গ্রামবাসীদের অভিযোগে শশ্মানে নিয়ে যাওয়া দেহ তুলে তদন্তে পুলিশ
নিজস্ব প্রতিনিধি, ক্যানিং – ক্যানসারে আক্রান্ত এক গৃহবধু আগুনে পুড়ে মারা যাওয়ার ঘটনায় শোরগোল পড়ে যায় এলাকায়।সেই মৃতদেহ শ্মশানে নিয়ে যাওয়ার আগেই প্রতিবেশীদের কাছ থেকে গোপন সুত্রে খবর পায় পুলিশ। মৃতদেহ শ্মশানে নিয়ে যাওয়ার মুহূর্তে মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তে পাঠালো পুলিশ।
ঘটনাটি ঘটেছে রবিবার রাতে ক্যানিং থানার ইটখোলা গ্রামপঞ্চায়েতের তালতলা সংলগ্ন উত্তররেদোখালি গ্রামে।মৃতের নাম তরী সরদার(৩৮)। স্থানীয় সুত্রে জানা গিয়েছে গত প্রায় ২৩ বছর আগে ক্যানিংয়ের বাইশসোনা গ্রামের তরী সরদারের সাথে বিয়ে হয় উত্তররেদোখালি গ্রামের পঞ্চম সরদারের। দম্পতি এক পুত্র ও দুই কন্যা রয়েছে।
দিব্যি চলছিল দম্পতির সংসার। আচমকা বছর দুই আগে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন ওই গৃসবধু। চিকিৎসার পর ধরা পড়ে তার গলায় এবং জিভে ক্যানসার হয়েছে।এমন ঘটনায় পরিবারে অন্যান্য সদস্যরা মর্মাহত হয়ে পড়েন। শুরু হয় ওই গৃহবধুর চিকিৎসা। কলকাতার ক্যানসার হাসপাতাল, মেডিকেল এমন কি নীলরতন সরকার হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায় পরিবারের লোকজন।শরীরে বাসা বাঁধা ক্যানসার ছড়িয়ে পড়তে থাকে।
এক সময় চিকিৎসকদের চিকিৎসায় কোন প্রকার সাড়া না পেয়ে বাঁকুড়া ও বীরভূম জেলার বিভিন্ন মন্দিরে নিয়ে যায় ওই গৃহবধুকে। সেখানে ওষুধপত্র খেতে থাকেন।গত এক বছর আগে বিছানা শয্যা হয়ে পড়েন ওই গৃহবধু।চলাফেরা করতে পারতেন না। এমন কি খেতেও পারতেন না।পাশাপাশি প্রতিনিয়ত মুখ দিয়ে লিটার লিটার রক্ত বের হত বলে পরিবারের সদস্যদের দাবী। এছাড়াও প্রতিনিয়ত যন্ত্রণায় কাৎরাতাতেন।
চিকিৎসকদের পরামর্শে ক্ষতস্থানে আগুনের শ্যাঁক দিতে শুরু করেন। এমনই শ্যাঁক দেওয়ার জন্য ওই গৃহবধুর বিছানার পাশে প্রায় ২৪ ঘন্টাই স্টোভ জ্বালা থাকতো। রবিবার সকাল সাতটা নাগাদ তরী দেবী তার শরীরে যন্ত্রণা অনুভব করায় আগুনের শ্যাঁক দিচ্ছিলেন। অসাবধাবশত তার নাইটি তে আগুন ধরে যায়। কাউকে কিছু বলতে পারেন নি।
এমন ঘটনা নজরে পড়ে গৃহবধুর স্বামী পঞ্চমের। তিনি তড়িঘড়ি কাঁথা ভিজিয়ে আগুন আয়ত্বে আনার চেষ্টা করেন। আগুন আয়ত্বে এলেও ওই গৃহবধুর দেহের কিছুটা অংশ পুড়ে যায়। পাশাপাশি তার স্বামীরও বাম হাতের আঙুল পুড়ে যায়।প্রতিবেশী ও পরিবার পরিজনেরা তড়িঘড়ি ওই গৃহবধু কে উদ্ধার করে স্থানীয় তালতলা মোড়ে এক গ্রামীণ চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যায়। প্রাথমিক চিকিৎসার পর সামান্য সুস্থ হতেই ওই গৃহবধুকে বাড়িতে নিয়ে যায়। এরপর সকাল ১০ টা নাগাদ ওই গৃহবধুর মৃত্যু হয়।শোকের ছায়া নেমে আসে এলাকায়। এরপর মৃতদেহ দাহ করার জন্য তোড়জোড় শুরু হয়। বাঁশের খাটিয়া তৈরী করা হয়।
খাটিয়া কে ফুলের মালা দিয়ে সাজানো হয়। পাশাপাশি মৃতদেহের পায়ে আলতা পরিয়ে তার কপালে চন্দনের ফোঁটা দিয়ে সাজানো হয়। শেষযাত্রার জন্য মৃতদেহ নিয়ে পাড়ার লোকজন হরিবোল দিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে শশ্মানের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। ইতিমধ্যে কোন এক প্রতিবেশীর কাছ থেকে গোপন সুত্রে খবর পায় ক্যানিং থানার পুলিশ। তড়িঘড়ি ঘটনাস্থালে হাজির হয় বিশাল পুলিশ বাহিনী।শশ্মানে যাওয়ার পথে আটকে দেয় মৃতদেহ কে। সেখান থেকে মৃতদেহ উদ্ধার করে ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যায়।পরে ঠিক কি কারণে মৃত্যু হল ওই গৃহবধুর তা জানার জন্য মৃতদেহটি ময়না তদন্তে পাঠিয়ে রহস্য উদঘাটনের জন্য তদন্ত শুরু করেছে ক্যানিং থানার পুলিশ।