শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

পাহাড়, বন্য প্রকৃতি আর আমার শানিত চেতনা

News Sundarban.com :
ডিসেম্বর ১৯, ২০২১
news-image

বিবেকানন্দ বসাক

প্রকাশ শর্মাকে অনেকেই চেনেন না। চেনার কথাও নয়। কিন্তু কিছু কিছু মানুষ অচেনা হলেও মনের সাম্রাজ্যে বড় জায়গা নিয়ে বসে থাকেন। কারণ তাঁরই বাইকে সহযাত্রী হয়ে আমার অভিজ্ঞতার তালিকায় নতুন কিছু সংযোজন হল। ময়নাবাড়ি তুরতুরিখণ্ডের ব্লু-হোমস্টের কর্ণধার রাজকুমার ছেত্রীর শ্যালক তিনি।

কোনও একদিন দুপুর নাগাদ পৌঁছে গেলাম ময়নাবাড়ির রাজকুমারদার লজে। তারপর তড়িঘড়ি প্রকাশের বাইকে চেপে বসলাম। প্রকাশ যেন বিভূতিভূষণের অরণ্যকে আমার মনের স্তরে স্তরে বসিয়ে দিল।

দুপুরের রোদ রায়ডাক রেঞ্জের জঙ্গলের ফাঁক দিয়ে প্রেমিকার চাউনি হয়ে সেঁটে বসে ছিল। গহন অরণ্যের ভেতর দিয়ে কয়েক মাইল বাইকে চেপে ছুটলাম। ‘আহা কী আনন্দ আকাশে বাতাসে…’ বিচিত্র রকমের পাখিদের কলকাকলি থেকে থেকে ভেসে আসছিল। জঙ্গলের বিভিন্ন প্রজাতির গাছের সঙ্গে প্রকাশের অনেক দিনের সখ্যতা।

 

কখনও ওর চোখ দিয়ে সেগুন, হরিতকি, খয়ের, পাইন গাছ দেখছি। তো কখনও শাল, শিরিষ সহ বহু নাম না-জানা গাছের সঙ্গে মিতালি পাতিয়ে নিচ্ছি। গভীর জঙ্গলে কিছু সময় বিরতি নিই। নীরবতার ভেতরেও অরণ্যের ভিন্নরকম অনুভূতি প্রতিভাত হয়। নানান প্রজাতির ঝিঁঝিপোকার ডাক। মাথার ওপর অনন্ত বিস্তৃত আকাশের নীলিমা জঙ্গলকে বুকে চেপে রেখেছে।

প্রকাশ অনেকগুলো গাছের নাম বলল।বোধের দরজা খুলেই রেখেছিলাম। যতটুকু পেলাম৷ কাচিয়ে নিলাম। দূরে ভুটান পাহাড়। দূর মানে এক কিলোমিটারও নয়। প্রতিবেশীর মতো ভুটানের প্রকৃতিও বড়ই আপন। কারণ প্রকৃতি কোনও ভাগাভাগি, ভেদাভেদ বিশ্বাস করে না। তার কাছে সবাই আপন। ফলে এক অপার শান্তি মন জুড়ে বিরাজ করে। এই শানিত চেতনার মধ্য দিয়ে আমরা রায়ডাক নদীর ওপারে পৌঁছলাম।

পরদিন যথারীতি ভুটানঘাট। কালাপাহাড় দর্শন হল। পাহাড় থেকে সবে রায়ডাক নেমে এসেছে। বড়ই মায়াবী রূপ। আমরা ঠিক প্রতিবেশী দেশ ভুটানের মাটিতেই দাঁড়িয়ে ছিলাম। আলিপুরদুয়ার শহর থেকে কতই আর দূর? চল্লিশ কিমি হবে। সকালের নরম রোদের আলোয় সমস্ত প্রকৃতি যেন অনির্বচনীয় সৌন্দর্যে রাঙিয়ে উঠেছে। এখানে না-এলে সকালের চিরাচরিত রোদেলা পরশ মিলবে না।