বুধবার, ২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৫৫ জন কর্মীকে পাকাপাকিভাবে ছাঁটাই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আর্সেনাল

News Sundarban.com :
আগস্ট ৬, ২০২০
news-image

গাব্রিয়েল মার্তিনেল্লি সবাইকে চমকে দিয়েছেন বললে কম বলা হয়। মাত্র ১৮ বছর বয়সে প্রিমিয়ার লিগে খেলতে এসেছেন। অচেনা এক পরিবেশে ব্রাজিল থেকে এসেই মৌসুমে ১০ গোল করেছেন। ব্রাজিলিয়ান ভবিষ্যত প্রজন্ম নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ভিনিসিয়ুস জুনিয়র, রদ্রিগো, নেরেসদের সঙ্গে এখন বেশ ভালোভাবেই আলোচিত হয় মার্তিনেল্লির নাম। কিন্তু এই প্রতিভার কথা কে জানত?

ইউরোপে জায়গা করে নেওয়া অধিকাংশ দক্ষিণ আমেরিকান ফুটবলারই হয় বয়সভিত্তিক জাতীয় দলের পারফরম্যান্সে আলো কাড়েন, কিংবা দেশের বিখ্যাত সব একাডেমিতে বেড়ে ওঠার সুবাদে ইউরোপের স্কাউটদের নজরে পড়েন। মার্তিনেল্লির গল্পটা একদম অন্যরকম। আর্সেনালে যাওয়ার আগে কখনো ব্রাজিলের বয়সভিত্তিক দলে খেলেননি। খেলতেন ইতুয়ানোর হয়ে। ব্রাজিল ফুটবলের তৃতীয় স্তরে খেলে এই ক্লাব। সে ক্লাবে খেলা এক কিশোরকেই প্রিমিয়ার লিগে খেলার যোগ্য মনে হয়েছিল ফ্রান্সিস কাজিজাওয়ের। এই ইংলিশ স্কাউট ব্রাজিলে গিয়ে ইতুনার খেলা দেখতে গিয়েছিলেন শুধু মার্তিনেল্লির দক্ষতা বোঝার জন্য।
এ দলবদলের জন্য খরচ হওয়া আট মিলিয়ন ইউরোকে এখন খুবই তুচ্ছ মনে হচ্ছে। মার্তিনেল্লির গোল করার দক্ষতাকে এর দ্বিগুন-তিনগুন দামেও যে পাচ্ছে না ক্লাবগুলো। আর্সেনালের সমর্থকেরা তাই কৃতজ্ঞ থাকবেন কাজিজাওয়ের প্রতি। অবশ্য এবারই প্রথম নয়, পেশাদার ফুটবলে চুক্তি করার বয়স হতে না হতেই আর্সেনালকে আরও দুটি রত্ন এনে দেওয়ার কৃতিত্বও তাঁর। হেক্টর বেয়েরিন ও সেস্ক ফ্যাব্রিগাসের মতো খেলোয়াড়দের বার্সেলোনা থেকে বের করে আনার কাজটা কাজিজাওই করেছিলেন।
সেই কাজিজাওকে ছাঁটাই করছে আর্সেনাল! এমন চমক জাগানো খবর শোনা গেল কাল। কাজিজাও একা নন, মোট ৫৫ জন কর্মীকে পাকাপাকিভাবে ছাঁটাই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আর্সেনাল। কারণ, করোনাভাইরাসের কারণে ক্লাবের ক্ষতি কমিয়ে আনার জন্য অপ্রয়োজনীয় বোধ হওয়া বিভাগগুলোতে লোক কমাতে চাইছে তারা। এরই ফলে দুই দশকের বেশি দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কে দাড়ি টানতেও আপত্তি নেই ক্লাবের।
এ ব্যাপারে অনেক বড় এক বিবৃতি দিয়েছে আর্সেনাল, ‘এটা এখন স্পষ্ট আমরা যতটা আশা করেছিলাম, আয় কমার ক্ষেত্রে তার চেয়েও অনেক গুরুতর ও দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব পড়ছে। এখন পর্যন্ত যা বোঝা যাচ্ছে, আগামী মৌসুমের শুরুতেও দর্শক এমিরেটস স্টেডিয়ামে ফিরতে পারবেন না। এবং তারপর সুযোগ হলেও সংখ্যাটা খুব কম হবে। সারা বিশ্বেই অর্থনীতি নিয়ে পূর্বাভাসে নেতিবাচক মনোভাব।’
স্টেডিয়ামে দর্শক না যেতে পারায় টিকিট থেকে প্রাপ্ত অর্থ ও স্মারক বিক্রির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সব ক্লাব। এর ফলে অনেক ক্লাবই আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। প্রাথমিক ধাক্কা কাটাতে আর্সেনালের খেলোয়াড়েরা ১২.৫ ভাগ বেতন কমানোর সিদ্ধান্তে রাজি হয়েছিলেন। কিন্তু আর্সেনালের ধারণা এটা যথেষ্ট নয়, ‘আমরা আশা করছি দ্বিতীয় কোনো ধাক্কা (করোনা সংক্রমণ) আসবে না কিন্তু আমাদের অনেক অনিশ্চয়তার কথা মাথায় রাখতে হবে এবং সে অনুযায়ী প্রস্তুত হতে হবে।’

