শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৫ বছর পর বোন কে ফিরে পেয়ে দৃষ্টান্ত নজীর গড়ল ফ্রেজারগঞ্জের যুবক

News Sundarban.com :
সেপ্টেম্বর ৮, ২০২০
news-image

নিউজ সুন্দরবন ডেস্ক: বাড়িতে আচমকা একদিন পুলিশের খোঁজখবরে ভয় পেয়ে চমকে গিয়েছিল পরিবারের লোকজন। পুলিশ জানতে চেয়েছিল গত ১৫ বছর আগে তাঁর হারিয়ে যাওয়া ‘পাগলি’ বোনের কথা। তখনও তিনি জানতেন না, কয়েক দিনের মধ্যে কী অপেক্ষা করতে চলেছে।রবিবার বিকেলে সেই পাগলি বোনকে ফিরিয়ে দিল ‘স্টেট লিগাল সার্ভিসেস অথরিটি, ওয়েস্ট বেঙ্গল’।দীর্ঘ ১৫ বছর পর পরিবারের সঙ্গে মিলন হল লক্ষ্মী পাড়ুইয়ের।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ফ্রেজারগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারীক রাজু বিশ্বাস জানিয়েছেন “ দিন কয়েক আগে কাকদ্বীপের সাবডিভিশনাল লিগ্যাল সার্ভিসেস কমিটির চেয়ারম্যানের কাছ থেকে এক মহিলা সম্পর্কে খোঁজ নেওয়ার বিষয়ে নির্দেশ আসে। মহিলার বয়স ৫৫, নাম পার্বতী পাড়ুই। ‘খোলাঘাট’ গ্রাম থেকে হারিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। বকখালির কাছেই সম্ভবত সেই গ্রাম।

ফ্রেজারগঞ্জ থানার আধিকারীক রাজু বিশ্বাস ও থানার অন্যান্য অফিসাররা মহাফাঁপরে পড়ে যায়।এলাকায় খোলাঘাট বলে কোনও গ্রামই নেই ।প্রায় হাল ছেড়ে দেওয়ার মতোই অবস্থা হলে ও এই দুঁদে পুলিশ আধিকারীক সহজেই হাল ছাড়ার পাত্র নন।

শেষ চেষ্টা হিসেবে এলাকাবাসীদের মধ্যে পাড়ুই পরিবারগুলিতে একবার আলাদা আলাদা করে খোঁজখবর নিতে শুরু করেন। তখনই দক্ষিণ শিবপুর গ্রাম থেকে একটি তথ্য পেয়ে যান। বছর ১৫ আগে গোপাল পাড়ুইয়ের মানসিক ভারসাম্যহীন এক বোন হারিয়ে গিয়েছিলেন উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বসিরহাট মহকুমা এলাকা থেকে। অনেক খুঁজেও সন্ধান মেলেনি তাঁর। কিন্তু পার্বতী নয়! নাম ছিল লক্ষ্মী পাড়ুই।
দাদা গোপালের কাছ থেকে হারিয়ে যাওয়া সেই তরুণী বোনের ছবি চেয়ে নেন এই পুলিশ আধিকারীক। ততক্ষণে আরও একটি বিষয় প্রায় মিলেই গেছে। পার্বতী পাড়ুই জানিয়েছিলেন, তাঁর বাবার নাম যোগেন পাড়ুই ও মা গুরুদাসী পাড়ুই। গোপালবাবুও বাবা-মায়ের নাম একই বলে জানায়। যদিও তাঁর বলা নিজের নামটি, পার্বতী পাড়ুই– এটা মিলছে না।

অবশেষে অনুমানের উপর ভিত্তি করেই সেই হারিয়ে যাওয়া তরুণীর ছবি-সহ পূর্ণাঙ্গ তথ্য জমা দিয়েছিলেন বিচারকের কাছে। সেই ছবিই পৌঁছে যায় সুদূর ছত্তীসগড়ের বিলাসপুর স্টেট মেন্টাল হাসপাতালে।

মাস তিনেক আগে বিলাসপুরের এই মানসিক হাসপাতালেই সুস্থ হয়ে ওঠা ৫৫ বছরের এক প্রৌঢ়া বলতে শুরু করেন, তাঁর নাম পার্বতী পাড়ুই, পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনার বকখালির কাছে খোলাঘাটা গ্রামে থাকতেন তিনি। সেখান থেকেই হারিয়ে গিয়েছিলেন বলে জানান। তবে কী ভাবে ছত্তীসগড় চলে এলেন, তা অবশ্য বোঝা যায়নি।

ওই মহিলার কথা শোনার পরেই ছত্তীসগড়ের স্টেট লিগাল সার্ভিসেস অথরিটি মারফত এই ঘটনাটির কথা জানানো হয় পশ্চিমবঙ্গের স্টেট লিগাল সার্ভিসেস অথরিটিকে। সেখান থেকে ঘটনাটি জানানো হয় দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায়, জেলা থেকে কাকদ্বীপ সাবডিবিশনে জানানো হয় এই মহিলার কথা। এর পরেই কাকদ্বীপ আদালতের তরফে খোঁজখবর নেওয়া শুরু হয় এলাকা জুড়ে। ফ্রেজারগঞ্জ থানাতেও নির্দেশ যায় আদালতেরই উদ্যোগে।

শেষমেশ স্টেট লিগাল সার্ভিসেস অথরিটির তত্ত্বাবধানেই ছত্তীসগড় থেকে পশ্চিমবঙ্গে আনা হয় লক্ষ্মী পাড়ুই ওরফে পার্বতীকে। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় পৌঁছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডিস্ট্রিক্ট লিগাল সার্ভিসেস অথরিটির হাতে তুলে দেওয়া হয় তাঁকে। তাঁরাই পৌঁছে দেন দক্ষিণ শিবপুরের দাদা গোপাল পাড়ুইয়ের বাড়িতে।

এত বছর পরে দাদা ও বোন দুজনেই দুজনকে সামনে থেকে দেখে বিহ্বল হয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন।দীর্ঘ ১৫ বছর পর এক অভূতপূর্ব পুনর্মিলনের সাক্ষী হতে পেরেই এলাকার সাধারণ মানুষজন শিহরিত। প্রায় হাল ছেড়ে দেওয়ার মুখ থেকেও খানিক চেষ্টা করলে যে অসাধ্য সাধন করা যায়, তারই বিরল দৃষ্টান্ত নজীর গড়ল দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার প্রত্যন্ত এক দ্বীপ ফ্রেজারগঞ্জ।