শনিবার, ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অরণ্য ধ্বংস, তৎপর প্রশাসন

News Sundarban.com :
নভেম্বর ১৭, ২০২০
news-image

নিউজ সুন্দরবন ডেক্স: বিশ্বের বৃহত্তম ব-দ্বীপ সুন্দরবন। বিগত ২০০৯ সালে আয়লা, কিংবা পরবর্তী সময়ে ফণী, বুলবুল এমন কি সাম্প্রতিক কালে ঘটে যাওয়া আম্ফান সাইক্লোনের হাত থেকে মানবজাতি কে রক্ষা করেছে এই সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অরণ্য। সেই সুন্দরবনের উপর যখন তখন আঘাত করে ধ্বংস করতে ব্যস্ত সাধারণ মানুষ।

সাম্প্রতিক করোনা কালে গত ২০ মে ঘটে যাওয়া আম্ফান সাইক্লোনের ক্ষত এখনও শুকায়নি।গত ছয় মাস আগের সেই ভয়াল ভয়ঙ্কর তান্ডবলীলার চিহ্ন ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে সমগ্র সুন্দরবন জুড়ে।প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে সুন্দরবন কে রক্ষা করে সুন্দরবনেরই ম্যানগ্রোভ।এতো সবের মধ্যেও সেই ম্যানগ্রোভ ধ্বংস করে চলছে মাছের ভেড়ি তৈরীর কাজ।এই ভেড়িতে মাছ চিংড়ি চাষ করে বেশি মুনাফা হয়।আর সেই মুনাফার লোভে বসীভূত হয়ে কালক্রমে সুন্দরবন কে ধ্বংসের মুখে ঠেলে ফেলে দিচ্ছে সুন্দরবনেরই কিছু অসাধু ব্যবসায়ী।বিগত দিনে সুন্দরবনের বাসন্তী ব্লকের বৃহত্তম এলাকা জুড়ে ম্যানগ্রোভ নিধন হয়েছে আনন্দাবাদ গ্রামে।অথচ মাতলা নদীর তীরবর্তী আনন্দাবাদ গ্রাম আয়লায় প্লাবিত হয়েছিল। তৎকালীন সময়ে নদীবাঁধ শক্তপোক্ত করে প্রায় ৮ কিলোমিটার জায়গায় লাগানো হয়েছিল।প্রাকৃতিক দুর্যোগ কে চ্যালেঞ্জ জানানোর জন্য ১০ বছরের সেই সমস্ত ম্যানগ্রোভ ব্যাপক ভাবে বড় হয়েছিল।বুলবুল কে পাত্তা না দিয়ে এই ম্যানগ্রোভ অরণ্য রক্ষা করেছিল মানবজাতী কে। এরপর চলতি বছরের মার্চ মাসে শুরু হয় মহামারী করোনা ভাইরাসের দাপট। তারপর সরকার করোনা কে প্রতিহত করার জন্য প্রাণপণ ঝাঁপিয়ে পড়ে।

এরই মাঝে পরবর্তী গত মে মাসে আম্ফান তান্ডব চালালেও দাঁড়িয়ে ছিল ম্যানগ্রোভ অরণ্য।সুযোগ বুঝে কোপ মারে অসাধু চক্র। নতুন ভাবে উদ্যোগ নিয়ে শুরু হয় সুন্দরবনের অরণ্যের বৃক্ষনিধণ যঞ্জ।

অথচ এই সুন্দরবন কে বাঁচাতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী একশো দিনের শ্রমিকদের কাজের শ্রমিক লাগিয়ে পাঁচ কোটি ম্যানগ্রোভ লাগানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেই কাজ ও চলছে দুরন্ত গতিতে। এরই মধ্যে প্রশাসনের নজর এড়িয়ে ম্যানগ্রোভ অরণ্য ধ্বংস?এমন প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে সমগ্র সুন্দরবন জুড়ে!

