‘ছাত্র ছাত্রীদের ভবিষ্যৎকে অবহেলা করা হচ্ছে’
নিউজ সুন্দরবন ডেস্ক: করোনা সংংক্রমণের জেরে সঙ্কটে পড়া রাজ্যের পড়ুয়াদের স্বার্থ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ফের একবার অপমানিত হতে হল রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়কে। বর্তমান আবহে রাজ্যের উচ্চ শিক্ষা ব্যবস্থার গতি প্রকৃতি নিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের বৈঠকে ডেকেছিলেন রাজ্যপাল তথা বিশ্ববিদ্যলয়গুলির আচার্য ধনখড়।কিন্তু রাজ্য সরকারের ‘অঙ্গুলি হেলনে’তাঁর সঙ্গে বৈঠকে বসতে রাজি হননি উপাচার্যরা। এমত অবস্থায় ভার্চুয়াল বৈঠকের অনুমোদন না দেওয়ার অভিযোগ তুলে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন শিক্ষার রাজনৈতিকীকরণ নিয়েও।
রাজভবনে বৃহস্পতিবার এক সাংবাদিক বৈঠকে রাজ্যপাল অভিযোগ করেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থের কথা মাথায় রেখেই উপাচার্যদের বৈঠকে তলব করা হয়েছিল। আচার্য হিসাবে এটা রাজ্যপালের অধিকার ও দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। কিন্তু রাজ্য সরকার এই বৈঠকের অনুমোদন দেয়নি বলে তিনি বিষ্মিত ও ক্ষুব্ধ । ধনখড় অভিযোগ করেন রাজ্যের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক ভাবে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। ছাত্র ছাত্রীদের ভবিষ্যৎকে অবহেলা করা হচ্ছে।তাঁর অভিযোগ, ‘দেশের কোনও রাজ্যে এমন অবস্থা নয়। এখানে রাজনৈতিকভাবে শিক্ষাব্যবস্থাকে চালনা করা হচ্ছে। এ রাজ্যের শিক্ষা আশঙ্কাজনক পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। কেন উপাচার্যরা বৈঠকে যোগ দিল না? ১৫ জানুয়ারি তার উত্তর জানতে চেয়েছিলাম মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। ছয় মাস কেটে গিয়েছে এখনও কোনও জবাব দেওয়ার সময় পাননি তিনি। ১৫ জুলাই রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপাচার্যের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকের ঘোষণা করি। কিন্তু, সরকার থেকে জানান হয়েছে, এমন ভার্চুয়াল বৈঠকের নিয়ম নেই। আমি শিক্ষাব্যবস্থায় উন্নতির জন্য উপাচার্যদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চেয়েছিলাম। কিন্তু রাজ্য সরকার আমার কাজে বাধ দিচ্ছে।’এরাজ্যে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময় পড়ুয়াদের যেভাবে শোষণ করে হয় তার নজির অন্য কোন রাজ্যে নেই বলে রাজ্যপাল অভিযোগ করেন।টুইট করেও রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।ধনখড় বলেন, শিক্ষা ব্যবস্থাকে ‘রাজনৈতিক খাঁচাবন্দি’ করে রাখলে তার ফল ভয়াবহ হতে বাধ্য। এমন ব্যবস্থা আত্মঘাতী। উপাচার্যদের কাছে আইন কি কারও ‘অঙ্গুলিহেলন’!
রাজ্যপালের সাংবাদিক বৈঠকের পরে তাঁকে পাল্টা আক্রমণ করতে একযোগে মাঠে নামে রাজ্য সরকার এবং শাসক শিবির।পাল্টা টুইট করে রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দপ্তর জানায় রাজ্যপাল যে ভাবে সরাসরি চিঠি দিয়ে উপাচার্য দের বৈঠকে ডেকেছেন তা নিয়ম বিরুদ্ধ। রাজ্যের বিশ্ব বিদ্যালয় আইনে তার কোন সংস্থান নেই। আইন অনুযায়ী আচার্য উচ্চ শিক্ষা দপ্তরের মাধ্যমে উপাচার্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। এক্ষেত্রে সেই নিয়ম মানা হয়নি।কোন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আচার্যের কোন অভিযোগ থাকলে তাও উচ্চ শিক্ষা দপ্তরকেই জানাতে হবে বলে স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমও রাজ্যপালের সমালোচনায় অবতীর্ণ হন। বিকেলে মাঠে নামেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্য সরকার রাজ্যপালের পদের মর্যাদা জানে।তারও উচিৎ নির্বাচিত জন প্রতিনিধিদের উপযুক্ত মর্যাদা দেওয়া।রাজ্যপাল রাজনৈতিক দলের মতো কথা বলতে পারেন না। সংবিধান তার অনুমতি দেয় না। অন্যদিকে রাজ্য সরকারের তরফে রাজভবনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছেনা এই অভিযোগ খারিজ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, গতকাল ৪ বার তিনি ফোনে রাজ্যপালের সঙ্গে কথা বলেছেন। শিক্ষামন্ত্রী ও মুখ্যসচিবও তার সঙ্গে কথা বলেছেন।তিনি বলেন, “আমরা কি ওনার চাকর-বাকর? আমরা মাইনে নিয়ে কাজ করছি। আমাদের যেন প্রতি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে? বিজেপির মিটিং কেন হল না, মিছিল কেন হল না, কেন দেহ পোড়ানো হয়নি? রাজনৈতিক মার্ডার কী করে হল?”
উপাচার্য দের সঙ্গে তার বৈঠক না হওয়ার ব্যাপারেও রাজ্য সরকারের কোন ভূমিকা নেই বলে মুখ্যমন্ত্রীর দাবি। রাজ্য সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বশাসনে হস্তক্ষেপ করেনা। রাজ্যপাল তাঁর বৈঠকে যোগ না দেওয়ার জন্য উপাচার্যদের বিরুদ্ধে বিধিমাফিক ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়ার প্রসঙ্গেও মুখ্যমন্ত্রী তাঁর সমালোচনা করেন। রাজ্য সরকার উপাচার্যদের পাশেই থাকবে বলে তিনি জানিয়েছেন।এই বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “সারাক্ষণ কাজ করব না। কনফারেন্স হবে কি হবে না সেটা শিক্ষা দপ্তরের ব্যাপার। সবাই যা বলার বলেছে। উপাচার্যরাও বলেছেন। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত যেন প্রণাম করতে যতে হবে। সময় পেলে সেটাও যেতাম। আমি তো চাকর-বাকর। নির্বাচিত লোকেরা সব চাকর-বাকর হয়ে গেছে। পশ্চিমবঙ্গে অনলাইনে অ্যাডমিশন হয়। উনি আগে উত্তরপ্রদেশ, বিহারের দিকে তাকিয়ে দেখুন। ভিসিরা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন না যাওয়ার। যেহেতু আইন বলছে দপ্তরই শেষ কথা। আমি মুখ্যমন্ত্রী আছি বলে কাউকে বলব আপনার চাকরি দিতে হবে, প্রণাম করতে হবে। সেটা সম্ভব নয়। প্রতিহিংসা মূলক কিছু করতে গেলে বাংলা গর্জে উঠবে। ভাষার দংশনে আমরা লজ্জিত। গায়ের জোরে কিছু করতে গেলে মানুষ জবাব দেবে।”