বৃহস্পতিবার, ২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

আন্তর্জাতিক রক্তদান দিবসে ক্যানিংয়ে রক্তদান শিবির

News Sundarban.com :
অক্টোবর ১, ২০২০
news-image

নিউজ সুন্দরবন ডেস্ক:  ১ লা অক্টোবর ছিল আন্তর্জাতিক রক্তদান দিবস।বৃহষ্পতিবার সেই আন্তর্জাতিক রক্তদান দিবস কে সামনে রেখে রক্তদান উৎসবের আয়োজন করলো ক্যানিং ব্লক যুবতৃণমূল কংগ্রেস।ক্যানিং ব্রীজ সংলগ্ন ব্রীজরোড(পশ্চিম)ব্যবসায়ী ইউনিয়ন অফিসে আয়োজিত স্বেচ্ছায় রক্তদান শিবিরে ৭৫ জন রক্তদাতা স্বেচ্ছায় রক্তদান করেন।অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জেলার কো-অর্ডিনেটর পরেশরাম দাস,জেলাপরিষদ সদস্য তপন সাহা,মাতলা ১ গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান হরেন ঘোড়ুই,উপপ্রধান প্রদীপ দাস,ক্যানিং ব্রীজরোড ব্যবসায়ী ইউনিয়নের সম্পাদক সোনাই মোল্ল্যা সহ অন্যান্য বিশিষ্টরা।

করোনা তান্ডবে বিগত ২৩ মার্চ থেকে সমগ্র দেশ জুড়ে শুরু হয়েছিল লকডাউন।যা প্রায় সাতমাস অতিক্রান্ত।করোনা তান্ডবে এই লকডাউন চলায় বিভিন্ন ভাবে সবথেকে বেশি সমস্যা জর্জরিত হয়েছেন থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগী ও তাঁদের পরিবার পরিজনেরা।সুন্দরবনের সিংহদূয়ার ক্যানিং মহকুমা এলাকায় একমাত্র মহকুমা হাসপাতালে রয়েছে একটি মাত্র ব্ল্যাড ব্যাঙ্ক। লকডাউনে সেখানেও চরম ভাবে রক্তের সংকট দেখাদেয়। এমনকি প্রয়োজনের তাগিদে রক্তদাতা এনেও রক্তের অমিল হওয়ায় দিশাহারা হয়ে পড়েন রোগীর আত্মীয়-স্বজনরা।এলাকায় বিশেষ করে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ক্যানিং মহকুমা এলাকায় প্রায় শতাধিক থ্যালাসেমিয়া রোগী নির্দিষ্ট সময়ে রক্ত না পেয়ে চরম বিপদে পড়েছিলেন।এমন সংকট মুহূর্তের কথা জানতে পারেন জেলার তৃণমূল কংগ্রেসের কো-অর্ডিনেটর পরেশরাম দাস।তিনি সেই সংকটকালে ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে একের পর এক স্বেচ্ছায় রক্তদান শিবির করে মুমূর্ষ থ্যালাসেমিয়া রোগীদের পাশে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েদেন।

বিপন্ন থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগীরা রক্তের জোগান পেয়ে জীবনে বেঁচে থাকার রসদ ফিরে পায়।জানাগেছে জেলার কো-অর্ডিনেটর পরেশরাম দাস লকডাউন শুরু থেকে আন্তর্জাতিক রক্তদান দিবস পর্যন্ত সাত মাসে সাতবার রক্তদান শিবিরের আয়োজন করেছেন।যা সমগ্র জেলায় অন্যতম বিরল দৃষ্টান্ত।সাতবার রক্তদান শিবিরে প্রায় কয়েক হাজার যুবক স্বেচ্ছায় রক্তদান করায় ক্যানিং মহকুমা এলাকার বিভিন্নপ্রান্তের প্রায় শতাধিক থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগীরা বিপন্ন জীবন ফিরে পায়।
বাসন্তী ব্লকের দেবাশীষ বৈরাগী,আকবর সেখ,গোসাবার অমৃত মন্ডল,শ্রীধর সরদার,ক্যানিংয়ে পল্লবী গুছাইত,মন্টু সরদাররা জানিয়েছেন ‘করোনা কালে লকাউন চলায় সমস্ত যানবাহন বন্ধ ছিল। পরিবারের থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুদের রক্তের প্রয়োজন হয়। কোন প্রকার রক্তের জোগান পাচ্ছিলাম না। এমনকি টাকা দিয়েও রক্ত অমিল হয়। পরেশরাম দাস কে বিপদের কথা জানানোয় তিনি সংকট কালে সমস্যার সমাধান করে বিপন্ন রোগীদের বাঁচানোর উদ্যোগ গ্রহণ করে।আজও পরেশরাম দাসের জন্য নির্দিষ্ট সময়ে রক্ত দিতে পারছি পরিবারের থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুদের।’এদিন রক্তদান শেষে জেলার কো-অর্ডিনেটর পরেশরাম দাস বলেন ‘শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক রক্তদান দিবসের জন্য লোক দেখানে রক্তদান অনুষ্ঠান নয়। যতদিন দেহে প্রাণ থাকবে ততদিনই থ্যালাসেমিয়া ও রক্ত শূণ্যতায় আক্রান্ত রোগীদের সেবায় এমন লড়াই চালিয়ে যাবো’।

উল্লেখ্য ১৯৯৫ সাল থেকে আন্তর্জাতিক রক্তদান দিবস পালন এবং ২০০০ সালে ‘নিরাপদ রক্ত’-এই থিম নিয়ে পালিত বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের অভিজ্ঞতা নিয়ে ২০০৪ সালে সর্বপ্রথম পালিত হয়েছিল বিশ্ব রক্তদান দিবস। ২০০৫ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য অধিবেশনের পর থেকেই প্রতিবছর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও এ দিবস পালনের জন্য তাগিদ দিয়ে আসছে।
প্রতিবছর ৮ কোটি ইউনিট রক্ত স্বেচ্ছায় দান হয়। অথচ এর মধ্যে মাত্র ৩৮ শতাংশ সংগ্রহ হয় উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে, যেখানে বাস করে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৮২ শতাংশ মানুষ। এ ছাড়া এখনো বিশ্বের অনেক দেশে মানুষের রক্তের চাহিদা হলে নির্ভর করতে হয় নিজের পরিবারের সদস্য বা নিজের বন্ধুদের রক্তদানের ওপর, আর অনেক দেশে পেশাদারি রক্তদাতা অর্থের বিনিময়ে রক্ত দান করে আসছে রোগীদের। অথচ জানা যায়, ‘নিরাপদ রক্ত সরবরাহের’ মূল ভিত্তি হল স্বেচ্ছায় ও বিনামূল্যে দান করা রক্ত। কারণ তাদের রক্ত তুলনামূলক ভাবে নিরাপদ এবং এসব রক্তের মধ্য দিয়ে গ্রহীতার মধ্যে জীবনসংশয়ী সংক্রমণ, যেমন এইচআইভি ও হেপাটাইটিস সংক্রমণের আশঙ্কা খুবই কম।
আরও একটি তাৎপর্য রয়েছে।নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী কার্ল ল্যান্ডস্টিনার আবিষ্কার করেছিলেন রক্তের গ্রুপ ‘এ, বি, ও,এবি’।