শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সংবাদমাধ্যমের অন্দর মহলেও থাবা বসিয়েছে করোনা

News Sundarban.com :
জুলাই ৮, ২০২০
news-image

নিউজ সুন্দরবন ডেস্কঃ করোনা মহামারী সংবাদের জগতেও নজির বিহীন পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। মাহাযুদ্ধ হোক বা প্রাকৃতিক বিপর্যয় সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের কাজ করতে হয় নিরলস ভাবে। কিন্তু এবার সংবাদ মাধ্যমের অন্দরমহলেও থাবা বসিয়েছে করোনা।কলকাতা বেতার অফিস আকাশবাণী ভবনও করোনার কবলে।একাধিক কর্মী করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় সংবাদ বিভাগের দপ্তর বন্ধ করে দিতে হয়। এমত অবস্থায় বিগত ৯দিন ধরে বাড়িতে বসেই সংবাদ সম্প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন সংবাদ বিভাগের কর্মীরা।নজির বিহীন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে তাঁরা যেভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তাতে আপ্লুত রেডিও প্রেমিক শ্রোতাকূল।

লকডাউন পর্বের শুরুতে আকাশবাণীর অন্যান্য বিভাগ বন্ধ থাকলেও সংবাদ বিভাগ স্বাভাবিক ভাবেই কাজ করে গেছে।প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে অন্য বিভাগও কাজ শুরু করে। কিন্তু তার পরেই আসে নতুন ধাক্কা। গত মাসেই সংবাদ বিভাগের দুজন সংবাদ পাঠক -পাঠিকা করোনায় আক্রান্ত হয়ে পড়েন । সংবাদ বিভাগের সঙ্গে যুক্ত এক গাড়িচালকের ওই রোগে মৃত্যুর পর সংবাদ বিভাগের দপ্তর ২৯ জুন থেকে বন্ধ করে দেওয়া । তবে খবর ও সংবাদ ভিত্তিক অনুষ্ঠান সম্প্রচার থেমে থাকেনি। প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও খবর ও সমসাময়িক বিষয়ের ওপর সংবাদভিত্তিক অনুষ্ঠান কারিগরি বিভাগের সহযোগিতায় দপ্তরের বাইরে থেকেই তৈরি করে সম্প্রচার করা হচ্ছে।সংবাদ বিভাগের প্রতিটি কর্মী দায় বদ্ধতা নিয়ে এই কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন । তাদের আশা খুব শীঘ্রই আবার আকাশবাণীর বাংলা খবর স্বমহিমায় ফিরে আসবে।বাড়িতে বসে সরকারি গণমাধ্যমের দায়বদ্ধতা বজায় রেখে শ্রোতাদের নিয়মিত সর্বশেষ খবর পৌঁছে দেওয়া যে কতটা কঠিন তা উঠে এসেছে সংবাদ বিভাগের কর্মী-আধিকারিকদের কথায়।আকাশবাণী কলকাতা কেন্দ্রের সংবাদ বিভাগের প্রধান অরিজিৎ চক্রবর্তীর কথায়, ‘অন্য অনুষ্ঠানের সঙ্গে খবরের মূলগত পার্থক্য রয়েছে।খবরে সর্বশেষ তথ্য মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়াটা আমাদের দায়বদ্ধতা। অনেক সময়েই এই সব খবর পাওয়া যায় শেষ মূহূর্তে।তা শ্রোতাদের কাছে সবার আগে পৌঁছে দেওয়াটাই সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ।

তবে আমাদের কর্মীরা খুব দক্ষতার সঙ্গেই প্রতিকূল পরিস্থিতির মোকাবিলা করছেন। যোগ্য সঙ্গত করছেন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের কর্মীরাও। আশাকরি খুব তাড়াতাড়ি আমরা এই পরিস্থিতি কাটিয়ে স্বমহিমায় ফিরতে পারব।’
ঠিক কী ধরণের চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করে কাজ করতে হচ্ছে তার কিছুটা ইঙ্গিত দিয়েছেন কলকাতা কেন্দ্রের সংংবাদ পাঠিকা ধৃতি সেন শর্মা। তাঁর কথায়, ‘স্টুডিওর পরিবেেশ কখনও বাড়িতে পাওয়া সম্ভব নয়। স্টুডিওর সাউন্ড প্রুফ ঘরে বাইরের আওয়াজ ঢোকেনা। বাড়িতে বসে বুলেটিন রেকর্ড করতে গেলে বাইরের আওয়াজ ঢুকে পড়ার ভয় থাকে।অনেক সময় ১০ মিনিটের বুলেটিন রেকর্ড করতে গিয়ে শেষ মূহুর্তে পাখির ডাক, ফেরিওয়ালার আওয়াজ বা বাইকে স্টার্ট দেওয়ার শব্দ ঢুকে পড়ছে।অগত্যা আবার পুরো পরিশ্রম জলাঞ্জলি দিয়ে প্রথম থেকে সবটা আবার করতে হচ্ছে।এই ভাবে কলকাতা থেকে জেলা সংবাদদাতাদের পাঠানো অজস্র খবর গ্রন্থিত করে সঠিক সময় পরিবেশন করাটা বিরাট চ্যালেঞ্জ।’
তবে শুধু খবর নয় মহামারীর আবহে একই সঙ্গে নানা সচেতনতা মূলক অনুষ্টানও প্রচার করছে আকাশবাণির সংবাদ বিভাগ।করোনা প্রতিরোধ ও চিকিৎসা নিয়ে আকাশবাণির ‘করোনা ক্লিনিক’ অনুষ্ঠান শততম পর্ব অতিক্রম করেছে। লক ডাউন এর সময় মারণ ভাইরাস করোনা সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরি করতে সাক্ষাৎকারভিত্তিক এই অনুষ্ঠান চালু হয়। বিশিষ্ট চিকিৎসক, বিশেষজ্ঞ, নার্স সহ সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রের মানুষ যারা এই ভাইরাস সংক্রমনের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা অনুষ্ঠানে যোগ দেন।লকডাউনে বাংলার পরিয়ায়ী শ্রমিক থেকে শুরু করে ছোট ব্যবসায়ী, লোকশিল্পিদের দুরবস্থা তুলে ধরার পাশাপাশি আনলক পর্বে তাদের জীবনে ফেরার লড়াই তুলে ধরা হচ্ছে ‘লকডাউনে বাংলা’ ও ‘আনলক চিত্র’ অনুষ্ঠানে। এছাড়াও সংবাদ বিভাগের ‘সমীক্ষা’ অনুষ্ঠানও প্রচারিত হচ্ছে নিয়মিত। সংবাদ বিভাগের পাশাপাশি্ মহামারীর আবহে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে এবং ভরসা যোগাতে নানা অনুষ্ঠান প্রচার করছে আকাশবাণীর প্রোগ্রাম বিভাগও। পরিবর্তীত পরিস্থিতিতে নতুন আঙ্গিকে বেতারের এই ভূমিকায় খুশি শ্রোতারাও।আকাশবাণীর সামাজিক মাধ্যমের দেওয়াল ভরে উঠছে তাদের সাধুবাদ ও অভিনন্দনে।