শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সুন্দরবন জঙ্গলে বাঘের আক্রমণে নিখোঁজ মৎস্যজীবির ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার

News Sundarban.com :
জুলাই ৪, ২০২০
news-image

সুভাষ চন্দ্র দাশ, ক্যানিং –

মাছকাঁকড়া ধরতে গিয়ে শুক্রবার বিকালে বাঘের আক্রমণে নিখোঁজ হন মৎস্যজীবী যামিনী মিস্ত্রী(৫২)। শনিবার সকাল নটা নাগাদ সুন্দরবনের পঞ্চমুখানি ২ নম্বর গভীর জঙ্গলের কাপুরা নদীর খাঁড়িতে বাঘের আক্রমণে নিখোঁজ মৎস্যজীবির ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার করলো সুন্দরবন কোষ্টাল থানার পুলিশ।পাশাপাশি মৃতদেহ ময়না তদন্তে পাঠিয়ে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
সুন্দরবন জঙ্গলের নদীখাঁড়িতে মাছকাঁকড়া ধরতে গিয়ে প্রায় বাঘের আক্রমণে পড়ে প্রাণ হারাতে হচ্ছে মৎস্যজীবিদের।ঘটনার সময় তৎক্ষণাৎ কেউ কেউ বাঘের আক্রমণের হাত থেকে মৃতদেহ উদ্ধার করে আনলেও কেউ নিখোঁজ থাকলে সেই মৎস্যজীবির হদিশ পাওয়াই যেতো না। এই প্রথম সুন্দরবনের গভীর জঙ্গল থেকে বাঘের আক্রমণে নিখোঁজ মৎস্যজীবির ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার করলো পুলিশ।

উল্লেখ্য,দিব্যি চলছিল কাঁকড়ার ব্যবসা। করোনা তান্ডবে শুরু হয় লকডাউন। লকডাউনের জেরে দেশ বিদেশে কাঁকড়া রপ্তানী বন্ধ হয়ে যায়।পাশাপাশি লকডাউনে সুন্দরবনের নদীখাঁড়িতে মাছ কাঁকড়া ধরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করে দেয় বনদফতর।যার ফলে একপ্রকার কাঁকড়া ব্যবসা লাটে ওঠে।করোনা,লকডাউন আর আম্ফানে বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে অসংখ্য মৎস্যজীবি পরিবার।অগত্য পরিবারের সদস্যদের মুখে দুমুঠো অন্ন সংস্থানের জন্য পুরানো পেশায় ফিরতে চেয়েছিলেন গোসাবা ব্লকের সুন্দরবন কোষ্টাল থানার লাহিড়ীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের মৎস্যজীবী যামিনী মিস্ত্রী(৫২)।সেইমতো শুক্রবার দুপুরে বনদফতরের অনুমতি ছাড়াই দুজন সঙ্গী অজিত মন্ডল,অসিত মাঝি আর বড়ছেলে মিলন মিস্ত্রী কে সাথে নিয়ে কাঁকড়া ধরার জন্য রওনা দিয়েছিলেন সুন্দরবনের পঞ্চমুখানি ২ নম্বর জঙ্গলের উদ্দেশ্যে।শুক্রবার বিকাল নাগাদ নদীতে তখন ভাটা। সেই সময় চারজন মৎস্যজীবী কাপুরা নদীখাঁড়িতে জলে নেমে কাঁকড়া ধরতে থাকেন।আচমকা সুন্দরবনের গভীর জঙ্গল থেকে একটি বাঘ বেরিয়ে আসে।আক্রমণ করে ঝাঁপিয়ে পড়ে যামিনী মিস্ত্রীর উপর।অন্যান্য তিনসঙ্গী কিছু বুঝে ওঠার আগেই যামিনীর মুখে কামড় বসিয়ে বাঘ তার শিকার নিয়ে জঙ্গলে চলে যাওয়ার চেষ্টা করে। সঙ্গীসাথীরা যামিনীকে বাঁচানোর চেষ্টা করে।

কাঁকড়া ধরার শিক ও নৌকার বৈঠা নিয়ে বাঘের সাথে লড়াই শুরু করে।ক্ষুধার্ত বাঘের ভয়ঙ্কর মূর্তির সামনে সেই লড়াইয়ে পিছু হটেন তিন মৎস্যজীবী।সুযোগ বুঝে বাঘ তার শিকার নিয়ে সুন্দরবনের গভীর জঙ্গলে পালিয়ে যায়।এরপর যামিনীর ছেলে মিলন ও তার অপর দুই সঙ্গী নৌকা নিয়ে গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসেন।বাঘের আক্রমণের খবর গ্রামে পৌঁছাতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন যামিনী মিস্ত্রীর স্ত্রী দেবীরানি ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা। অন্যদিকে চোখের সামনে থেকে বাবা কে বাঘে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনাকে কোন মতে মেনে নিতে পারছেন না। বার বার কান্নায় ভেঙে পড়ছে ছেলে মিলন মিস্ত্রী।

ঘটনার খবর জানতে পারে বনদফতর ও সুন্দরবন কোষ্টাল থানার পুলিশ।শনিবার সকালে নিখোঁজ মৎস্যজীবীর খোঁজে পঞ্চমুখানি ২ জঙ্গল লাগোয়া কাপুরা নদীর চড়ে তল্লাশি অভিযান শুরু করে সুন্দরবন কোষ্টাল থানার পুলিশ। সকাল নটা নাগাদ মৎস্যজীবী যামিনী মিস্ত্রীর ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার হয়। যামিনীর মুখের অধিকাংশটাই ক্ষুধার্ত বাঘ খেয়ে ফেলেছে।
অন্যদিকে মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনার পর আবারও শোকে ভেঙে পড়েছে মিস্ত্রী পরিবারের লোকজন সহ প্রতিবেশীরা।পুলিশ মৃতদেহটি উদ্ধার করে ময়না তদন্তে পাঠিয়ে তদন্ত শুরু করেছে।