শনিবার, ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

আবার বাঘের আক্রমণে সুন্দরবন জঙ্গলে মৃত্যু মৎস্যজীবী

News Sundarban.com :
জুন ৯, ২০২১
news-image

ভাষ্কর দাশ, ক্যানিং 

আবার ক্ষুধার্ত বাঘের আক্রমণে মৃত্যু হল এক মৎস্যজীবীর। ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার সকালে প্রত্যন্ত সুন্দরবনের গোসাবা ব্লকের সুন্দরবন কোষ্টাল থানার মরিচঝাঁপি জঙ্গলে।মৃতের নাম সুনীল সরদার(৩৫)।

স্থানীয় সুত্রে জানা গিয়েছে গত ২৬ মে ইয়াসের তান্ডব আর জলোচ্ছ্বাসে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সুন্দরবন উপকুলবর্তী এলাকা।সেই সমস্ত এলাকার মানুষজন অসহায় হয়ে পড়েছেন। সরকারী এবং বেসরকারী ত্রাণের উপর নির্ভর করে চলতে হচ্ছে ওই সমস্ত দুর্গত পরিবার গুলোকে।আবার প্রবল জলোচ্ছ্বাসে সমগ্র সুন্দরবনের গহীণ জঙ্গল প্লাবিত হয়ে মিষ্টি জল ও খাদ্য সংকটে পড়েছে সুন্দরবনের রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারও। গত কয়েকদিন আগেই একটি বাঘের মৃত্যুও হয়।সম্ভবত খাদ্য ও মিষ্টি জলের অভাবে এমনটাই ঘটেছে।

অন্যদিকে সামান্য ত্রাণে সংসার না চলায় পেটের তাগিদে বাধ্য হয়ে ইয়াস দুর্গত মৎস্যজীবীরা সুন্দবরন জঙ্গলে মাছ কাঁকড়া ধরে অতিরিক্ত উপার্জনের দিকে ঝুঁকছে।

বুধবার সকালে সুন্দরবনের গোসাবা ব্লকের কুমিরমারী বুধবার বাজার সংলগ্ন এলাকার মৃধাপাড়ার মৎস্যজীবী সুনীল সরদার প্রতিবেশি মৎস্যজীবী কার্তিক মন্ডল ও তার ছেলে রাজু মন্ডল কে সাথে নিয়ে সুন্দরবনের মরিচঝাঁপি জঙ্গল এলাকার নদীখাড়িতে কাঁকড়া ধরতে রওনা দিয়েছিলেন।হাতে টানা নৌকা বেয়ে তারা পৌঁছে যায় সেখানে। তারা নৌকা থেকে নেমে আপন মনে কাঁকড়া ধরার কাজ করছিলেন।একসময় কাঁকড়া ধরার নেশায় আনন্দ কোন কিছুই খেয়াল ছিল না তাদের।সেই সময় জঙ্গলের একটি ক্ষুধার্ত বাঘ সুনীলের উপর কঠোরভাবে নজর রাখছিল।নাগালের মধ্যে পেয়ে যেতেই সুযোগ বুঝে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ঘাড়ে থাবা বসিয়ে টানতে টানতে গভীর জঙ্গলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।অপর দুই মৎস্যজীবী বাবা ও ছেলে আচমকা বাঘের আক্রমণে হতভম্ব হয়ে যায়। কয়েক মিনিট পর সম্বিৎ ফিরতেই সুনীল কে বাঘের মুখ থেকে ছাড়িয়ে আনার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ে।কাঁকড়া ধরার শিক নিয়ে শুরু হয় বাঘে মানুষের মরনপণ লড়াই। দীর্ঘ প্রায় ঘন্টা খানেক রুদ্ধঃশ্বাস লড়াইয়ের পর ক্ষুধার্ত বাঘ বেগতিক বুঝে রণে ভঙ্গ দেয়। শিকার ছেড়ে পালিয়ে যায় সুন্দরবনের গভীর জঙ্গলে।এরপর আক্রান্ত মৎস্যজীবী কে জীবন্ত অবস্থায় বাঘের মুখ থেকে বাঁচিয়ে কোন রকমে নৌকা তোলে সঙ্গীরা। চিকিৎসার জন্য নৌকা বেয়ে তড়িঘড়ি গ্রামের উদ্দেশ্য পাড়িদেয়।গ্রামে পৌঁছানের আগেই অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণেই মৃত্যু হয় ওই মৎস্যজীবীর। মৃতদেহ নিয়ে গ্রামের বাড়িতে ছেলে পৌঁছালে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে।

কার্তিক মন্ডল বলেন “সকলে মিলে আপনমনে কাঁকড়া ধরার জন্য দোন(সুদ) ফেলছিলাম নদীতে। কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই আচমকা সুনীল কে আক্রমণ করে ঝাঁপিয়ে পড়ে একটি বাঘ।বাঘের মুখ থেকে ছাড়িয়ে আনতে পারলেও শেষ রক্ষা হল না। সুনীলের স্ত্রী ও এক নাবালিক মেয়ে রয়েছে। বড় অসহায় হয়ে পড়লো তারা।”

উল্লেখ্য ইয়াস পরবর্তী মাত্র ৯ দিনে পরপর তিনজন মৎস্যজীবী বাঘের আক্রমণে নিহত হলেন।