শনিবার, ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

মাতলা নদীর উপর রেলব্রীজের কাজ সমাপ্ত করে রেললাইন সম্প্রসারণের দাবীতে সোচ্চার সুন্দরবনের চিন্তাবিদ

News Sundarban.com :
জানুয়ারি ১৯, ২০২১
news-image

নিউজ সুন্দরবন ডেস্ক: ক্যানিংয়ের মাতলা নদীতে অর্ধসমাপ্ত রেলব্রীজ ও সুন্দরবনের আর্থ সামাজিক মান উন্নয়ণের জন্য বিভিন্ন দাবী নিয়ে মঙ্গলবার পথে নামলেন সুন্দরবনের চিন্তাবিদ ফারুক আহমেদ সরদার।এদিন সকালে মাতলাব্রীজ, অর্ধসমাপ্ত রেলব্রীজ সহ সুন্দরবনের বিভিন্ন প্রান্তে পোষ্টার সাঁটিয়ে পথে নামেন ফারুক।তিনি জানিয়েছেন সুন্দরবনবাসীর দীর্ঘদিনের অপূর্ণ দাবি সুন্দরবনের উন্নয়নে আর্থিক ও সামাজিক উন্নয়ণের স্বার্থে সুন্দরবনের সিংহ দুয়ার ক্যানিং-বাসন্তী রেল ব্রিজ দ্রুততার সঙ্গে বাজেটে বরাদ্দ করে কেন্দ্র-রাজ্য সমন্বয়ে অবিলম্বে রেল ব্রিজের কাজ সম্পন্ন করা। রেলব্রীজ চালু এবং সুদূর সুন্দরবনের ঝড়খালি,গদখালি পর্যন্ত রেলপথ সম্প্রসারণ হলে এলাকায় কর্মসংস্থান ,শিক্ষা, চিকিৎসা, ব্যবসায়িক, যোগাযোগ এমন কি পর্যটন উন্নয়ণে ব্যাপক ভাবে উন্নত হবে এলাকা।কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারে দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।সুন্দরবনবাসীর সুবিধার্থে মাতলা নদীতে অর্ধসমাপ্ত রেলব্রীজের কাজ সমাপ্ত করে রেলপথ সম্প্রসারণ করা অত্যন্ত জরুরী।’

উল্লেখ্য পৃথিবীর মানচিত্রে সেরা বৃহত্তম ব-দ্বীপ,জল জঙ্গলে ,নদীনালা বেষ্টিত বাদাবন বিশ্বের অন্যতম হিংস্র সেরা বয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের বাসভুমি,পর্যটন মানচিত্রে অপরিসীম গুরুত্বপুর্ণ অন্যতম স্থান সুন্দরবন।

 

স্বাধীন ভারতের ৭৪ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরও আজও অবহেলিত প্রত্যন্ত সুন্দরবনের যোগাযোগ ব্যবস্থা।১৯ টি ব্লক নিয়ে গঠিত সুন্দরবন। যেখানে প্রায় ৫০ লক্ষের অধিক মানুষের বসবাস। যাঁদের যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হতে পারতো রেল যোগাযোগ। একদিকে পর্যটনপ্রেমীরা সহজেই সুন্দরবনে পৌঁছে যেতে পারতেন এবং অতি সহজেই সুন্দরবনের মানুষের অার্থসামাজিক পরিকাঠামো ঊল্লেখ যোগ্য ভূমিকা পালন করতে পারতো। যদিও বহু দেরীতে রেললাইন সম্প্রসারণের দাবী উঠেছে। ২০০৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর তৎকালীন লোকসভার অধ্যক্ষ সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়  দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার সুন্দরবনের বাসন্তী ব্লকের একটি অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন।তৎকালীন সুন্দরবন উন্নয়ন পর্ষদের এক সদস্য “লক্ষাধিক সুন্দরবনবাসীর গণস্বাক্ষর সম্মিলিত ক্যানিং-সোনাখালি রেললাইন সম্প্রসারনের আবেদন পত্র তুলে দিয়েছিলেন লোকসভার অধ্যক্ষ সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের হাতে। দিল্লীতে ফিরে সোমনাথ দবাবু ২ জানুয়ারী ২০০৯ এ তদান্তীন রেলমন্ত্রী লালু প্রসাদ যাদব কে চিঠি লিখেছেলেন এই রেলপথের গুরুত্ব বুঝে। পরবর্তী সময়ে কেন্দ্রের সরকার পরিবর্তন হয় এবং বর্তমান রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তদান্তীন রেলমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী ২০০৯ এর ১৪ নভেম্বর ব্যাপক ঢাকঢোল পিটিয়ে মাতলা নদীর উপর রেলব্রিজের শিলান্যাস করে কাজ শুরু করেছিলেন। সেই মুহুর্তে বহু মানুষের দোকান,ঘর,বাড়ী ভাঙা হয় । ক্ষতিগ্রস্থ হয় বহু মানুষ। তা সত্বেও সাধারণ মানুষজন নির্দ্ধিদায় আনন্দের সাথে মেনে নিয়েছিলেন প্রত্যন্ত সুন্দরবনে রেল সম্প্রসারনের কথা চিন্তা করেই।

