বুধবার, ২৭শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

গান্ধারী উরাঁওয়ের ভগবান

News Sundarban.com :
ডিসেম্বর ২৯, ২০২০
news-image

গান্ধারী উরাঁওয়ের ভগবান

উদয় থুলুঙ, মংপু 
অনুবাদ: বিলোক শর্মা

মাদারী বস্তিতে
রাত নামার পর যুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু হয়।

বস্তির উত্তর কোনা থেকে
কারোর বাজি ফাটানোর আওয়াজে যুদ্ধ শুরুর সংকেত হয়।
ও স্ত্রী-পুরুষ-বালবলিকাদের পীড়াময় ঘন আওয়াজ
বস্তীকে ঘেরা দেয়
মশাল মিছিলের সঙ্গে ছোট-বড় বাজির গর্জন
মুরগির বাসায় লুকিয়ে রাখা
সর্ষে তেলের টিন ঠাটানোর তীব্র আওয়াজ।

প্রায় সওয়া ঘন্টা কেটে যায়
ধানক্ষেতের পাশে ব্রডগেজে দৌড়ানো আলিপুরদুয়ারের রেলগাড়িও চলে যায়
শত্রুকে তাড়িয়ে বিজয় মশাল হাতে নিয়ে
তার মৃদু আলোয় প্রসারিত চোখে দেখে
মাদারী বস্তির গান্ধারী উরাঁও।

গতকালের কিছুটা বেঁচে থাকা ধানের শিষ
আজকে শেষ।

স্বামীর মৃত্যুর পর দুখ-কষ্টে বেঁচে থাকা আদিবাসী বস্তির গান্দ্ধারীকে প্রাণের কথা ছেড়ে দিন
ধান বাঁচানোই অতি কষ্টকর এই বস্তিতে।

রাত নামার পর ভগবান
সোজাসুজি গ্রামে ঢোকে ও ক্ষতি করে
ভগবানের শরীরও বেশ বড়
শক্তিও সেরকমই
রাগাটেও খুব,
মেরে ফেলা যায় না ভগবানকে
মারধর করা যায় না ভগবানকে
ক্ষেতে ঢুকে যা ইচ্ছা হয়, খায়
বাড়ি ভাঙা চলে
বুককে পদপিষ্ট করা চলে।

এদিক- ওদিক করে গান্ধারীর লড়াইটা
ভগবানের সঙ্গে।

রাম মন্দির-বাবরি মস্জিদের সমস্যার মত
ভগবানের আক্রমনকে
জাতীয় সমস্যা মেনে নিলে হত অফিসজনদের
সংবাদদাতাদের
চ্যানেল ডিস্কাসানে চেঁচানোর জন্য বললে হত
এ বিষয়ে ।
সরকার একটি রাত
সেখানে আস্তানা বানালে
মাদারীর বস্তিওয়ালারা নিশ্চিন্তে ঘুমোতেন, সেই একটি রাত।
নিত্যই মরে যাচ্ছেন তারা
মাওবাদীরা বরং পালা বদল করে মারে
ভগবান কিন্তু প্রত্যেক রাত পেটে লাথি চালায়
সেখানে।
অশান্তি ও চিন্তার শীতলহরে পড়ে
শুকনো মাংস শরীরের মাদারীবস্তির গান্ধারীর
অবস্হার পরিবর্তন হল না কখনই।

ভগবানের আক্রমন থেকে
বস্তিকে বেড়া দিতে
গান্ধারীর আওয়াজ খুবই অসহায়
প্রত্যেক সকালের ঘুমন্ত চোখ থেকে
চিন্তার পিচুটি মোছাকেই কি আর জীবন বলা যায়!

সরকার ঘোর নিদ্রায় থাকার সময়ে
মাদারী বস্তিকে
পালা বদল করে জেগে থাকতে হয়।

এখনও
এই পরম্পরাকে শেষ করতে হবে বলে
আওয়াজের জন্ম হয়নি এই বস্তিতে।

-কবি উদয় থুলুঙের নেপালি কবিতা ‘গান্ধারী উরাঁওকো ভগবান’-এর বঙ্গানুবাদ

উদয় থুলুঙ: সাহিত্যিক উদয় থুলুঙ ভারতীয় নেপালি সাহিত্যের এক প্রতিষ্ঠিত নাম। পেশায় শিক্ষিক কবি থুলুঙ মংপুর বাসিন্দা। 1984 সাল থেকে সাহিত্য লেখা শুরু। কবিতা, গল্প, সমীক্ষা, গান লেখার পাশাপাশি কিছু পত্রপত্রিকার সম্পাদনাও করেছেন। কবিতা ও গল্প মিলিয়ে উদয় থুলুঙের এখন অবধি মোট আটটি বই প্রকাশিত রয়েছে – ‘দুখ্দো ত ইয়াঁহা জিন্দগী নৈ ছ’, ‘প্রত্যাগমন’, ‘বিম্ব কবিতা’ (কাব্যগ্রন্হ), ‘বিকল্প’, ‘অনাবৃত আকাশ’, ‘গোজিকা’, ‘একান্তবাস’, ‘অক্ষরেখা’ (গল্প সংকলন)। ‘একান্তবাস’ গল্প সংকলনে 2008 সালে তিনি সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার প্রাপ্ত করেন।

বিলোক শর্মা: নেপালি সাহিত্যে কবি ও অনুবাদক হিসেবে পরিচিত। শিক্ষায় বোটানীতে পোষ্ট-গ্র্য়াজুয়েট এবং কৃষি-আধিকারিক। মাদারীহাট, ডুয়ার্সের বাসিন্দা ও বর্তমানে লুধিয়ানায় কর্মরত। একটি নেপালি কাব্যকৃতি ‘সময়াভাস’ প্রকাশিত রয়েছে। কবিতা লেখালেখির পাশাপাশি নিয়মিত নির্বাচিত নেপালির কবিতার বাংলায় অনুবাদ ও প্রকাশনা করেন। এছাড়া, এখন অবধি চারটি পত্রিকার সম্পাদনা করেছেন।