ক্যানিংয়ের ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন শ্মশান এ গঙ্গামেলায় মকরস্নানে ডুব দেবেন ৫০ হাজার পূণ্যার্থী
নিজস্ব প্রতিনিধি,ক্যানিং – একদিকে দুরত্ব অন্যদিকে অর্থনৈতিক ভাবে অক্ষমতার জেরে পূণ্য অর্জনের জন্য সুদূর গঙ্গাসাগরে যেতে না পেরে পূণ্য অর্জনের জন্য দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার ক্যানিংয়ের ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন মধ্যযুগের দাপুটে পিয়ালি নদীর তীরে কালিগঙ্গা শ্মশান মেলায় পঞ্চাশ হাজারেরও অধিক পূণ্যার্থী স্নান করবেন বলে আশাবাদী মেলা কমিটি।
বিগত প্রায় ১৫০ বছর আগে কলেরা(অলাউঠা) হয়ে একাধিক লোকজন মারা যাওয়ায় সৎকারের জন্য কাছাকাছি কোন শ্মশান ঘাট না থাকার কারণে সৎকার করা দুর্বিঃষহ হয়ে ওঠে।ফলে সৎকারের নির্দিষ্ট কোন জায়গা না থাকায় পিয়ালি নদীতে ফেলে দেওয়া কিংবা নদীর তীরে পুঁতে ফেলা হত মৃতদেহ।এমন ভাবেই চলতো মৃতদেহের শেষকৃত্য।গত প্রায় ৬৭ বছর আগে এলাকার মানুষের মধ্যে একটা সংশয় তৈরী হয়।তৎকালীন সময়ে বিজয় সরদার,কানাই শিকারী,মোহন সরদার, ঘনশ্যাম নস্কর,নন্দ মন্ডল,কালিপদ নস্কর,ওয়াদেজ গাজী,ভবসিন্ধু নস্কর,ইউনুস মন্ডল,চন্দ্রশেখর নস্কর,উপেন অধিকারী সহ গ্রামের মোড়ল মাতব্বরদের নিয়ে বৈঠক ডাকা হয়।সেই সময় বধুকুলার বেশকিছু গ্রামবাসী মিলিত ভাবে জমিদান করেন। মৃতদেহ সৎকারের জন্য পিয়ালি নদীর তীরে গড়ে তোলেন একটি শ্মশান এবং কালি মায়ের মন্দির। সেই থেকেই নাম করণ হয় কালিগঙ্গা শ্মশান।
বর্তমানে এই শ্মশান এবং কালিমন্দির ঘিরে গড়ে উঠেছে মানুষের এক মহা মিলনক্ষেত্র মেলা। প্রতিবছর মাঘ মাসের প্রথম তিনদিন মকরস্নান উপলক্ষে মেলা বসে।দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার গোসাবা,বাসন্তী, ক্যানিং, জয়নগর,কুলতলি,মগরাহাট,মথুরাপুর,মন্দিরবাজার,বাইরুপুর সহ জেলার অন্যান্য প্রান্তের সাধারণ মানুষ এসে ভীড় জমায়। কেউ আসেন পূণ্য অর্জনের জন্য আবার কেউ বা আসেন মেলা ঘুরতে। তিনদিনের মেলায় প্রায় লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হয়।
কালিগঙ্গা শ্মশান দীর্ঘদিন অবহেলিত ভাবে পড়ে থাকলেও বর্তমান রাজ্য সরকারের সাহায্যে শশ্মানে গড়ে উঠেছে যাত্রী প্রতিক্ষালয়,বৈতরনী প্রকল্পের আধুনিক মানের মৃতদেহ সৎকারের জন্য চুল্লি,যাত্রী প্রতিক্ষালয়,পানীয়জলের কল সহ শৌচালয়।ঐতিহ্যবাহী মেলা হলেও বেশকিছু অসাধু ও সমাজবিরোধীদের দাপটে মেলার মাঠে চলতো চটুল নাচ,জুয়া,মদের আসর এমনকি ড্যান্স হাঙ্গামা।
চলতি বছর ঐতিহ্যবাহী এই মেলা হবে কি হবে না তা নিয়ে সংশয় তৈরী হয়েছিল।তবে সে সমস্ত জল্পনা কে কোনপ্রকার আমল না দিয়ে মেলার ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে তৎপর হয় গোপালপুর পঞ্চায়েতের নবনির্বাচিত পঞ্চায়েত প্রধান আকচার মন্ডল। তিনি ক্যানিং পশ্চিমের বিধায়ক পরেশরাম দাস ও ক্যানিং ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির উত্তম দাসের নজরে আনেন মেলার প্রসঙ্গ।
এরপরই শুরু হয় তোড়জোড়।বিধায়ক,পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ও স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধানের উদ্যোগে মহামানবের মিলন ক্ষেত্র ঐতিহ্যবাহী এই মেলা অনুষ্ঠিত হবে।মেলায় কোন প্রকার অপসংস্কৃতি থাকবে না।গ্রামীণ এই ঐতিহ্যবাহী মেলা হবে মহামানবের মিলন ক্ষেত্র।মেলায় থাকবে না কোন জুয়ার আসর,মদের আসর,অশ্লীল নাচ এবং গান।
অন্যদিকে স্থানীয় মানুষের দাবী ‘একসময় এই শ্মশান ঘাটে কোন পরিষেবা ছিলো না। বর্তমানে মৃতদেহ সৎকারের জন্য রাজ্য সরকারের একান্ত সদিচ্ছায় চুল্লি হলেও জ্বালানী কাঠের কোন ব্যবস্থা নেই। তাছাড়াও রাতে দুষ্কৃতিদের উপদ্রব হয়।শ্মশানে কোন আলোর ব্যবস্থা নেই।শ্মশানের যত্রতত্র ময়লা আবর্জনায় ভরপুর এছাড়াও যাত্রী নিরাপত্তায় জোর দেওয়া উচিত শ্মশানের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের। তাহলে আগামী দিনে এই কালিগঙ্গা শ্মশান মেলার ঐতিহ্য বাড়বে। ”যদিও মেলা কমিটির সদস্যরা সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়ে জানিয়েছেন “শ্মশানে সমস্ত পরিষেবাই পাওয়া যাবে,তার কাজ শুরু হয়েছে। তবে বেশ কিছুদিন সময় লাগবে।