সোমবার, ২৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

মনোনয়ন জমা দেওয়া কে কেন্দ্র করে উত্তাল ক্যানিং, চললো গুলি,বোমা,আক্রান্ত পুলিশ ও সংবাদ মাধ্যম

News Sundarban.com :
জুন ১৫, ২০২৩
news-image

বিশ্লেষণ মজুমদার,ক্যানিং :  মনোনয়ন জমা দেওয়া কে কেন্দ্র করে রণক্ষেত্র চেহারা ধারণ করে উত্তপ্ত হয়ে উঠলো ক্যানিং শহর।চললো বোমা গুলির লড়াই।আক্রান্ত হলেন একাধিক পুলিশ কর্মী ও সংবাদ মাধ্যমের কর্মী।উল্লেখ্য মনোনয়নের প্রথম দিন থেকেই ক্যানিং ছিল উত্তপ্ত।প্রথমদিনে ক্যানিং ১ বিডিও অফিস চত্বরে বেধড়ক মারধর করা হয় বিজেপি কর্মীদের।দ্বিতীয় দিনে এসইউসিআই কর্মীদের কে মারধর করার অভিযোগ ওঠে দুষ্কৃতিদের বিরুদ্ধে।চতুর্থ দিনে বিজেপি কর্মীদের বেধড়ক মারধর করার অভিযোগ ওঠে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতিদের বিরুদ্ধে।

বুধবার ছিল মনোনয়ন জমা দেওয়ার পঞ্চম দিন। সকাল থেকেই ক্যানিং ১ বিডিও অফিস এলাকায় ছিল কড়া পুলিশি প্রহরা। এমনকি অশান্তি বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে আগে থেকেই ক্যানিং শহরের বিভিন্ন এলাকায় প্রচুর পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছিল।এদিন গন্ডোগোলের সুত্রপাত হয় ক্যানিং বাসষ্ট্যান্ডে। সেখানে বহিরাগত দুষ্কৃতিরা সংবাদ মাধ্যম কে ছবি তুলতে বাধা দেয়।সাথে সাথে সংবাদ মাধ্যমের কর্মীদের কে ঘিরে ধরে বেধড়ক মারধর করে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছেন টিভি ৯ বাংলার চিত্র সাংবাদিক বিকাশ মন্ডল,সংবাদ প্রতিদিন পত্রিকার সাংবাদিক দেবব্রত মন্ডল সহ অন্যান্যরা।

অভিযোগ এরপর মুহূর্তে তৃণমূল নেতা শৈবাল লাহিড়ির নেতৃত্বে কয়েক হাজার বহিরাগত ও মাদার তৃণমূল কংগ্রেস কর্মী সমর্থক ক্যানিং হাসপাতাল মোড়ে পথ অবরোধ করে।পরে ওই সমস্ত কর্মী সমর্থকরা ক্যানিং বাসষ্ট্যান্ডের দিকে এগোতে থাকে। সেই মুহূর্তে তাদের কে প্রতিহত করার চেষ্টা করে স্থানীয় যুব তৃণমূল কংগ্রেস কর্মী সমর্থকরা।মুহূর্তের মধ্যে শুরু হয় বোমা গুলির লড়াই।একাধিক বোমা চার্জ করা হয়। চলে কয়েক রাউন্ড গুলি।ঘটনার মুহূর্তে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠি চার্জ করে।পাল্টা মারমূখি হয়ে ওঠে মাদার তৃণমূল কংগ্রেস কর্মী সমর্থকরা।ইট পাটকেল ছুড়ে পুলিশ কে আক্রমণ করে। শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে পুলিশ এলোপাথাড়ী লাঠি চালায়। ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে জনতা।জনতার ছোঁড়া ইটের ঘায়ে গুরুতর জখম হয় বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মী ও ক্যানিংয়ের মহকুমা পুলিশ আধিকারীক দিবাকর দাস।পাশাপাশি গুলি চলার ঘটনায় সুনীল হাওলাদার ও সইফুদ্দিন মোল্লা নামে দুই তৃণমূল কংগ্রেস কর্মী জখম হয়েছেন।ঘটনায় ক্যানিং শহর পুরোপুরি বন্ধের চেহারা ধারণ করে।ঘটনার খবর পেয়েই বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে হাজীর হন বারুইপুর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পার্থ ঘোষ।ঘটনার প্রায় ঘন্টাখানের প্রচেষ্টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ। ঘটনায় অর্ণব রায় সহ ১৫ জন কে আটক করে জিঞ্জাসাবাদা শুরু করেছে পুলিশ।

ঘটনা প্রসঙ্গে ক্যানিং পশ্চিমের বিধায়ক পরেশরাম দাস জানিয়েছেন, ‘সংবাদমাধ্যম কে বা কারা মেরেছে তা আমাদের জানা নেই। তবে যাই হোক না কেন ঘটনা দুঃখজনক।তিনি আরো বলেন, নামে তৃণমূল বিজেপি নেতা শৈবাল লাহিড়ী ও অর্ণব রায়ের নেতৃত্বে কয়েক হাজার বহিরাগত দুষ্কৃতি হাজির হয়েছিল ক্যানিংয়ে। তারা মারমুখী হয়ে ওঠে।পুলিশ কে ইটপাটকেল ছুড়ে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরী করে। বোমা গুলি ও চালায় তারা।ঘটনায় পুলিশ ও সাধারণ মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন।যারা এমন চক্রান্ত করে মনোনয়ন দেওয়ায় বাধা সৃষ্টি করছে তাদের উপযুক্ত শাস্তির দাবী করছি।’

অন্যদিকে এই ঘটনার পর তৃণমূলের মাদার সংগঠনের লোকজন মনোনয়ন জমা না দিয়ে চলে যায়। মনোনয়ন জমা দিতে পারেনি বলে অভিযোগ করেছেন সিপিআইএম কংগ্রেস ও আইএসএফ।ক্যানিংয়ে সিপিএমের পার্টি অফিসে ঢুকে সমস্ত মনোনয়নের কাগজপত্র কেড়ে নেওয়া হয় প্রার্থীদের থেকে। এমনই অভিযোগ করা হয়েছে দলের তরফ থেকে। এদিনের ক্যানিংয়ের ঘটনা নিয়ে বিরোধীরা যে কোন মতেই মনোনয়ন জমা দিতে পারছে না সেই অভিযোগ তুলেছেন। এসইউসিআই জেলা শাসক সুমিত গুপ্তার কাছে অভিযোগ জানিয়েছে। জয়নগর কেন্দ্রের প্রাক্তন সাংসদ তরুণ মন্ডল এবং জয়নগর কেন্দ্রের প্রাক্তন বিধায়ক তরুণ নস্কর দুজনেই যান জেলা শাসকের কাছে অভিযোগ জানাতে।

অন্যদিকে ঘটনা প্রসঙ্গে তৃণমূল নেতা শৈবাল লাহিড়ীর সাথে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে ফোন বন্ধ থাকায় কোন প্রতিক্রীয়া পাওয়া যায়নি।