে, ম্যানগ্রোভের জন্য উপযুক্ত জমি খুঁজে বের করা। কারণ, সব জমিতে ম্যানগ্রোভ জন্মায় না। স্থানীয় ব্লক প্রশাসন, বন ও ভূমি সংস্কার দপ্তর এবং গ্রাম পঞ্চায়েত যৌথ ভাবে জমির খোঁজ চালাচ্ছে। তার সঙ্গে জমির মালিকানা, বর্তমান অবস্থা এবং সেখানকার মাটির চরিত্র খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সেই জমিতে কোন ধরনের ম্যানগ্রোভ লাগানো যেতে পারে সে ব্যাপারে বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে।পাশাপাশি ম্যানগ্রোভের বীজ সংগ্রহের কাজও শুরু হয়েছে। আর পাঁচটা গাছের মতো অতি সহজে ম্যানগ্রোভের চারা তৈরি করা যায় না। প্রাকৃতিক উপায়েই সুন্দরবন ব-দ্বীপ অঞ্চলে ম্যানগ্রোভ জন্ম নেয়। প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যেই ম্যানগ্রোভ আপনা থেকেই বেড়ে ওঠে।
বন দপ্তরের নার্সারিতে কৃত্রিম উপায়ে ম্যানগ্রোভের চারা তৈরি হলেও বেশিরভাগ ম্যানগ্রোভ প্রকৃতির নিয়মেই বেড়ে ওঠে। জোয়ারের সময় অসংখ্য ম্যানগ্রোভের বীজ নদীতে ভেসে যায়। ভাটার সময় জল নেমে গেলে বীজগুলি নদীর পাড়ে কাদা মাটিতে আটকে যায়। তা থেকেই ম্যানগ্রোভের অঙ্কুরোদগম হয়। মুখ্যমন্ত্রীর কথা মতো পাঁচ কোটি ম্যানগ্রোভ লাগানোর লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে বীজ সংগ্রহের কাজে নেমে পড়েছে পঞ্চায়েতগুলি।

সংরক্ষিত বনাঞ্চলে ম্যানগ্রোভ লাগাবে বন দপ্তর। এজন্য প্রতিটি রেঞ্জ অফিসকে আলাদা করে পরিকল্পনা তৈরি করতে বলা হয়েছে। স্থানীয় গ্রামবাসীদের কাজে লাগিয়ে বন দপ্তর নদী থেকে ম্যানগ্রোভের বীজ সংগ্রহের কাজ শুরু করেছে। আগামী ১৪ জুলাই থেকে আনুষ্ঠানিকে ভাবে বীজ পোঁতার কাজ শুরু হবে। বন দপ্তর এবং হর্টিকালচার বিভাগের নার্সারিতে ম্যানগ্রোভের চারা তৈরি হচ্ছে। সেই চারা বন দপ্তর এবং পঞ্চায়েতের হাতে তুলে দেওয়া হবে।
বন দপ্তর সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, সুন্দরবনে প্রায় ১৩৩ প্রজাতির ম্যানগ্রোভ রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল সুন্দরী, গেওয়া, গরান, কাঁকড়া, বাইন, খলসী, আমুর, গোলপাতা, পশুর, কেওড়া। ম্যানগ্রোভ এক বিশেষ ধরনের উদ্ভিদ যা সাধারণত সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলের নোনা বা লবণাক্ত মাটিতে জন্মায়। পৃথিবীর অন্যতম একক বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ অরণ্য হল সুন্দরবন।