শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বিজেপি বিধায়কের মৃত্যু, তদন্তের আগেই আত্মহত্যা তত্বে শিলমোহর নবান্নের

News Sundarban.com :
জুলাই ১৫, ২০২০
news-image

নিউজ সুন্দরবন ডেস্ক: হেমতাবাদের বিজেপি বিধায়ক দেবেন্দ্রনাথ রায়ের মৃত্যু নিয়ে উত্তাল রাজ্য রাজনীতি। এবার ওই রহস্যের ওপর থেকে পরদা তুলতে রাষ্ট্রপতির দ্বারস্থ হল বিজেপি। রাজ্য প্রশাসন মঙ্গলবার আত্মহত্যার তত্ত্বে কার্যত শিলমোহর দিয়ে দেওয়ায় এদিন বিধায়কের মত্যুর সিবিআই তদন্ত চেয়ে রাষ্ট্রপতির দ্বারস্থ হয়েছেন দলের সর্ববারতীয় নেতৃত্ব। রাজ্য বিজেপির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়র নেতৃত্বে ৫ সদস্যের এক প্রতিনিধিদল রাষ্ট্রপতি ভবনে রাষ্ট্রপতি সঙ্গে দেখা করে দাবি পত্র তুলে দেয়। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ সেরে বেরিয়ে পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের অপসারণ দাবি করেন বিজেপি নেতারা।

বিজেপির প্রতিনিধিদলে কৈলাস বিজয়বর্গীয় ছাড়াও কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় ও রাজ্যসভার সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত প্রমুখরাও ছিলে্ন। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ সেরে বেরিয়ে কৈলাস বিজয়বর্গীয় জানান, ‘বোমা বিস্ফোরণ, গুলি এগুলোই এখন পশ্চিমবঙ্গের পরিচয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভোট যত এগোচ্ছে ততই হিংসা বাড়ছে। বিজেপির কোনও কর্মীর নাম লিখে মৃতের নামে একটা সুইসাইড নোট তৈরি করবে। তার পর বিজেপি কর্মীকেই জেলে ভরবে। আমরা মাননীয় রাষ্ট্রপতিকে বলেছি, আমাদের ওখানকার কোনও তদন্তকারী সংস্থার ওপর কোনও ভরসা নেই। এই ঘটনার সিবিআই তদন্ত প্রয়োজন।‘ মমতা বনদ্যোপাধ্যায়ের সরকারের অপসারণ দাবি করে কৈলাস বলেন, ‘যেখানে জনপ্রতিনিধির সুরক্ষা নেই সেই সরকারেরও ক্ষমতায় থাকার অধিকার নেই। এই সরকারকে এখুনি বরখাস্ত করা উচিত। সেজন্য রাজ্যপালের কাছে আপনার রিপোর্ট তলব করা উচিত।‘
রাষ্ট্রপতির কাছে দেওয়া চিঠিতে রাজ্যে হিংসার ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে বিজেপির তরফে। ২০১৮-র পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময়কার হিংসার ঘটনাও তুলে ধরা হয়েছে রাষ্ট্রপতিকে দেওয়া চিঠিতে। পুরুলিয়ার ত্রিলোচন মাহাত ও দুলাল কর্মকারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে চিঠিতে। গত তিন বছরে রাজ্যে ১০৫ বিজেপি নেতা কর্মীকে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিজেপি।

সোমবার ভোরে বাড়ি থেকে কিছু দূরে রাস্তার পাশেই বন্ধ দোকানের সামনে ছাউনি থেকে উদ্ধার হয় হেমতাবাজের বিজেপি বিধায়ক দেবেন্দ্রনাথ রায়ের দেহ। পরিবার সূত্রে জানা যায়, গভীর রাতে কাউকে কিছু না জানিয়েই বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। ঘটনায় খুনের অভিযোগ করে পরিবার ও বিজেপি।
দেবেন্দ্রবাবুর পকেট থেকে সোমবার একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার হয়েছে বলে জানিয়েছেন উত্তর দিনাজপুরের পুলিশ সুপার। তাতে স্থানীয় ২ তৃণমূল নেতার নাম রয়েছে বলে খবর।রাজ্য সরাকার সিআইডিকে ওই ঘটনার তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছে। তারই মধ্যে এদিন নবান্ন জানিয়েছে দেবেন বাবু আত্মঘাতী হয়েছেন বলে প্রাথমিক তদন্তের পর মনে করা হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, মৃতদেহের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট ও পারিপার্শ্বিক প্রমানে আত্মহত্যার ইঙ্গিত মিলেছে। তাঁর নিজে হাতে লেখা সুইসাইড নোট ও পাওয়া গেছে।তবে সব দিক খতিয়ে দেখতে স্বচ্ছ ভাবে তদন্ত চালানো হচ্ছে বলে স্বরাষ্ট্র সচিব জানিয়েছেন।কিন্তু রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ স্তর থেকে আত্মহত্যার তত্বে কার্য়ত শিল মোহর দেওয়ার পরে আর সিআইডি তদন্তের যৌক্তিকতা তাকে কিনা তা নিয়ে সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন উঠেছে।

অন্যদিকে রাজনৈতিক ভাবেও হেমতাবাদের বিধায়কের মৃত্যুকে আত্মহত্যা হিসাবে তুলে ধরতে স্বক্রিয় তৃণমূল। এদিন ময়না তদন্তেের রিপোর্টকে হাতিয়ার করে বিজেপির বরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়েেছে তৃণমূল।রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘দেবেন্দ্রনাথ নাথ রায়ের পোস্ট মর্টেম রিপোর্টকে অবিশ্বাস করে বিজেপি পোস্ট মর্টেমের সঙ্গে যুক্ত ডাক্তার ও তদন্তকারী আধিকারিকদের অপমান করছে । উত্তরপ্রদেশ, গুজরাটের মত পশ্চিমবঙ্গেও বিজেপি মৃতদেহ নিয়ে নোংরা রাজনীতি করতে চাইছে।সরকার এ রাজ্যে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছে, তাই এ রাজ্যে সব বিষয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত হয় ও তদন্তে শাসকদলের নেতা-কর্মীরাও দোষী সাব্যস্ত হন।সিআইডি ও রাজ্য পুলিশ সিবিআইএর থেকে অনেক কর্মদক্ষ । বিজেপি এই বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, রাষ্ট্রপুঞ্জের দ্বারস্থও হতে পারে, কিন্তু আইন আইনের পথেই চলবে।’