‘আমরা চেষ্টা করেছি যতদিন সম্ভব আমাদের ক্লাবের সবার চাকরি ও বেতন নিশ্চিত করার। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এমন এক পর্যায়ে এসেছি যেখানে ৫৫ জনের চাকরি অপ্রয়োজনীয় বলে মনে হচ্ছে আমাদের। এ সিদ্ধান্ত আমরা হালকাভাবে নিচ্ছি না। ক্লাবের সব দিক বিবেচনা করে এবং আমাদের খরচের কথা মাথায় রেখে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এখন আমরা এই প্রস্তাবের জন্য বাধ্যতামূলক ৩০ দিনের পরামর্শ দেওয়ার সময়টায় উপস্থিত হয়েছি।’
আর্সেনাল অবশ্য সমর্থকদের আশ্বস্ত করেছে, দলবদলের বাজারে সম্ভাব্য সেরা দল গঠনে কোনো ঘাটতি থাকবে না। বরং দলে আরও তারকা আনার ব্যাপারে আশা দেখানো হয়েছে। আর এটাই আর্সেনালের এ ছাঁটাই প্রক্রিয়া নিয়ে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। করোনার ধাক্কা শুধু আর্সেনালে লেগেছে এমন নয়। বিশ্ব ফুটবলের সবচেয়ে দামী ব্র্যান্ড বলে বিবেচিত হওয়া রিয়াল মাদ্রিদও খেলোয়াড়দের বেতন কমিয়েছে। ক্লাবকে আর্থিক ক্ষতি থেকে বাঁচাতে দুই দফা বেতন কমিয়েছে তারা। এবং খেলোয়াড়দের এই ত্যাগকে সম্মান জানিয়ে এবারের দলবদলে বাড়তি খরচ না করার ঘোষণা দিয়ে রেখেছে।

দুই ক্লাবের পরিস্থিতি অবশ্য ভিন্ন। লা লিগা জয়ের পর রিয়াল নিজেদের স্কোয়াডের ওপর আস্থা রাখতেই পারে। কিন্তু লিগে অষ্টম হওয়া আর্সেনালকে স্কোয়াড ঢেলে সাজাতেই হবে। তবু স্টান ক্রোয়েঙ্কার মত ধনকুবের ক্লাবের মালিক হওয়ার পরও কেন আর্সেনালকে এমন সিদ্ধান্ত নিতে হবে, এ নিয়ে প্রশ্ন জাগে। আর্সেনালের বর্তমান স্কোয়াডের বেতন বার্ষিক ২০০ মিলিয়ন পাউন্ড। এর মাঝে গত এক মৌসুম ধরে ক্লাবে প্রায় অপ্রয়োজনীয় ঠেকা মেসুত ওজিলই পাচ্ছেন ১৮ মিলিয়ন পাউন্ডের বেশি। আর ৫৫ কর্মীকে ছাটাই করে আড়াই মিলিয়ন পাউন্ড খরচ বাঁচাবে আর্সেনাল। অর্থাৎ ক্লাবের খেলোয়াড়দের বেতনের মাত্র ১ শতাংশ কমালেই ৫৫ জন ব্যক্তিকে এখন জীবিকা নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগতে হয় না। রিয়াল থেকে ধারে খেলতে যাওয়া দানি সেবায়োসের বেতনও এর চেয়ে বেশি।
আর্সেনালের সিদ্ধান্ত নিয়ে আরও প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে কালকেই ছড়ানো আরেক খবর। চেলসিতে চুক্তি শেষ হয়ে যাওয়া উইলিয়ানকে মুফতে দলে নিতে যাচ্ছে আর্সেনাল। কিন্তু অন্য ক্লাব বেছে না নিয়ে আর্সেনালকে কথা দেওয়ার জন্য উইলিয়ানকে নাকি ১০ মিলিয়ন পাউন্ড সাইনিং মানি হিসেবে দেবে আর্সেনাল। সে সঙ্গে উইলিয়ানের বেতন তো আছেই।
গত সপ্তাহেই এফএ কাপ জিতে দুটি লাভ হয়েছে আর্সেনালের। এক ধাক্কায় ক্লাবের কোষাগারে শিরোপা জয়ের ৩.৬ মিলিয়ন পাউন্ড যোগ হয়েছে। সে সঙ্গে ইউরোপা লিগ নিশ্চিত হওয়ায় আগামী মৌসুমে আরও অন্তত ১০ মিলিয়ন পাউন্ডের ব্যাপারে আশ্বস্ত হয়েছে তারা। আরেকটি কাজও করেছে তারা, সমাজে ইতিবাচক ভূমিকা রাখার প্রতিশ্রুতি দেওয়া এক চুক্তিও করেছে। কিন্তু সে চুক্তির এক সপ্তাহের মধ্যেই অনেকের চোখে অপ্রয়োজনীয় এক খেলোয়াড়কে দলে টানার জন্য অর্থ ব্যয় করে এবং ৫৫ জন কর্মী ছাটাই করে সম্পূর্ণ ভিন্ন বার্তাই কি দিচ্ছে না আর্সেনাল? অন্তত সাবেক গানার ইয়ান রাইট তো এমনটাই মনে করছেন, ‘মনে রেখ কে তুমি, কী তুমি এবং কাদের মুখপাত্র তুমি।’