বৃহস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

রামকে নিয়ে রসিকতা, অধ্যাপকের বিরুদ্ধে মামলা

News Sundarban.com :
আগস্ট ১৩, ২০২০
news-image

হিন্দু সম্প্রদায়ের দেবতা রামকে নিয়ে রসিকতার করায় ধর্মীয় অনুভূতি আঘাত লাগার অভিযোগে ভারতের শিলচরের আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। অযোধ্যায় যেদিন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রামমন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করার আগে ভূমি পূজা করছিলেন, সেদিন অনিন্দ্য সেন নামের ওই অধ্যাপক ফেসবুকে চার লাইনের ছোট একটি পোস্ট দিয়েছিলেন। এতে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়া হয়েছে বলে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন আরএসএস-এর ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের এক সদস্য। এর জেরে ওই অধ্যাপকের বিরুদ্ধে ধর্মাবমাননার অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়।

এক পুরুষ ও এক নারীর মধ্যে কাল্পনিক কথোপকথনের মাধ্যমে রসিকতার ছলে রামায়ণে বর্ণিত সীতাকে পরিত্যাগের কাহিনিটি উল্লেখ করেন ওই অধ্যাপক। ইংরেজিতে লেখা ওই পোস্টের বাংলা অনুবাদ করলে দাঁড়ায়, ‘এটা একটা নাটক। নাটকটি তারই জন্য যিনি লোকনিন্দার ভয়ে নিজের স্ত্রীকে ত্যাগ করেছিলেন।’ ওই পোস্টে অপর এক ব্যক্তি কমেন্ট করেন, ‘ও, তুমি শ্রীরামচন্দ্রের কথা বলছ?’

তবে রসিকতা হিসেবে পোস্টটি দেওয়া হলেও অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের এক সদস্য একে রসিকতা হিসেবে নিতে পারেনি। পুলিশের কাছে গিয়ে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগ তুলেছেন ওই অধ্যাপকের বিরুদ্ধে। তবে একে রামচন্দ্রকে অপমান করার মতো কিছু দেখছেন না অনিন্দ্য সেনের আইনজীবী। তার মতে, এই পোস্টে রামকে অপমান করার মতো কোনো কিছু পাওয়া যাচ্ছে না।

তার যুক্তি হলো, সব রামই ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব নন। শ্রীরামচন্দ্র অনেকেরই নাম হতে পারে। এখানে ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব রামচন্দ্রকে টেনে আনার কোনো যুক্তি নেই। টেনে আনাটা খুবই বিপজ্জনক বিষয় হতে পারে। সুপ্রিম কোর্ট মানুষের বাকস্বাধীনতাকে স্বীকার করে নিয়েছে। আর যেসব ধারায় এ অভিযোগ উঠেছে, তার কোনোটাই ধোপে টেকে না।

বাল্মিকীর রামায়ণের প্রসঙ্গ তুলে অভিযুক্ত অধ্যাপকের পক্ষ নিয়েছে বেদ-পুরাণ নিয়ে গবেষণা করেন এমন একজন অধ্যাপক। রোহিণী ধর্মপাল নামের ওই অধ্যাপক বলেন, ‘বনবাস থেকে ফিরে সীতার সতিত্ব নিয়ে প্রজাদের কানাকানির মুখে পড়েন রামচন্দ্র। শেষ পর্যন্ত প্রজারঞ্জক রাজা হিসেবে তিনি সীতাকে নির্বাসনে পাঠান। রামায়ণেও বাল্মিকী এটা উল্লেখ করেছেন। সীতাকে বনবাসে পাঠানোর কথা বলাটা যদি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা হয়, তাহলে বাল্মিকীর নিজেও তো সে দোষে অভিযুক্ত হওয়ার কথা। এটা কোনোভাবেই ধর্মাবমাননা হতে পারে না।’ – বিবিসি বাংলা

আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য তপোধীর ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘এর হিসাব অত সহজ নয়। এর পেছনে রাজনৈতিক অঙ্ক রয়েছে। হিন্দুত্বাদীরা সারা ভারতে ঝামেলা পাকিয়ে বেড়াচ্ছে। এরা মানুষের মুখ চেপে ধরতে চাইছে। এর নিন্দার ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না।’