মঙ্গলবার, ১৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

পুরনো ঢাকায় পূজার মৌসুম

News Sundarban.com :
অক্টোবর ২৭, ২০২০
news-image

শান্তা মারিয়া, বাংলাদেশ:

দুর্গাপূজা মানেই ভোরে শিউলি ফুল কুড়ানোর দিন আর সন্ধ্যায় ছাতিম ফুলের সৌরভ, পাড়ায় পূজামণ্ডপ, মন্দিরে প্রস্তুতি, মেলা আর ঢাকের বাদ্য।শৈশবে পূজা দেখেছি ঢাকেশ্বরী মন্দিরে, রামকৃষ্ণ মিশনে, বনগ্রাম লেনে, জয়কালী মন্দিরে, শাঁখারি বাজার, লক্ষ্মীবাজার এলাকায় আর অবশ্য অবশ্যই জগন্নাথ হলের প্রাঙ্গণে। ঢাকেশ্বরী মন্দিরে পূজার মজা জমতো সবচেয়ে বেশি। ঢাকেশ্বরী ঢাকার প্রাচীনতম মন্দির। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে রাজা বল্লাল সেনের নাম।

এই মন্দিরে দুর্গাপূজা সবসময়ই বেশ জাঁকজমকের সঙ্গে হতে দেখেছি। ঢাকেশ্বরীতে দেবী প্রতিমা থাকতো বেশ উঁচু মণ্ডপে, দেবীর শাড়ি গয়নাও হতো বেশ জমকালো।ঢাকেশ্বরীতে বেজায় ভিড়। প্রতিমা দেখতে হতো দূর থেকে। নবমীর দিন ওই ভিড়ের ভিতর যাবার সুযোগ ছিল না। তাই আমরা সাধারণত সপ্তমীর দিন যেতাম ঢাকেশ্বরী ও রামকৃষ্ণ মিশনের প্রতিমা দেখতে। ঢাকেশ্বরীর সামনের রাস্তায় তখন মেলা বসতো। মেলায় পাওয়া যেত বাতাসা, চিড়ার নাড়ু, তিলের নাড়ু, মোদক নামে এক ধরনের মিষ্টি, মাটির হাড়ি পাতিল, দেবদেবীর ছোট ছোট বিগ্রহ, লক্ষ্মী নারায়ণের যুগলমূর্তি ও লক্ষ্মীর পট।
পূজার সময় সবচেয়ে আনন্দ হতো পুরানো ঢাকার বনগ্রাম লেন ও জয়কালী মন্দিরে। ঠাটারি বাজার থেকে বনগ্রাম লেনে মোড় নেয়ার সময় একটি ছোট মন্দির ছিল। সেখানে প্রতি বছর প্যান্ডেল বেঁধে পূজামণ্ডপ করা হতো।

বনগ্রাম লেনে বারোয়ারি দুর্গাপূজা হতো। এখানে পূজা প্যান্ডেলে গান বাজতো লাউডস্পিকারে। দেবীপ্রতিমা ছিল একেবারে ঐতিহ্যবাহী ঘরানার। কী যে সুন্দর লাগতো সেই প্রতিমা। সে সময় এইসব এলাকার মিষ্টির দোকানে বিশেষ রকমের মিষ্টি তৈরি হত। লাড্ডু, মোতিচুর তো ছিলই, মাছের আকৃতিতে সন্দেশ তৈরি করা হতো। বিজয়া দশমীর পর ঢাকায় বিসর্জনের মিছিল শুরু হতো। সেসময় নবাবপুর রোড দিয়ে মিছিল শুরু হতো। সেসময় নবাবপুর রোড দিয়ে মিছিল চলতো। ওই মিছিল দেখার জন্য আমার আগ্রহের সীমা নেই। বিভিন্ন পূজামণ্ডপ থেকে প্রতিমা নিয়ে মিছিল করে যাওয়া হতো সদরঘাটের দিকে। বুড়িগঙ্গায় একটির পর একটি ঠাকুর বিসর্জনের পালা চলতো। সেসময় চারদিক থেকে ঢাকের আওয়াজে কান পাতা দায় হতো। এখনও ঢাকায় খুব ধুমধামের সঙ্গে দুর্গাপূজা হয়। দেখতেও যাই। শারদীয় উৎসবে ভরে ওঠে মন।

 

আরও দেখুন