ভারতের ইউটিউব তারকা প্রবীণ এই নারী গঙ্গাভা মিলকুরি
এখন প্রভিতা প্রকাশের একটি বড় প্লাটফরম অনলাইন। সোশ্যাল মিডিয়ায় রাতারাতি তারকা বনে যাচ্ছেন অনেকে। ইউটিউবের কল্যাণে হয়ে উঠছেন বিখ্যাত।
এমনই একজন হলেন ভারতের ইউটিউব তারকা গঙ্গাভা মিলকুরি। বয়সে প্রবীণ এই নারী প্রতিভার জোরে হয়ে উঠেছেন ইউটিউব তারকা।
গঙ্গাভা মিলকুরির নাতি-নাতনির সংখ্যা ৮। তার আসল বয়স কত সেটা কেউ জানেন না। কারণ তার জন্মের কোন রেকর্ড নেই। দক্ষিণ ভারতের তেলঙ্গানার রাজ্যের লাম্বাদিপলির ছোট্ট গ্রামে তিনি বাস করেন। গঙ্গাভা এখন ’মাই ভিলেজ শো’ ইউটিউব চ্যানেলের তারকা। এরই মধ্যে চ্যানেলটির সাবস্ক্রাইবার ১৫ লাখ ছাড়িয়েছে।
গঙ্গাভা মিলকুরির মেয়ে জামাই ও চলচ্চিত্র নির্মাতা শ্রীকান্ত শ্রীরাম ২০১২ সালে চ্যানেলটি খোলেন। নয় জনের একটি দল ওই চ্যানেলের জন্য গ্রামীণ সংস্কৃতি, গ্রামীণ পারিবারিক জীবন নিয়ে ভিডিও তৈরি শুরু করেন।
গঙ্গাভা জানান, শ্রীরামের শো শুরুর আগে ইউটিউব কী সে সম্পর্কে তার কোন ধারণা ছিল না। শ্রীরাম যখন গ্রামের গাছপালা, প্রকৃতির ভিডিও করতো তখন তিনি ভাবতেন ছেলেটি এসব করে সময় নষ্ট করছে কেন? গঙ্গা বলেন, ‘জীবনে কখনও ভাবিনি যে একদিন আমিও তার ভিডিওতে থাকব।’
গাঙ্গাভা ২০১৭ সালে জামাইয়ের ভিডিও চিত্রে প্রথম অতিথি শিল্পী হিসেবে উপস্থিত হন।
শ্রীরাম জানান, গঙ্গাভা ক্যামেরার সামনে খুবই সাবলীল ছিলেন যা দর্শকের মন ছুঁয়ে। তাবে লেখাপড়া না জানায় তাকে স্ক্রিপ্ট বুঝিয়ে দিতে হয়।
গঙ্গাভা বলেন, ‘লেখাপড়া জানি না। যথেষ্ট বয়সও হয়েছে। নিজের মতো করে কথা বলি। মানুষ হয়তো সেটাই পছন্দ করে।’
ইউটিউব তারকা হবার আগে গঙ্গাভার জীবন বেশ কষ্টের ছিল। প্রাথমিকের গণ্ডি পেরেনোর আগেই তিনি স্কুল ছাড়েন। পরিবার চালাতে খামারে কাজ করতেন। কখনওবা সিগারেট বানিয়ে পরিবারকে সাহায্য করতেন। স্বামী ছিলেন মাদকাসক্ত। এ কারণে দুই মেয়ে আর এক ছেলেকে বড় করতে কঠোর পরিশ্রম করতে হয় গঙ্গাভাকে।
তবে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হওয়ার পর তার জীবনে পরিবর্তন আসে। তার ইউটিউব চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবারও বাড়ছে। ইউটিউবের এশিয়া অঞ্চলের মুখপাত্র তু এঙ্গুইন জানান, মাসে অন্তত ২৬কোটি ৫০ লাখ মানুষ গাঙ্গাভার চ্যানেলের ভিডিও দেখেন। তার চ্যানেলে অনেক ভাষার সংমিশ্রণ পাওয়া যায়। এ কারণে অনেকে চ্যানেলটি পছন্দ করছেন।
চ্যানেলটির ভিডিও তেলেগু ভাষায় তৈরি করা হয়, যা গাঙ্গাভার মাতৃভাষা। এ কারণে চ্যানেলটি সফলতা পেয়েছে মনে করেন তু এঙ্গুইন। তার মতে, হিন্দি ও ইংরেজির পরিবর্তে আঞ্চলিক ভাষায় ভিডিও দেয়ায় অনেকের চ্যানেলটি নিয়ে আগ্রহ বাড়ছে।
এদিকে গঙ্গাভার জনপ্রিয়তা এখন ইউটিউব ছাড়িয়ে ইনস্ট্রাগ্রামেও। সেখানে তার ফলোয়ারে ৪১ হাজার। ২০১৯ সালে তেলেগু দুটি সিনোমাতেও তাকে অভিনয় করতে দেখা গেছে।
গাঙ্গাভা নিজের এই খ্যাতি দারুণ উপভোগ করেন। গ্রামে ঘুরতে আসা পর্যটক ও ভক্তদের সঙ্গে ছবি তুলে তিনি বেশ আনন্দ পান। তিনি বলেন, ‘ক্যামেরার সামনে অভিনয় করতে আমার ভালো লাগে। বিভিন্ন জায়গার মানুষ আমার অভিনয় দেখছে জেনেও ভালো লাগে।’
বিজ্ঞাপন থেকে চ্যানেলেটির যে আয় হয় তার কিছু অংশ গাঙ্গাভা পান। তিনি আশা করছেন এই টাকা দিয়ে তার সব ঋণ শোধ হবে। একদিন এই আয় দিয়ে একটি নতুন বাড়ি করবেন।
শ্রীরাম বলেন, ইউটিউব অনেকের জীবন বদলে দিচ্ছে। কেউ যদি ভালোভাবে এই প্লাটফরম ব্যবহার করতে পারে তাহলে একদিন তারাও তারকা কিংবা সাবলম্বী হয়ে উঠতে পারবেন। সূত্র: সিএনএন