শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

কুসংস্কার আর ওঝাগুণীনের দাপটে মৃত্যু হল সাপে কামড়ানো গৃহবধুর

News Sundarban.com :
ডিসেম্বর ১৬, ২০২০
news-image

নিউজ সুন্দরবন ডেস্ক: সাপের কামড়ে মৃত্যু হল রেহেনা বিবি(২৮) নামে এক গৃহবধুর। ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার রাতে সোনারপুর থানার প্রতানগর গ্রাম পঞ্চায়েতের নাজিরহাট এলাকার কুস্তিয়া গ্রামে।

স্থানীয় সুত্রে জানাগেছে রবিবার রাতে রেহেনা বিবি রাতের খাবার খেয়ে পুকুরে গিয়েছিলেন হাত ধোওয়ার জন্য।পুকুর ঘাটে সেই সময় তাঁর ডান পায়ের আঙুলে সাপে কামড় দেয়।সাথে সাথে গৃহবধুর স্বামী আজিজুল লস্কর ও পরিবরের অন্যান্যদের কে সাপে কামড়ানোর কথা জানায় এই গৃহবধু। পরিবারের লোকজন রাতেই রেহেনা কে স্থানীয় এক ওঝাগুণীনের কাছে নিয়ে যায়। গুণীন তুকতাক করে কিছু হয়নি বলে বাড়িতে চলে যেতে বলে।সোমবার সন্ধ্যায় আবার এই গৃহবধুর শারিরীক অবস্থার অবনতি হলে, আবারও গুণীনের দ্বারস্থ হয় পরিবারের লোকজন।ওঝাগুণীন বেশ কয়েক ঘন্টা ঝাঁড় ফুঁক,তেলপোড়া,জলপোড়া দিয়ে দাদাগিরি করে।অতিরিক্ত সময় অতিবাহিত হওয়ায় ক্রমশ ঝিমিয়ে পড়ে এই গৃহবধু।সময় যত গড়িয়েছে তাঁর শারীরীক অবস্থা ততটাই জটিল হয়ে আশাঙ্কাজনক হওয়ায় বেগতিক বুঝে গুণীন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয় পরিবারের লোকজনদের কে।সোমবার রাতে গৃহবধুকে তাঁর পরিবারের লোকজন চিকিৎসার জন্য ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যায়।সেখানেই রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ মৃত্যু হয় রেহেনা বিবির।ক্যানিং থানার পুলিশ মৃতদেহটি উদ্ধার করে ময়না তদন্তে পাঠিয়েছে।

অন্যদিকে সাপে কামড়ানো এই গৃহবধুর মৃত্যুর ঘটনা গ্রামে পৌঁছালে এলাকায় নেমে আসে শোকের ছায়া।
ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালের সর্প বিশেষঞ্জ চিকিৎসক সমরেন্দ্র নাথ রায় জানিয়েছেন “ওঝগুণীন না করে সঠিক সময়ে সাপে কামড়ানো গৃহবধুকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে আনলে বাঁচানো সম্ভব হতো।”

দীর্ঘদিন ধরেই সারা রাজ্য জুড়ে সাপে কামড়ানোর বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের সচেতনতা মুলক কাজ করে চলেছেন ক্যানিং যুক্তিবাদী সাংস্কৃতিক সংস্থা। সংস্থার অন্যতম সদস্য দেবাশীষ দত্ত বলেন “সাপে কামড়ালে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।ওঝা-গুণীন কে একবারেই বর্জন করতে হবে।কোন প্রকার ওঝা গুণীনের দ্বারস্থ না হয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসার জন্য নিকটবর্তী সরকারী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন।ফলে একদিকে যেমন চিকিৎসার সুবিধা হবে ,তেমনই সাপে কামড়ানোর হাত থেকে মৃত্যু ঠেকানো সম্ভব হবে। তারপর সাপে কামড়ানো ভ্যাকসিন(এভিএস) একমাত্র সরকারী স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই পাওয়া যায়। ”

অন্যদিকে বিশিষ্ট সমাজ সচেতন সমাজকর্মী মেহেদি হাসান সেখ বলেন “একবিংশতি শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে সভ্য শিক্ষিত সমাজ আজও ওঝা গুণীন এর উপর ভরসা রেখে চলছে। বিভিন্ন প্রচার,সচেতনতা শিবির করেও শিক্ষিত সমাজ জেগে ঘুমিয়ে চলেছে। যার ফলাফল ভোগ করতে হচ্ছে শিশু,কিশোর,গৃহবধু সহ সাপে কামড়ানো রোগীদের কে।ওঝাগুণীনের কথায় বিপন্ন হচ্ছে চিকিৎসা পরিষেবাও।মারাত্মক ফল স্বরুপ মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ছে অসংখ্য মানুষজন।বিশেষ করে জেলার অন্যান্য এলাকা সহ সমগ্র সুন্দরবনের প্রত্যন্ত গ্রামের সাধারণ মানুষজন সচেতন না হলে এমন কুসংস্কার রবাবরই চলতে থাকবে।”