এই অরণ্য ধ্বংসকারীদের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ট সুন্দরবনের মানুষ। ইচ্ছা থাকলেও প্রাণ ভয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি স্থানীয় বাসিন্দারা। ব্রাত্যবসু বনমন্ত্রী থাকাকালীন ঝড়খালিতে এক অনুষ্ঠানে বনমন্ত্রীর সামনে সোচ্চার হয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন জয়নগরের সাংসদ প্রতিমা মন্ডল ও গোসাবার বিধায়ক জয়ন্ত নস্কর। তারপর ও সাময়িক ভাবে অসাধু চক্রের কাজ বন্ধ হয়।কিন্তু সেটা সায়মিক। আবারও শুরু হয় সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অরণ্য ধ্বংসের যাত্রাপালা।সোমবার দুপুরবেলায় বাসন্তী ব্লকের মাতলার তীরে কামারডাঙ্গা সর্দারপাড়া এলাকায় ম্যানগ্রোভ অরণ্য কেটে শুরু হয় ভেড়ি তৈরীর তোড়জোড়। আর গোপন সুত্রে বাসন্তীর থানার আইসি আব্দুর রব খানের কাছে এমন খবর পৌঁছায়। ঘটনার গুরুত্ব বুঝে সাথে বাসন্তীর বিডিও সৌগত সাহা কে বিষয়টি জানায় আইসি।এরপর একমুহূর্ত সময় অপচয় না করে বিশাল পুলিশ বাহিনী সহ বাসন্তী থানার আইসি ও বাসন্তীর বিডিও ঘটনাস্থলে পৌছায়। ঘটনাস্থলে পৌঁছে চক্ষু চড়কগাছ প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের।

তাঁরা দেখেন মাতলা নদীর তীরে কিছু অসাধু ব্যক্তি বাঁধ দেবার অছিলায় জেসিবি দিয়ে একটা বড় এলাকা জুড়ে ম্যানগ্রোভ অরণ্য ধ্বংস করে মাছের ভেড়ি তৈরী করছে। এরপর দুজনে মিলে দ্রুত পৌঁছে যায় ঘটনাস্থলে।পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে দুর্গাপদ সরদার,রবীন সরদার মারুফ মিদ্দ্যে নামে তিন দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করে এবং একটি জেসিবি আটক করে।পাশাপাশি পুলিশের উপস্থিতিতে বেআইনি বাঁধ ভেঙে দেওয়া হয়।ধৃতদের বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা রুজু করেছে বাসন্তী থানার পুলিশ। ধৃতদের মঙ্গলবার আলালতে তোলা হবে।
উল্লেখ্য বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক হানাহানিতে অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠতো বাসন্তী ব্লক। সেই পরিস্থিতি বাসন্তী থানার দায়িত্বভার গ্রহন করে আইসি পদে বসেন আব্দুর রব খান। এরপর বাসন্তী ব্লক জুড়ে শান্তির বাতাবরণ তৈরী ঈরতে উদ্যোগ নেন। পাশাপাশি এলাকার বিভিন্ন জায়গা থেকে দুষ্কৃতিদের গ্রেফতা করে গারদে পুরতে শুরু করেন।

তল্লাশি অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করেন বেআইনি অস্ত্র,তাজা বোমা। দুষ্কৃতিরা তাদের রাজত্বের অবসান বুঝতে পারে। বাসন্তীতে শুরু হয় শান্তির আবহাওয়া। পাশাপাশি ম্যানগ্রোভ অরণ্য সংরক্ষণে অনন্য নজীর আগামী দিনে বাসন্তী থানার আইসির উদ্যোগে অরণ্য ধ্বংসকারী মাফিয়ারা শেষ হবে বলে আশাবাদী বাসন্তী ব্লকের সাধারণ মানুষজন।

অন্যদিকে প্রশাসনের এমন ভূমিকা সুন্দরবনের অত্যন্ত কাছে মাতলা নদীর পাড়ে টাইডাল ফরেস্টকে রক্ষা করার এই যৌথ প্রয়াস প্রাণদায়ী ইকোসিস্টেমকে বাঁচিয়ে রাখতে সাহায্য করবে।