শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বর্ণবাদী মন্তব্যের প্রতিবাদে মাঠ ছেড়েছিলেন নেইমাররা, বর্ণবাদের কোনো প্রমাণ পায়নি উয়েফা

News Sundarban.com :
ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২১
news-image

সে ঘটনায় রীতিমতো তোলপাড় হয়ে গিয়েছিল। গত ডিসেম্বরে চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচ খেলতে নেমেছিল প্যারিস সেন্ট জার্মেই। ইস্তাম্বুল বাশাকশেহিরের বিপক্ষে সেদিন মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ ছিল পিএসজির। একই সময়ে চলছিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও লাইপজিগের ম্যাচ। চ্যাম্পিয়নস লিগে গ্রুপ পর্ব থেকে পরের রাউন্ডে যাওয়া হবে কি না, সেটি তখনো অনিশ্চয়তায় মোড়ানো ছিল পিএসজির।

৮ ডিসেম্বর এমন এক ম্যাচে মাত্র ১৪ মিনিট শেষেই মাঠ থেকে বের হয়ে গিয়েছিলেন নেইমার-এমবাপ্পেরা। অভিযোগ ছিল, মাঠের রেফারি বর্ণবাদী আচরণ করেছেন। ম্যাচের চতুর্থ রেফারি ইস্তাম্বুল বাশাকশেহিরের সহকারী কোচকে ‘নিগ্রো’ বলেছিলেন।

বাশাকশেহিরের কোচের প্রতি রেফারির করা বর্ণবাদী মন্তব্যের প্রতিবাদে তুরস্কের ক্লাবটির খেলোয়াড়েরা তো মাঠ ছেড়েছেনই, মাঠ ছেড়েছেন নেইমার-এমবাপ্পেসহ পিএসজির সব খেলোয়াড়ও। সে ঘটনায় এত দিন তদন্ত চলছিল। সে তদন্তে বর্ণবাদের কোনো প্রমাণ পায়নি ইউরোপিয়ান ফুটবল নিয়ন্ত্রক সংস্থা উয়েফা।

পিএসজির মাঠে সেদিন ম্যাচের চার অফিশিয়াল—রেফারি, দুই সহকারী রেফারি ও চতুর্থ রেফারি সবাই ছিলেন রোমানিয়ান। ১৪তম মিনিটে রেফারিকে কিছু একটা বোঝাতে গিয়ে বাশাকশেহিরের সহকারী কোচ ও সাবেক ক্যামেরুন ফরোয়ার্ড পিয়ের ওয়েবোকে দেখিয়ে চতুর্থ রেফারি সেবাস্তিয়ান কোলতেসকু ‘ওই কালো লোকটা’ বলে সম্বোধন করেন বলে অভিযোগ করা হয়েছিল। রোমানিয়ান ভাষায় ‘নিগ্রো’ শব্দটি নাকি উচ্চারণ করেছিলেন কোলতেসকু। সেটি বুঝতে পেরেই রেগে যান ওয়েবো। ‘সে কালো লোক বলতে পারে না’ বলে চেঁচাতে থাকেন!

বাশাকশেহিরের ডেম্বা বা রেফারির কাছে কৈফিয়ত চান, ‘আপনি যখন কোনো শ্বেতাঙ্গ ব্যক্তিকে ডাকেন, তখন তো বলেন না “ওই যে সাদা লোকটা”। আপনি তখন বলেন, “ওই লোকটা।” তাহলে কালো ব্যক্তির ক্ষেত্রে কেন “কালো লোকটা” বলছেন?’ কোলতেসকু তখন বলেন, ‘আমরা একে অন্যের সঙ্গে রোমানিয়ান ভাষায় কথা বলছিলাম।’
পিএসজি ডিফেন্ডার প্রেসনেল কিমপেম্বে এ সময় যোগ দেন, ‘তিনি সত্যিই এটা বলেছেন? তাহলে আর কথা নয়! আমরা ড্রেসিংরুমে চলে যাচ্ছি।’ মিনিট দশেক এ নিয়ে তর্কবিতর্কের পর দুই দলের খেলোয়াড়েরা মাঠ ছেড়ে যান।

দুই মাস পর তদন্তে জানা গেছে, কোলতেসকু ও সহকারী রেফারি সভ্রে বর্ণবাদী আচরণ করেছেন—এমন কোনো প্রমাণ মেলেনি। কোনো শাস্তিও পাচ্ছেন না কেউ। রোমানিয়ান ফুটবল সাংবাদিক এমানুয়েল রোসু এ ব্যাপারে টুইট করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘রোমানিয়ান পত্রিকা পিআরও স্পোর্টসের তথ্যানুযায়ী পিএসজি ও বাশাকশেহিরের ম্যাচে রোমানিয়ার রেফারিদের সংক্রান্ত ঘটনায় উয়েফার তদন্তে কোনো বর্ণবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় জড়িত কোরতেসকু, সভ্রে বা ওকান বুরুকের (বাশাকশেহিরের সে সময়কার কোচ) কোনো শাস্তি হচ্ছে না।’ ওই ঘটনায় বুরুক বলেছিলেন, ‘আমাদের দেশে রোমানিয়ানদের জিপসি ডাকা হয়। তাই বলে তো আমি তাদের জিপসি বলতে পারি না।’ এ নিয়েও তদন্ত হয়েছিল।

আরেকটি টুইটে রোসু বলেছেন, ‘উয়েফার রিপোর্ট অনুযায়ী বলা হয়েছে, কোনো বর্ণবাদ হয়নি। রোমানিয়ান রেফারি ওয়েবোকে দেখাতে “নিগ্রো” শব্দটা ব্যবহার করেছেন। রোমানিয়ান ভাষায় এ শব্দ কোনো নেতিবাচক অর্থে ব্যবহার করা হয় না।’

অথচ দুই মাস আগে এ ঘটনায় ম্যাচ এক দিন পেছাতে বাধ্য হয়েছিল উয়েফা। এমনকি এ ঘটনায় সাধুবাদও দেওয়া হয়েছিল সংস্থাটির পক্ষ থেকে। এমবাপ্পে-নেইমাররা এই রেফারিদের অধীনে খেলবেন না বলে জানিয়ে দেওয়ায় নতুন চার অফিশিয়াল নিয়ে ম্যাচ আয়োজন করেছিল উয়েফা। সে ম্যাচ ৫-১ গোলে জিতে গ্রুপ পর্ব শীর্ষে থেকে শেষ করেছিল পিএসজি।