শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

অবশেষে নামখানা ব্লকে রাস্তা সংস্করণ করলেন স্থানীয়রা

News Sundarban.com :
সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২২
news-image

ঝোটন রয়, নামখানা:

১২ থেকে ১৩ বছরের এই ইটের রাস্তা কোথাও ইট নেই, কোথাও আবার দুই সাইড বসে গিয়ে মাঝখানে উঁচু হয়ে হয়ে গিয়েছে। কোথাও বা ইটের রাস্তার পাড় ধসে গিয়েছে। বছরের পর বছর পঞ্চায়েত প্রতিনিধিরা দেখলেও তারা কোনোভাবে এই রাস্তা সংস্করণের কোনো উদ্যোগী নিচ্ছেন না। এলাকাবাসীর অভিযোগ, বারংবার পঞ্চায়েতকে এই বিষয়ে জানালেও পঞ্চায়েত প্রধান কোনো কর্ণপাত করেননি।

রাস্তা আছে রাস্তাতেই। চলার অযোগ্য রাস্তাকে চলাচলের যোগ্য রাস্তা করে তুলল এলাকার স্থানীয় মানুষেরা। দক্ষিণ ২৪ পরগনার নামখানা ব্লকের শিবরামপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের এই রাস্তা।

দীর্ঘ ১২-১৩ বছর আগে দোপাট ইটের রাস্তা হলেও কোনোভাবেই এই খারাপ রাস্তা সংস্করণের জন্যই পঞ্চায়েত এগিয়ে আসেনি। স্থানীয় মানুষজন পঞ্চায়েতে বারংবার জানিয়েও তার কোন কাজ হয়নি। অবশেষে ‘নবদিগন্ত ও পুষ্প পাঠাগার’ এর ক্লাবের সদস্য সদস্যরা নিজেদের উদ্যোগে ও নিজেরাই হাতে হাত লাগিয়ে রাস্তা সারাই করলেন।

এই প্রসঙ্গে সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী বঙ্কিমচন্দ্র হাজরা বলেন, ‘নামখানা ব্লকের শিবরামপুর গ্রামে অনেক বড় বড় রাস্তা হয়েছে। এবং দুটো রাস্তার কাজ খুব তাড়াতাড়ি শুরু হবে। কিন্তু এই পালের খেয়া রাস্তাটার ক্ষেত্রে আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি।’

এই প্রসঙ্গে ক্লাবের সম্পাদক দেবব্রত জানা বলেন, ‘এই রাস্তাটি চলাচলের ক্ষেত্রে স্থানীয় মানুষদের খুবই অসুবিধায় পড়তে হয়। আমাদের ক্লাবের ২২ জন সদস্য ও সদস্যা মিলে আমরা এই কাজটি করেছি। প্রায় হাফ কিলোমিটার রাস্তায় পুরনো ইট নিয়ে এসে রাস্তাটি সাড়াই করেছি। সেদিকে তাকিয়ে স্থানীয় মানুষজন যাতে একটু ভালোভাবে চলতে পারে তার ব্যবস্থা করেছি। কিন্তু পঞ্চায়েত যাতে রাস্তাটিকে ঠিকঠাক ভাবে এবং দ্রুততার সহিত মেরামত করে তার ব্যবস্থা করলে ভালো হয়।’

প্রতিদিন হাজারো হাজারো মানুষের যাতায়াত ঘটে এই রাস্তার উপর। স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী থেকে শুরু করে বয়স্ক মানুষজন ও এমনকি অসুস্থ মানুষের চলাচল করতে হয় এই রাস্তার উপর। সাইকেল, ভ্যান, এমনকি অসুস্থ মানুষ জনকে পরিষেবা দিতে অ্যাম্বুলেন্সও ঢোকে। দ্বিতীয় অন্য কোনো রাস্তা নেই বললেই চলে। এমনকি অন্যগ্রাম দক্ষিণ চন্দন পিড়ি যেতে গেলেও এই যাত্রী সাধারণকে এই রাস্তার উপর নির্ভর করতে হয়। ভগ্ন রাস্তা এই বর্ষাকালে যেন পুকুরে পরিণত হয়েছে। ১২ থেকে ১৩ বছরের এই ইটের রাস্তা কোথাও ইট নেই, কোথাও আবার দুই সাইড বসে গিয়ে মাঝখানে উঁচু হয়ে হয়ে গিয়েছে। কোথাও বা ইটের রাস্তার পাড় ধসে গিয়েছে। বছরের পর বছর পঞ্চায়েত প্রতিনিধিরা দেখলেও তারা কোনোভাবে এই রাস্তা সংস্করণের কোনো উদ্যোগী নিচ্ছেন না। এলাকাবাসীর অভিযোগ, বারংবার পঞ্চায়েতকে এই বিষয়ে জানালেও পঞ্চায়েত প্রধান কোনো কর্ণপাত করেননি।

এই প্রসঙ্গে শিবরামপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান গীতা রানী কাঁপ বলেন, ‘স্থানীয়রা বা ক্লাব যদি রাস্তা মেরামতের কাজ করে তো ভালোই করেছে। এতে আমি সাধুবাদ জানাই। আমাদের করতে হলে তো একটা স্কিম ধরেই করতে হবে। তাতে অনেক সময় ও লাগবে । কোনো কাজ করতে গেলে তার একটা সম্মতি নিতে হয়। তাতে সময় লাগে। সেই জন্যই যদি কোনো ক্লাব বা গ্রামবাসীরা সহযোগিতা করেন তার জন্য আমি সাধুবাদ জানাই।’

অন্যদিকে তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা পরিষদের প্রাক্তন সদস্য তথা সমাজসেবী অখিলেশ বারুই বলেন, ‘ওই রাস্তাটা বড়ই খারাপ অবস্থার মধ্য দিয়ে চলছে বলে জনগণ যদি জন উদ্যোগে রাস্তাটি সারায় এতে তো সাধুবাদ জানানো ছাড়া আর অন্য কিছু নয়। আগামী দিনে অন্ততপক্ষে এখানকার মানুষজন তাঁদের নিজেদের প্রয়োজনে নিজেদের উপর দাঁড়িয়ে একটা রাস্তা সংস্কার করেছে এতে কৃতজ্ঞতা জানানো ছাড়া আর কিছু নেই।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘মেন রোড থেকে পালের খেয়া পর্যন্ত তিন কিলোমিটার রাস্তা। প্রধানমন্ত্রী সড়ক যোজনায় পুরো রাস্তাটি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দেড় কিলোমিটার রাস্তা পিচের রাস্তা হয়ে আর দেড় কিলোমিটার সেই ভাঙ্গা ইটের রাস্তাই থেকে গেল।
স্থানীয় মানুষজনের একটাই আশা খুব তাড়াতাড়ি এই রাস্তাটি মেরামত হোক।