বৃহস্পতিবার, ১৮ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

আম্ফান বিধ্বস্ত সুন্দরবন এলাকায় ড্রাগন চাষ

News Sundarban.com :
আগস্ট ১৮, ২০২০
news-image

সুভাষ চন্দ্র দাশ, ক্যানিং –

আয়লা ও আম্ফান বিধ্বস্ত সুন্দরবনের বাসন্তী ব্লকের বিভিন্ন এলাকায় কৃষিতে নতুন সাফল্য আনতে প্রাথমিক ভাবে চুনাখালিতে দিশারী কৃষক সংঘের উদ্যোগে ড্রাগন চাষ শুরু হল। মঙ্গলবার সকালে ১৩০০টি ড্রাগন গাছ(DRAGON FRUIT) রোপন করা হয়।যা সুন্দরবনের বুকে এমন উদ্যোগ এই প্রথম।সুন্দরবনে ড্রাগন চাষে সফল হলে অর্থনৈতিক ভাবে সুন্দরবনের বুকে এক নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হবে।পাশাপাশি সুন্দরবনের কৃষকরা অন্যান্য চাষের সাথে ড্রাগন চাষের প্রতি আরো বেশি আকৃষ্ট হবেন।কৃষকদেরকে বিকল্প চাষ হিসাবে ড্রাগন চাষ আকর্ষনীয় করে তুলতে দিশারী কৃষক সংঘের এমন অনন্য উদ্যোগ বলে জানালেন দিশারী কৃষক সংঘের উদ্যোক্তা বিষ্ণুপদ প্রধান।তিনি বলেন এলাকায় প্রায় এক একর জমির উপর ১৩০০ গাছ রোপণ করা হয়েছে। দীর্ঘ দুবছর ধরে পরিচর্যা করার পর গাছে ফল ধরবে।সাধারণত এই ড্রাগন ফল বাজারে কেজি প্রতি ২০০ টাকা করে বিক্রি হবে।সাফল্য হলেই বিকল্প চাষ হিসাবে সুন্দরবনের চাষীদের মুখে হাসি ফুটবে। উল্লেখ্য ড্রাগন ফল মূলত আমেরিকার একটি প্রসিদ্ধ ফল।যা বর্তমানে আমাদের দেশেও ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড, ফ্লোরিডা ও ভিয়েতনাম থেকে এই ফলের বিভিন্ন জাত আনা হয়। ড্রাগন ফলের গাছ এক ধরনের ক্যাকটাস জাতীয় গাছ। এই গাছের কোন পাতা নেই। ড্রাগন ফলের গাছ সাধারনত ১.৫ থেকে ২.৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে।

বর্তমানে কৃষি গবেষণায় কর্তৃক উদ্ভাবিত ড্রাগন ফলের নতুন জাতটি হল ‘বারি ড্রাগন ফল-১। যা দক্ষিণ -পূর্ব এশিয়াতে জনপ্রিয় ফল। এ ফলের আকার বড়, পাকলে খোসার রং লাল হয়ে যায় ,শাঁস গাঢ় গোলাপী রঙের, লাল ও সাদা এবং রসালো প্রকৃতির । ফলের বীজগুলো ছোট ছোট কালো ও নরম । একটি ফলের ওজন ১৫০ গ্রাম থেকে ৬০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে।

ড্রাগন ফল সাধারণত তিন প্রজাতির হয়ে থাকে-
১)লাল ড্রাগন ফল বা পিটাইয়া। এর খোসার রঙ লাল ও শাঁস সাদা। এই প্রজাতির ফলই বেশি দেখতে পাওয়া যায়।
২) কোস্টারিকা ড্রাগন ফল। খোসা ও শাঁস উভয়ের রঙই লাল।
৩) হলুদ রঙের ড্রাগন ফল। এই জাতের ড্রাগন ফলের খোসা হলুদ রঙের ও শাঁসের রঙ সাদা।
ড্রাগন ফল ভিটামিন সি, মিনারেল এবং উচ্চ ফাইবারযুক্ত।ফলে ফিবার, ফ্যাট, ক্যারোটিণ, প্রচুর ফসফরাস, এসকরবিক অ্যাসিড, প্রোটিন ,ক্যালসিয়াম, আয়রন রয়েছে।প্রতি ১০০ গ্রাম ড্রাগন ফলে জল ৮০-৯০ গ্রাম,শর্করা ৯-১০ গ্রাম,প্রোটিন ০.১৫-০.৫ গ্রাম,আঁশ ০.৩৩-০.৯০ গ্রাম,খাদ্যশক্তি- ৩৫-৫০ কিলোক্যালরিচর্বি ০.১০-০.৬ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৬-১০ মিলিগ্রাম ,আয়রন ০.৩-০.৭ মিলিগ্রাম,ফসফরাস ১৬-৩৫ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়।

ড্রাগন ফলের গুরুত্ব অপরিসীম। ক্যারোটিন সমৃদ্ধ থাকায় চোখ ভালো রাখে,আঁশের পরিমাণ বেশি থাকায় হজম শক্তিতে সহায়তা করে, এছাড়া আঁশ শরীরের চর্বি কমায়।
সাধারণত ড্রাগন ফলে বিদ্যমান প্রোটিন শরীরের যাবতীয় বিপাকীয় কাজে সহায়তা করে থাকে।এর ক্যালসিয়াম হাড় শক্ত ও দাঁত মজবুত রাখে।ভিটামিন বি-৩ রক্তের কোলেস্টেরল কমায় এবং ত্বক মসৃণ রাখে।
ভিটামিন সি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ত্বক , দাঁত ও চুল ভালো রাখতে সাহায্য করে।
সাধারনত ড্রাগন উঁচু ও মাঝারি উঁচু উর্বর জমিতে চাষ হয়।