মঙ্গলবার, ১৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

নয় উঠোনের বারো দুয়ার

News Sundarban.com :
ফেব্রুয়ারি ৭, ২০২১
news-image

মহিবুল আলম
নয় উঠোনের বারো দুয়ার

গোমতি বাণের উজানে আরিচা নামের একটা উপনদী-
বুবুদের নয় উঠোনের গল্প হয়তো তোমাকে বলিনি।
আরিচার মৃত্যুর মতো বুক উঁচিয়ে বুবুরা বেলা অবেলায়
দিঘল উঠোন পেরিয়ে দিঘল বেলায় হাঁটত।
প্রতিদিন সন্ধ্যাবেলা গোধূলির আলো গায়ে মেখে একটা লোকাল ট্রেন
কুঁউ ঝিঁক ঝিঁক, কুঁউ ঝিঁক ঝিঁক, খটাশ খটাশ শব্দ করে
বিজাতীয় আর্তনাদে আরিচা স্টেশানে থমকে দাঁড়াতো। কিছু যাত্রি নামতো-
কয়েকজন বোঁচকাপাটি নিয়ে প্রাণান্তর ট্যাঁ ট্যাঁ করা এঁদো ছেলেকে টানতে টানতে
হেঁচড়াতে হেঁচড়াতে ট্রেনের গতরে এক এক করে নিজ শরীরটা ঠেলে দিত।
তারপর ট্রেন ছোটত-
ট্রেনের গতি ছিল শকুনের আঁচড় খাওয়া বুকের মতন
শুরুতেই ঝড় উঠত না।

আরিচার ঠিক পশ্চিমে দিঘল ভাটিতে ধোঁয়া ওঠা সন্ধ্যায় বুবুরা
শরীরে কাপড় পেঁচিয়ে শীতল জলে তির তির দেহ ভিজাত।
দীর্ঘ ছায়া ছিল। রূপ ছিল সোনামুখী সুঁইয়ের মতো। চুল আর
খসে পড়া বুক নিয়ে খলবল বুবুদের ডাক- ‘ওরে অই মাঝি, মহাজন কেডা?’
দূর গাঁও থেকে সারি সারি সেই মহাজন-
শরীরে নৌকোর দুলুনি, কোমরে টাকার খুলতি, কীসব শতাংশের ভাগ!
ফিরতি ট্রেনের বগি উগলেও কিছু মহাজন পানের পিক ফেলে আলুথালু শরীরে নামত।
স্টেশানটা ছিল বুবুদের নয় উঠোনের ঠিক বারো দুয়ারের পরে।
রাতভর স্টেশানের হল্লা করা গান-
বুবুরাও গান বাঁধত।

নতুন বুবুরা মধ্যরাতে মহাজনের খামচানো নখে রাত ভোর হওয়া অবধি
গানের বেহাল শরীরে শরীর মিলিয়ে অনবরত কাঁদতো- ‘ইঁই-ইঁ!’…
শতবছরের পুরাতন পুথির মতোই যেন বুবুদের নয় উঠোনের বারোটি দুয়ার।