দীর্ঘ প্রায় ১২ বছর অতিবাহিত হওয়ার পরও সুন্দরবনের নোনাজল আর মিঠে মাটির বাসিন্দারা আশায় আশায় দীর্ঘ অপেক্ষায় চাতকের ন্যায় আজও তাকিয়ে। কিন্তু মাতলা নদী দিয়ে অবধারিত জোয়ার-ভাটার স্রোত বয়ে গেলেও রেলব্রীজ এবং রেললাইন সম্প্রসারনের কাজ সেই তিমিরেই রয়েই গেছে।

সুন্দরবন বাসীদের করুণ দুঃখ-দুর্দশার কথা মাথায় রেখে আবার নতুন করে উদ্যোগ নিয়ে আবারও ২০১৩ সালে দিল্লীতে দরবার করেন রেলরাষ্ট্র মন্ত্রী অধীর চৌধুরীর দফতরে। একান্ত অনুরোধে রেলরাষ্ট্রমন্ত্রী অধীর চৌধুরী ২০১৩ সালে ২৪ ডিসেম্বর মাতলা রেলব্রীজ পরিদর্শন করেন বিভাগীয় আধিকারীকগণ দের সাথে নিয়ে। ব্রীজের বন্ধ হয়ে যাওয়া কাজ শুরু করার নির্দেশ দেন”।

পরবর্তীকালে আবার ২০১৪ সালে কেন্দ্রে সরকার পরিবর্তন হয় ফলে সুন্দরবনের সিংহদুয়ারে রেল যোগাযোগ অধরাই রয়ে যায়।

অাবারও সুন্দরবন বাসীর দুঃখ-দূর্দশার গণস্বাক্ষর সম্মিলিত আবেদন পত্র সহ পতিত নির্মাণের ছবি সহ বাসন্তী ব্লকের স্থানীয় এক সমাজসেবী কেন্দ্রীয় কৃষি রাষ্ট্রমন্ত্রী এস এস আলুওয়ালিয়ার দ্বারস্থ হয়েছিলেন ২০১৬ সালের ৬ ডিসেম্বর।

কৃষি রাষ্ট্রমন্ত্রী সুন্দরবন বাসীদের কথা ভেবেই গুরুত্ব সহকারে নিজেই কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু কে সুন্দরবন বাসীদের আবেদন পত্র সহ চিঠি লেখেন এবং ২০১৬ সালে ৭ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় কৃষি রাষ্ট্রমন্ত্রী  লোকমান মোল্ল্যা কে সাথে নিয়ে সরাসরি রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু র দফতরের হাজীর হয়ে উল্লিখিত চিঠির কপি তাঁর হাতে তুলে দিয়ে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ করেন।

রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু বিভাগীয় আধিকারিদের তাৎক্ষনিক নির্দেশ দেন অবিলম্বে বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য।

২০১৬-২০১৭ সালে রেল বাজেটে নথিভুক্ত হলেও উল্লেখযোগ্য ভাবে বরাদ্দ হয়নি।

জানা গেছে প্রাথমিক ভাবে ৪-৮৪ কিমি ক্যানিং-ভাঙনখালি রেল সম্প্রসারনে বড় বাধা জমি সমস্যায়।

এ বিষয়ে প্রাক্তন সুন্দরবন উন্নয়ন পর্ষদের প্রাক্তন সদস্য লোকমান মোল্ল্যার বলেন “আমাদের দুর্ভাগ্য স্বাধীন ভারতের দীর্ঘ বছর অতিবাহিত হওয়ার পরেও বিশ্বের বিষ্ময় পৃথিবীর সেরা বাদাবন সুন্দরবনের সিংহদুয়ারে আজও রেল যোগাযোগ হল না। বহুবার বহুভাবে আবেদন নিবেদন করেও সুন্দরবন বাসীর স্বপ্ন আজও অধরা রয়েই গেল। যতদিন না দাবী পূরণ হচ্ছে ততদিন দক্ষিণ সুন্দরবন বাসীরা লড়াই চালিয়ে যাবে। তার দৃঢ় বিশ্বাস আগামী রেল বাজেটে সুন্দরবন বাসীর অধীর আগ্রহে তাকিয়ে থাকা রেল সম্প্রসারন সর্ম্পকে  কেন্দ্র সরকার আশার আলো দেখাতে পারেন।

প্রাথমিক ভাবে ক্যানিং-ভাঙনখালি ৪.৮৪ কিমি কাজ শুরু হওয়ার কথা। তারপর ভাঙনখালি-বাসন্তী ১৪.০৩ কিমি এবং বাসন্তী-ঝড়খালি ২৩ কিমি রেল লাইন সম্প্রসারন হলে পর্যটন মানচিত্রে নতুন দিশার আলো দেখা দেবে”।

সুন্দরবনবাসীদের একান্ত জিঞ্জাসা কোটি কোটি টাকা খরচ হওয়ার পর ও কোন কারণে সুন্দরবনের সিংহদুয়ার ক্যানিং থেকে রেল লাইন সম্প্রসারনের কাজ বন্ধ?আগামী দিনেও কি অন্ধকারের সেই অন্তিম তিমীরেই রয়ে যাবে সুন্দরবন?