বৃহস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সিয়াচেনে ইন্দো-চিন সীমান্তের হাড়হিম করা কি গল্প শোনালেন টলিউড অভিনেতা অর্কজ্যোতি রায়

News Sundarban.com :
অক্টোবর ১৮, ২০২১
news-image

ইন্দো-চিন সীমান্তে সিয়াচেনের শুটিংয়ের রোমাঞ্চকর গল্প বিবেকানন্দ বসাককে শোনালেন টলিউড অভিনেতা অর্কজ্যোতি রায়

সিয়াচেনে ইন্দো-চিন সীমান্তের হাড়হিম করা গল্প শোনালেন টলিউড অভিনেতা অর্কজ্যোতি রায়

সিকিমের সিয়াচেন। ইন্দো-চিন সীমান্ত। খুবই স্পর্শকাতর এলাকা। সূর্যের আলো পৌঁছয় না বললেই চলে। টলিউড থেকে শুটিংয়ের সেট পৌঁছে গেল। সঙ্গে টলিউড অভিনেতা অর্কজ্যোতি রায়।

এবার অবশ্য এই টলিউড অভিনেতা হিরোর চরিত্রে ছিলেন না। ক্যামিও চরিত্রে। একটু ডন গোছের ব্যাপার স্যাপার। পরিচালক রাজীব বিশ্বাসের ছবি ‘ক্রাইম’। যেখানে সিয়াচেনের উচ্চতায় এক পাহাড়ি বৃষ্টির মধ্যে চার-পাঁচজন মিলে সুমিত গাঙ্গুলিকে মেরে ফেলবে।ভয়ানক দৃশ্য। গল্পটা পুরোপুরি আন্ডারওয়াল্ডের। রহস্য। খুন। ছবির শুরু থেকে পদে পদে আন্ডারওয়াল্ডের মাফিয়া রাজ। কাহিনি এগিয়ে চলার সঙ্গে সঙ্গে দর্শকের মেরুদণ্ড বেয়ে একটা হিমপ্রবাহ চলতে থাকে।

অভিনেতা অর্কজ্যোতির কথায়, সিয়াচেনে শীত-গ্রীষ্ম বলে কিছু নেই। সবসময়ই মাইনাস ২৮ ডিগ্রি তাপমাত্রা।অর্কজ্যোতি ছিলেন ক্লাইমবারের ভূমিকায়। মূল ক্রিমিনাল রাজা দত্ত। সিয়াচেনে চারদিক সাদা, ধূসর। সূর্যের আলো প্রায় পৌঁছয় না বললেই চলে। তাঁবু খাটিয়ে সেখানেই অভিনয় চলে। আগুন জ্বালিয়ে ক্যাম্পফায়ার করে তবেই শুটিং চলতে থাকে।

গল্পটাকেও পরিচালক রাজীব বিশ্বাস অবশ্য ওইভাবেই সাজিয়েছিলেন।ফার্মাকল ধরে আলো ফেলে শুটিং চলে। তবে সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়েছিল পাহাড়ে ওঠার সময়। সেটের সবারই জল শেষ হয়ে গিয়েছে। এখন উপায়? এদিকে অক্সিজেনের অভাব। তারমধ্যে জলকষ্ট। সবাই যখন টানটান টেনশনে ঘামছে, ঠিক তখনই অর্কজ্যোতি একটা সমাধান বের করলেন। ঝরনার জল পান করার। কিন্তু সেটের কেউই খেতে রাজি নয়।

দার্জিলিঙের ম্যালে হোটেল, গেস্টহাউসে খুব কমবয়সে ম্যানেজারের কাজ করেছিলেন অর্কজ্যোতি। সেই অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে সবাইকে ঝরনার জল পান করার পরামর্শ দেন। অবশেষে অর্কজ্যোতির পথে পা বাড়িয়ে জলতেষ্টা মিটিয়ে নেয় পুরো ইউনিট।

সিয়াচেনে অভিনয় করতে যাওয়া মানেই মাইনাস ২৮ ডিগ্রি তাপমাত্রার সঙ্গে পাঙ্গা লড়তে যাওয়া। ভারতীয় সেনা ছাড়া কোনও জনমানব বাস করে না সিয়াচেনে। খাওয়া দাওয়ার অভাব। স্নান করতে গেলেও সমস্যা।

একতলা থেকে তিনতলায় অর্কজ্যোতির জন্য ফুটন্ত জলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ফুটন্ত জলেই স্নান সেরে ফেলতে হবে। তিনতলায় পৌঁছতে পৌঁছতে সেই জল বয়ফের মতো ঠান্ডা হয়ে গেছে। বালতির জলে একচাকা বরফও জমে গেছে।

অর্কজ্যোতি বলেন, সুপারস্টাররা আরামে বিলাসে জীবনযাপন করেন। কিন্তু ভারতীয় সেনারা কী কষ্টকর জীবনযাপনে অভ্যস্ত। আমি যদি কোনওদিন কারও জন্য কিছু করতে পারি, সেটা ভারতীয় সেনাদের জন্য করতে চাই। সিয়াচেনে খাবার পাওয়া যায় না।

হেলিকপ্টারে খাবার পৌঁছয়। সেনারা বরফ খুঁড়ে গর্ত করে সেখানে থাকে। কাঁচা মাংস আগুনে পুড়িয়ে ঝলসে খায়।যদি ধরে নিই আমি হিরো। আসলে আমরা কাগুজে বাঘ। প্রকৃত হিরো নই। ওরা এই কঠিন শীতের চাদরে মুড়ে গোটা দেশের হয়ে অতন্দ্র পাহারায় রয়েছে।

শুটিংয়ের সময় বিএসএফ বাহিনী বলেছিল, পাহাড়ে উঠবেন না। ওপারে চিনা সেনারাও কড়া পাহারায়। দেখলেই গুলি চালাবে। এই দেশের নাগরিক হিসেবে আমি ভারতীয় সেনাদের শ্রদ্ধা করি। যদি হিরো বা নায়ক বলতে কিছু বোঝায়, সেটা ভারতীয় জওয়ানরাই। আর কেউ নয়। ওরাই আসল হিরো। এই বীর জওয়ানদের স্যালুট।