শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

জননেতাদের দেশপ্রেম কে হার মানিয়ে দেবেন বাসন্তীর চা বিক্রেতা উত্তম 

News Sundarban.com :
সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২১
news-image

বিশ্লেষণ মজুমদার,ক্যানিং – জননেতাদের দেশপ্রেম কে হার মানিয়ে দেবেন সামান্য এক দরিদ্র চা বিক্রেতা।তাঁর ছোট্ট চায়ের দোকানে চা খেতে গেলেই দৃষ্টি পড়বে দোকানের মধ্যে অতি যত্নে রাখা আছে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামী,বিপ্লবী এবং মহামানবদের ছবি।

দোকানের সরঞ্জামের তুলনা মহামানবদের ছবির সংখ্যাটাই অনেক অনেক বেশি। কে নেই?রয়েছেন দেশবরেণ্য নেতাজী সুভাষ চন্দ্র,ক্ষুদিরাম,ইন্দিরা গান্ধী,ভগত সিং,ডাঃ বিধান চন্দ্র রায়, রবীন্দ্র নাথ ঠাকুর,ভগিনী নিবেদিতা,মাদার টেরিজা,মাইকেল মধুসূধন দত্ত,বিদ্যাসাগর,কবি নজরুল,স্বামী বিবেকানন্দ,কবি সুকান্ত সহ অন্যান মহামানবের ছবি।এমনই দেশপ্রেমিকের চায়ের দোকান রয়েছে প্রত্যন্ত সুন্দরবনের বাসন্তী ব্লকে সোনাখালি বাজারে।দোকানের মালিক উত্তম ঘরামী। তার বাড়ি ৭ নম্বর সোনাখালি এলাকায়।উত্তম একেবারেই নিরক্ষর।দরিদ্র পরিবারের এই সন্তান পেট চালানোর জন্য সোনাখালি বাসষ্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকায় সরকারি জায়গার উপর একটি ঝুপড়ির মধ্যে চায়ের দোকান খুলে বসেন।কোন দেবদেবী ছাড়াই চায়ের দোকানে প্রথমেই নেতাজীর একটি বড় ছবি দেবতার আসেন রাখেন ওই যুবক।

সকালে দোকান খুলেই প্রথমে ছবি ঝাড়পোছ করে ফুল দিয়ে শুরু করেন চা বিক্রির কাজ।এমনটা দীর্ঘ প্রায় পঁয়ত্রিশ বছর ধারাবাহিক ভাবে করে আসছেন। এরপর ধীরে ধীরে দেশবরেণ্য নায়কদের ছবি সংগ্রহ করে দোকানে রাখেন উত্তম। প্রথম দিকে অনেকেই হাসি ঠাট্টা বিদ্রূপ করেছেন উত্তম কে। কিন্তু তাতে করেও কোন ভাবে ভেঙে পড়েন নি।বছর খানেক চায়ের দোকান চালানোর পর উত্তম বিয়ে করেন জীবনতলা থানার মঠেরদিঘী এলাকার আশালতা কে।

স্ত্রী’র দৌলতে আরো দেশনায়কদের জীবনী জেনে ফেলেন উত্তম। স্ত্রীর সহযোগে দোকানে ছবির সংখ্যাও বাড়তে থাকে দিন দিন।ধীরে ধীরে সামান্য লেখাপড়াও শিখে ফেলেন চা বিক্রেতা ওই যুবক। তার এক ছেলে ও এক মেয়ে।চায়ের দোকান চালিয়ে ছেলেমেয়েদের কে শিক্ষিত করে মানুষ করেছেন।ছেলেমেয়ে এবং স্ত্রীর সাহায্যে উত্তমের দোকানে ঠাঁই হয়েছে আরো অনেক অনেক মহামানবের।তবে চা বিক্রেতার এমন কর্মকান্ড কে যে বা যারা একদা উপহাস্য করতেন বর্তমানে তারাই এখন উৎসাহ যোগায় উত্তম কে। এছাড়াও শিক্ষিত মানুষজন চায়ের দোকানে চা খেয়ে চা বিক্রেতার এমন দেশপ্রেম কে কুর্ণিশ জানিয়ে যায়।

তবে উত্তমের আপেক্ষ যদি কোনদিন দোকান টি ভেঙে ফেলে,তবে ছবি গুলো বাড়িতে নিয়ে গিয়ে রাখবো এবং প্রতিদিনই ফুল দেবো ছবির মূর্তিতে।

উত্তমের এহেন দেশপ্রেম কে কুর্ণিশ জানিয়েছে সুন্দরবনের সমাজসেবী ফারুক আহমেদ সরদার।তিনি বলেন সামান্য একজন দরিদ্র চা বিক্রেতার যে দেশপ্রেম তা তুলনাহীন।