রবিবার, ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

পুনে থেকে পাচার চক্রের ৪ চাঁই কে গ্রেপ্তার করে আনলো বারুইপুর জেলা পুলিশ

News Sundarban.com :
ফেব্রুয়ারি ২৯, ২০২০
news-image

 

সুভাষ দন্দ্র দাশ,ক্যানিং

দারিদ্রতার সুযোগে কিংবা বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে গরিব ঘরের নাবালিকা থেকে যুবতীদেরকে ফুঁসলিয়ে নিয়ে গিয়ে দেশের বিভিন্ন পতিতালয়ে বিক্রির রমরমা ব্যবসায় এবার সংগঠিতভাবে এই প্রথম থাবা বসালো বারুইপুর জেলা পুলিশ । বিক্রি হয়ে যাওয়া মহিলাদের উদ্ধারের পাশাপাশি গ্রেপ্তার করে আনা হলো নারী পাচার চক্রের চারজন মাথাকে । শুক্রবার বারুইপুর জেলা পুলিশ সুপারের দপ্তরে বসে পুলিশ সুপার রশিদ মুনির খান এক সাংবাদিক সম্মেলন করে গোটা পাচার চক্রের পর্দা ফাঁস করেছেন । আর্থসামাজিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়া অঞ্চল সুন্দরবন ।প্রতিবছর এই সুন্দরবন এলাকার ক্যানিং,গোসাবা,বাসন্তী, কুলতলি,জয়নগর,জীবনতলা,ঝড়খালি,মৈপীঠ উপকূল সহ জেলার একাধিক থানা এলাকা থেকে উদ্বেগজনক হারে নারী পাচার চক্রের আড়কাঠিদের মাধ্যমে নাবালিকা, যুবতী থেকে গৃহবধুরা কখনো ভালো কাজের লোভে কিংবা বিয়ের ফাঁদে পা দিয়ে প্রতিবছরই পৌঁছে যায় দিল্লি,হরিয়ানা,পুনে কিংবা মুম্বাইয়ের মতন পতিতালয় গুলোতে । বহু থানাতে পরিবারের তরফে অভিযোগ দায়ের হলেও সেই সব নারী বিক্রি চক্রের কিংপিনদের হদিশ পেতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয় জেলা পুলিশকে । তাই এবার বারুইপুর জেলার পুলিশ সুপার রশিদ মুনির খান এই গোটা চক্রের পান্ডাদের ধরতে কোমর বেঁধে নেমে পড়েছিলেন আগেভাগেই । চাঁইদের ধরতে ইতিমধ্যেই দেশজুড়ে বিভিন্ন নারী পাচার বিরোধী বিভিন্ন এনজিওদের সঙ্গে নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে পুলিশ। এবং সেই সূত্রেই গোটা ছক কষা হয় অপারেশনের । আর তার মাধ্যমেই মিলেছে সাফল্য । ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বারুইপুর জেলা পুলিশের একটি দল পুনের পতিতালয় থেকে ৬ জনকে উদ্ধার করে নিয়ে এসেছিল । তার মধ্যে এক যুবতীর বাড়ি ছিল সুন্দরবনের বাসন্তী থানা এলাকায় । সেই যুবতীর কাছ থেকেই এই রাজ্যের দেহ ব্যবসার নামে নারী পাচার চক্রের রমরমা ব্যবসার বিশাল সাম্রাজ্যর দিকটি উন্মোচিত হয়ে যায় । এর পরই পুলিশ সুপারের নির্দেশে চলতি মাসের ২১ তারিখ বারুইপুর মহিলা থানার আইসি কাকলি ঘোষ কুন্ডু ও ক্যানিং মহিলা থানার ওসি মুনমুন চৌধুরী সহ ছয় জন মহিলা ও চারজন পুরুষ পুলিশ কর্মী দল রওনা দেয় পুনের উদ্দেশ্যে । সেই দলেই নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বাসন্তী এলাকার থেকে বিক্রি হয়ে যাওয়া ওই যুবতীটিকে । পুনের ফরাস থানার এলাকাটাই মূলত সব থেকে বড় পতিতালয় হিসেবে পরিচিত । সেখানে থাকা নিউ বিল্ডিং(নেপালি),ওল্ড সাগর বিল্ডিং ও নিউ সাগর বিল্ডিং এই তিনটি চারতলা বিশিষ্ট বহুতলেই এরাজ্যের অধিকাংশ মেয়েকে যৌনদাসী হিসাবে বিক্রি করা হয় তিন থেকে পাঁচ লক্ষ টাকার বিনিময়ে ।প্রতিটি বহুতলে আড়াইশো থেকে সাড়ে চারশো পর্যন্ত পতিতাদের কুঠি বানানো রয়েছে । সেই সব বিল্ডিং গুলিতে অধিকাংশই আবার এ রাজ্যের নাবালিকা ও যুবতীদের রাখা হয়েছে । আর বেশি আছে বাংলাদেশী নেপালিরা । বারুইপুর জেলা পুলিশের বিশেষ দলটি পুনে পুলিশের সাহায্য নিয়ে মোট দশজন করে তিনটি দলে বিভক্ত হয়ে অটোয় চেপে সাধারণ বাসিন্দা সেজে ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে হানা দেয়। প্রায় চব্বিশ ঘন্টা ধরে অপারেশন চালিয়ে কার্যত তিনটি বহুতল থেকে উদ্ধার করেছে পতিতালয়ে বিক্রি হওয়া ২৫ জন বাঙালি মহিলাকে । তাদেরকে স্থানীয় থানার পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার পর মূল অভিযান শুরু করে ওই প্রতিতালয় গুলির পরিচালনার দায়িত্বে থাকা মাদি রেড্ডি ওরফে মাদি নায়েক ওরফে আন্না, সুনিতা নায়েক ওরফে উমাদেবী,শানু তামাং ও বৈজন্তী শিন্দে নামের চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয় । যদিও গ্রেপ্তার করতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছে পুলিশ কর্মীদেরকে । চারিদিক থেকে তাদেরকে ঘিরে ফেলা হয়েছিল ওই পতিতালয় গুলির দায়িত্বে থাকা লোকজন দিয়ে। যদিও পরে পুলিশের সহায়তায় তাদেরকে গ্রেপ্তার করে ট্রানজিট রিমান্ডে নিয়ে আসার পর আরপিএফের সহযোগিতায় বৃহস্পতিবার বারুইপুর আদালতে তোলা হলে তদন্তের স্বার্থে বিচারক মাদি রেড্ডি ও সুনিতা নায়েককে পাঁচদিনের এবং সানু ও বৈজন্তীকে তিন দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন । শুক্রবার তাদেরকে দপ্তরে হাজির করিয়ে পুলিশ সুপার রসিদ মুনির খান সাংবাদিক সম্মেলনে জানান, ‘মূলত মহিলাদেরকে বিয়ে ও কাজের লোভ দেখিয়ে ফুঁসলিয়ে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে দেওয়া হতো পতিতাপল্লীতে। সেখানে তাদেরকে বিক্রি করা হতো চড়া দামে। ধৃত ওই চারজনকে জেরা করে আগামী দিনে এই পাচার চক্রের সঙ্গে জড়িত অন্যান্যদেরকে ও যেমন ধরা হবে,সেই সাথে সাথে উদ্ধার করা হবে বিক্রি হয়ে যাওয়া মহিলাদেরকেও । ‘