শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

গহণা ও নগদ টাকা কুড়িয়ে পেয়ে ফেরত দিয়ে সততার দৃষ্টান্ত রাখলো দরিদ্র মাছ ব্যবসায়ী

News Sundarban.com :
সেপ্টেম্বর ৮, ২০২০
news-image

নিউজ সুন্দরবন ডেস্ক: মঙ্গলবার সকালে জনবহুল ক্যানিং শহরে সাধারণ লোকের আনাগোনার মধ্যে একটি মানিব্যাগ কুড়িয়ে পায় দরিদ্র এক মাছ ব্যবসায়ী। মানিব্যাগ খুলতেই চক্ষু চড়কগাছ মাছ ব্যবসায়ী নিত্যনন্দ সরদারের। ব্যাগের মধ্যে কয়েকভরি সোনার চেন এবং নগদ কয়েক হাজার টাকা। কি করবেন ভেবে উঠতে পারছেন না। অন্যদিকে বাসন্তী ব্লকের ধুঁড়ি এলাকার ভারতীর মোড় থেকে অটোয় চেপে ক্যানিংয়ে আসছিলেন মন্দা চক্রবর্তী।বছর চল্লিশ বয়সের মন্দাদেবী অটো থেকে নেমে অটো ভাড়া মিটিয়ে হন্তদন্ত হয়ে সঞ্জয় পল্লী এক আত্মীয়ের বাড়িতে রওনা দেয়। অটো ভাড়া দেওয়ার সময় অসাবধান বসত মন্দাদেবীর মানি ব্যাগ রাস্তা পড়ে যায়। সেই মানিব্যাগের মধ্যে ছিল কয়েকভরি সোনার গহণা ও নগদ কয়েক হাজার টাকা।সঞ্জয় পল্লী যাওয়ার আগে তিনি ক্যানিংয়ের একটি মিষ্টি দোকানে মিষ্টি কিনে দাম দেওয়ার সময় দেখেন মানিব্যাগ নেই।

সম্বিত ফেরে তাঁর। কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। তাঁর মানিব্যাগ রাস্তা পড়ে গেছে। তিনি পাগলের মতো ক্যানিং বাজারে তাঁর হারিয়ে যাওয়া মানি ব্যাগ খুঁজতে থাকেন।ইতিমধ্যে দরিদ্র মাছ ব্যবসায়ী কুড়িয়ে পাওয়া মানিব্যাগ,সোনার গহনা ও নগদ টাকা নিয়ে ক্যানিং বাসষ্ট্যান্ডে হাজীর হয়। সেখানে স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেসের একটি অনুষ্ঠান চলছিল। মাছের ট্যাঙ্ক মাথায় নিয়ে আচমকা অনুষ্ঠান মঞ্চে উপস্থিত হয় হতদরিদ্র মাছ ব্যবসায়ী নিত্যানন্দ।অনুষ্ঠান মঞ্চে নোংরা পোশাক পরিহিত সাধারণ মাছ ব্যবসায়ীকে দেখে অনুষ্ঠানের তাবড় তাবড় নেতারা হকচকিয়ে যায়।মঞ্চে থাকা জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের কো-অর্ডিনেটর পরেশ রাম দাস কে নিত্যানন্দ সমস্ত ঘটনার কথা খুলে বলেন। তাঁর হাতে তুলেদেন কুড়ি পাওয়া সোনার গহনা ও নগদ টাকা।
পরেশ বাবু অনুষ্ঠান কিছুটা স্থগিত রেখেই কুড়িয়া পাওয়া মানিব্যাগ সম্পর্কে ঘোষনা করেন মাইকে।মাইকের প্রচার শুনে কাঁদতে কাঁদতে অনুষ্ঠান মঞ্চে হাজীর হয় মন্দা দেবী। তাঁর হারিয়ে যাওয়াও সোনার গহনা ও নগদ টাকা তুলে দেন।

বাসন্তী ব্লকের কাঁঠাল বেড়িয়ার বাসিন্দা সামান্য একজন মাছ বিক্রেতার এমন অসামান্য কর্তব্য এবং সততা দেখে অনুষ্ঠান মঞ্চের সকলেই বাহবা দেন। অন্যদিকে মাছ বিক্রতা নিত্যানন্দ সরদার বলেন “কলকাতায় রাজমিস্ত্রীর কাজ করতাম। লকডাউনে ট্রেন বন্ধ হওয়ায় কাজ হারিয়ে চরম অর্থ সংকটের মধ্যে সংসার চালাতে হচ্ছে। পরিবারের মুখে দুমুঠো অন্ন তুলে দেওয়ার জন্য এক সপ্তাহ হচ্ছে মাছ ব্যবসা করছি। গরিব হওয়া বড়ই জ্বালা। এদিন যখন মাছ বিক্রি করে বাড়িতে ফিরছিলাম তখন সোনার গহনা এবং টাকা সহ একটি মানিব্যাগ রাস্তায় কুড়িয়ে পাই।চিন্তা করলাম আমি দরিদ্র হতে পারি। কিন্তু যার জিনিস খোয়া গিয়েছে সে ও তো দরিদ্র হতে পারে।এমন জিনিসের প্রয়োজন নেই। তাই চিন্তা ভাবনা করে সোনার গহনা আর টাকা নিয়ে ক্যানিংয়ে একটি মিটিংয়ের বাবুদের কাছে জমা দিয়েছিলাম। তাঁরা মন্দা দেবীর হাতে তুলে দেওয়ায় আমি খুব খুশি। ”
মন্দাদেবী তাঁর হারিয়ে যাওয়া মুল্যবান জিনিসপত্র ফেরত পেয়ে কয়েকশ টাকা মিষ্টি খাওয়ার জন্য মাছ বিক্রেতার হাতে তুলে দেন।
অন্যদিকে জেলার কো-অর্ডিনেটর পরেশ রাম দাস জানিয়েছেন “দরিদ্র মাছ ব্যবসায়ীর সততার মুল্যবোধ অনন্য এক বিরল দৃষ্টান্ত। আগামী দিনে ওই মাছ ব্যবসায়ী কে সততার জন্য আমরা সংবর্ধনা জানাবো।”