শনিবার, ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

প্রত্যন্ত সুন্দরবনের বাঘে খাওয়া পরিবারের গুলির পাশে বাসন্তীর দাতা কর্ণ অমল

News Sundarban.com :
অক্টোবর ৩, ২০২১
news-image

নিজস্ব প্রতিনিধি, ক্যানিং —শনিবার প্রত্যন্ত সুন্দরবনে প্রায় পাঁচশো বাঘে খাওয়া পরিবারের  পাশে দাঁড়ালেন বাসন্তীর এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা  ‘সুন্দরবন টাইগার অ্যাফেকটেড ফ্যামিলির(ষ্টাফ)।

উল্লেখ্য সুন্দরবনে বাঘে খাওয়া অসহায়  পরিবার গুলির জন্য সামান্যতম সাহায্যের হাত বাড়াননি কেউই কিংবা তাঁদের খোঁজও রাখেন না কেউই। ব্যাঘ্র বিধবা মা কিংবা তাঁদের সন্তানদের জন্য সরকারী কিংবা বেসরকারী সংস্থা এগিয়ে আসেননি অথবা কোন অনুদান সাহায্য পায়নি। সেইসব বিধবা মা ও তাঁদের অসহায় সন্তানদের কথা চিন্তা করে তাঁদের পরিবারের পাশে ধারাবাহিক ভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলেন সুন্দরবন টাইগার অ্যাফেকটেড ফ্যামিলির কর্ণধার শিক্ষারত্ন প্রাপ্ত প্রাক্তন শিক্ষক তথা সমাজসেবী অমল নায়েক।

অনেক ঝড় ঝাপটা উপেক্ষা করে দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার প্রত্যন্ত সুন্দরবনের বাসন্তী ব্লকের শিবগঞ্জের অমল নায়েক কে এলাকার মানুষ একই বাক্যেই অমল স্যার নামেই চেনেন এবং জানেন। সুন্দরবনের বাসন্তী হাইস্কুলের প্রাক্তন ইংরেজী শিক্ষক অমল বাবু তিনি অনুভব করেছেন “পেটের ক্ষিদের করুণ জ্বালা মেটাতে প্রত্যন্ত সুন্দরবনের জঙ্গলে,নদী খাঁড়ীতে মধু,মাছ,কাঁকড়া সংগ্রহ করতে গিয়ে যেভাবে বাঘের আক্রমনে মারা গিয়েছেন কিংবা বাঘের খাদ্যে রুপান্তরিত হয়েছেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সরকারি তরফ থেকে কোনরুপ ক্ষতিপূরণ পাননি এই সব বাঘে আক্রান্ত পরিবার গুলি। পেটের তাগিদে সংসারের হাল ধরতে বিকল্প কর্মসংস্থান না থাকায় বাধ্য হয়ে সুন্দরবনের জঙ্গলে মাছ কাঁকড়া মধু সংগ্রহ করতে গিয়ে বাঘের পেটে গিয়েছেন গৌর,মঙ্গলরা। একের পর এক বাঘের পেটে যেতে যেতে এক সময় বিধবা গ্রামে তৈরী হয়ে গিয়েছে প্রত্যন্ত সুন্দরবনের গোসাবায়। স্বামীকে হারিয়ে ছেলে-মেয়েদের কে নিয়ে একাধিক সমস্যায় জর্জরিত  বিধবা মায়েরা। সংসারের জোয়ালের চাপে অনেকের অার পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গেছে।

সেই সব অসহায় হতদরিদ্র প্রায় তিনশ পরিবারের হাতে তুলে দিলেন পড়াশোনার যাবতীয় খরচ,বইপত্তর,জামাকাপড়,মশারী সহ প্রচুর পরিমাণ খাদ্যদ্রব্য। পশুপালন করে সংসার চালানোর জন্য দিয়েছেন ছাগল,হাঁস,মুরগী।

এতে করে কি ঐ অসহায় পরিবার গুলির সমস্যা সমাধান হবে?তাই একটু ভিন্ন ধরনের চিন্তাভাবনা করে সেই সব বাঘে খাওয়া বিধবা মা এবং পরিবারের ছেলে মেয়েদের কে  হাতের কাজের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে তাঁদের কে স্বাবলম্বী করার পাশাপাশি মাসিক রেশন ব্যবস্থা চালু করেন অমল বাবু।

প্রাথমিক ভাবে ঝড়খালিতে শুরু করলে ও বর্তমানে গোসাবা,কুলতলি,বাসন্তী এলাকার প্রায় পাঁচশো পরিবার কে এই রেশন ব্যবস্থার আওতায় এনে চাল,ডাল,তেল সহ অন্যান্য নিত্য সামগ্রী দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন।শনিবার দুপুরে ঠিক সেই ভাবে বাঙালীর প্রিয় উৎসব দুর্গাপূজার আগেই ঐ অসহায় পরিবার গুলির হাতে টাকা,নতুন বস্ত্র সহ খাদ্য সামগ্রী তুলে দেন এক মিলন উৎসবের মাধ্যমে।পাশাপাশি অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে মৎস্যজীবি বিধবা মায়েরা সরকারের কাছে দাবী করেন বাঘের আক্রমণে আর কত মৃত্যু মিছিল চলবে?সরকার কে বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা করতে হবে,সুন্দরবন কে বাঁচাতে হবে। সুন্দরবনের নদী বাঁধ রক্ষা করতে হবে। আমাদের ছাদ যুক্ত পাকা বাড়ি চাই।”

এদিন এই মিলন উৎসবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট চিকিৎসক ডাঃ পূর্ণেন্দু রায়,অভিনেতা জ্যাক(দীপাঞ্জন ভট্টাচার্য),রোটারিয়ান সুদীপ দে,প্রাক্তন শিক্ষক তথা সুন্দরবনের প্রাবন্ধিক প্রভুদান হালদার সহ বিশিষ্টরা।

অমল বাবু বলেন “পরিবারের উপার্জকারী কর্তার অকাল মৃত্যু হলে সেই পরিবারের যে কি হাল হয় তা স্বচক্ষে উপলব্ধি করেছি। তাই প্রত্যন্ত সুন্দরবনের জঙ্গলে বাঘের আক্রমনে যে সমস্ত পরিবার গুলি অনাথ হয়ে গেছে তাঁদের পাশে সামান্যতম সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়ে সহযোগিতার চেষ্টা করেছি। আগামীদিনে আরো বেশী সংখ্যক অসহায় বাঘে খাওয়া পরিবারকে সহযোগিতা করতে পারি তার চেষ্টা করবো”।

অসহায় বাঘে খাওয়া বিধবা মা এবং তাঁদের সন্তানরা বলেন “শিক্ষক অমল বাবু সব সময় যে ভাবে আমাদের পরিবার গুলোকে সাহায্য সহযোগিতা করেন তা অতুলনীয় ,তিনিই আমাদের অন্তরাত্মা কলির দাতা কর্ণ অমল নায়েক। তিনি এবং তাঁর ‘সুন্দরবন টাইগার অ্যাফেকটেড ফ্যামিলি’(STAF) পাশে না দাঁড়ালে আমরা হয়তো প্রাণে বাঁচতাম না। তিনি আমাদের হৃদয় জুড়ে চিরস্মরনীয় থাকবেন। ”