বৃহস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

হাসাতে হাসাতে বিদ্রোহ আর বিপ্লব করেছেন চার্লি চ্যাপলিন

News Sundarban.com :
এপ্রিল ১৬, ২০২১
news-image

‘আই অলওয়েজ লাইক ওয়াকিং ইন দ্য রেইন। সো নো ওয়ান ক্যান সি মি ক্রাইং’।
মানুষটা নাকি বৃষ্টিতে কাঁদতে ভালোবাসত। যাতে কেউ তাঁর চোখের জল দেখতে না পায়। চার্লি চ্যাপলিন কখনোই তাঁর চোখের জল কাউকে দেখাতে চাননি। সেটা সফলভাবে গিলে ফেলে কেবলই হাসাতে চেয়েছেন। চ্যাপলিনের মতে, যে দিনটি হাসা হলো না, সেদিনটি বৃথাই গেল। তাই তিনি জীবনভর হাসিয়েছেন। আর দর্শকও হাসতে হাসতে কখন যে কেঁদে ফেলেছেন, টের পাননি। হাসাতে হাসাতেই তিনি কষে চড় লাগিয়েছেন পুঁজিবাদের গালে। হাসাতে হাসাতেই তিনি দেখিয়েছেন বৈষম্য আর বঞ্চনার শুষ্ক বাস্তবতাকে।

চার্লি চ্যাপলিন

এই যেমন ‘সিটি লাইট’স সিনেমায় দেখা গেল শহরের নতুন উন্মোচিত বিশাল, উঁচু স্থাপত্যের কোলে পথের কালিঝুলি মাখা অনাড়ম্বর মানুষের জড়সড় দারিদ্র্য। এই দুয়ের মাঝে যে বিশাল ফাঁক, চার্লি কমেডির মাধ্যমে সেটাকে যেভাবে কটাক্ষ করেছেন, আর কেউ কোনো দিন তা পারেনি। সে এক বৈপ্লবিক মহাকাব্যের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়! কমেডি করতে করতেই চ্যালপিন এক ফাঁকে বিপন্ন মানুষের দুঃখের কথা যেভাবে ঢেলেছেন, তা অনবদ্য। তাই চ্যাপলিন কেবল কমেডিয়ান নন, তিনি শিল্পী; মহান শিল্পী। যিনি হাসাতে হাসাতে বিদ্রোহ আর বিপ্লব করেছেন।

কোথায় নেই চ্যাপলিন

হাসি শেষে নিজের অলক্ষ্যে বিভ্রান্তিতে ঢুকে পড়া দর্শক গালে হাত দিয়ে ভাবতে বাধ্য হয়েছেন, এই কী হলো! সে রাতে ঘুমের একটা ভাগ দিতে হয়েছে ভাবনাকে। শিল্পের ভেতর দিয়ে যে প্রেমপত্র তিনি লিখেছিলেন, সেই প্রেমপত্র আজও পড়া শেষ হয়নি বিশ্ববাসীর। আজ সেই মহান শিল্পীর জন্মদিন। বেঁচে থাকলে আজ তিনি হতেন এক শ বত্রিশ। অবশ্য তাঁর মতো শিল্পীর বেঁচে থাকার জন্য এ বড় ক্ষুদ্র সংখ্যা।

লাইমলাইট সিনেমায় চার্লি চ্যাপলিন। ১৯৫২ সালের এই ছবিটি যুক্তরষ্ট্রে মুক্তি পায় ১৯৭২ সালে। কেননা, ১৯৫২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে চ্যাপলিনকে নিষিদ্ধ করা হয়।

লাইমলাইট সিনেমায় চার্লি চ্যাপলিন। ১৯৫২ সালের এই ছবিটি যুক্তরষ্ট্রে মুক্তি পায় ১৯৭২ সালে। কেননা, ১৯৫২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে চ্যাপলিনকে নিষিদ্ধ করা হয়। 

সুইজারল্যান্ডে ‘চ্যাপলিনস ওয়ার্ল্ড’ বলে একটা জাদুঘর আছে। পুরো জাদুঘরটি চ্যাপলিনের স্মৃতিতে ঘেরা। এই এখানে নড়াচড়া করছেন চ্যাপলিন! আবার ওখানে চুলোর হাঁড়িতে জুতা সেদ্ধ করে, প্লেটে বেড়ে, কাঁটা চামচ দিয়ে খাচ্ছেন চার্লি। জুতার ফিতাকে চামচের সঙ্গে নুডলসের মতো পেঁচিয়ে, পেরেকগুলোকে চিকেন ফ্রাইয়ের হাড্ডির মতো আয়েশ করে চুষে চুষে খাচ্ছেন। ‘দ্য গোল্ড রাশ’ সিনেমার এই অসাধারণ দৃশ্য যে দেখেনি, সে যে কী দেখেনি, তা সে জানে না! কিন্তু এই দৃশ্য শেষে স্বতঃস্ফূর্ত হাসির মাঝেই হু হু করে মনের কোণে উঁকি দেবে একটা প্রশ্ন, এ কী ক্ষুধা!