শনিবার, ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সর্প বিশেষঞ্জ নিজের জীবন বাঁচানোর জন্য যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন

News Sundarban.com :
আগস্ট ৬, ২০২০
news-image

বিশ্লেষণ মজুমদার, ক্যানিং –

উত্তর ২৪ পরগনা জেলার সন্দেশখালি থানার অধিনস্ত জেলিয়াখালি গ্রামে বসবাস করেন বৃদ্ধ তামিজ উদ্দিন সরদার।বুধবার সকালে তাঁকে বিষধর কেউটে সাপে কামড় দিলে নিরুপায় হয়ে তড়িঘড়ি চিকিৎসার জন্য ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে তাঁর চিকিৎসা চলছে। বর্তমানে এই বৃদ্ধ কে সাপে কামড়ানোর প্রতিষেধক এভিএস ১০ টি দেওয়া হয়েছে বলে ক্যানিং মহকুমা হাসপাতাল সুত্রের খবর।উল্লেখ্য ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালের সর্প বিশেষঞ্জ চিকিৎসক সমর রায়। তিনি ক্যানিং কোভিড হাসপাতালেরও চিকিৎসক।তিনি হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় একটি ভাড়া বাড়িতে বসবাস করতেন।

গত কয়েকদিন আগে তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়ে ভাড়া বাড়িতেই আইসোলেশনে রয়েছেন।এমন খবর চাউর হতেই এলাকার লোকজন সর্প বিশেষঞ্জ তথা ক্যানিং কোভিড হাসপাতালের চিকিৎসক সমর রায় কে উৎখাত করে তাড়িয়ে দেওয়ার তোড়জোড় শুরু করে। যদিও ক্যানিং ১ বিডিও’র নিলাদ্রী শেখর দে’র কড়া পদক্ষেপে পিছু হটেন এলাকার লোকজন।বর্তমানে করোনা আক্রান্ত এই সর্প বিশেষঞ্জ নিজের জীবন বাঁচানোর জন্য যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন। তা স্বত্বে ও ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে সাপে কামড়ানো রোগী ভর্তি হতেই অস্থির হয়ে ওঠেন এই সর্প বিশেষঞ্জ চিকিৎসক।বর্তমানে নিজের জীবন বিপন্ন করে অন্যের জীবন বাঁচানোর জন্য ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ন। আইসোলেশন থাকায় নিরুপায় তিনি। অগত্যা হাসপাতালে ফোন করে সাপে কামড়ানো রোগীর সম্পর্ক ঘন্টায় ঘন্টায় খবর নিচ্ছেন এবং অসুবিধা হলে কি কি করণীয় সেই মতো ফোনে পরামর্শ দিচ্ছেন।চিকিৎসাও চলছে বেশ ভালো।

যিনি নিজের জীবন বিপন্ন করে দুশোর উপর করোনা রোগী কে সুস্থ করছেন। পরিশেষে নিজেই আক্রান্ত।নিজের জীবন বিপন্ন,তা স্বত্বেও তিনি ফোনের মাধ্যমে সাপে কামড়ানো রোগীর খোঁজ খবর নেওয়ায় এক বিরল দৃষ্টান্তের নজীর।অথচ এমন মানবিক চিকিৎ সক কে কয়েক দিন আগেই বিভ্রান্তীর মধ্যে পড়তে হয়েছিল বেশকিছু অমানবিক মানুষের সৌজন্যে।
উল্লেখ্য অন্যান্য দিনের মতো মঙ্গলবার রাতে বাড়ির অদূরে একটি নালায় মাছ ধরার জন্য একটি নালায় ঘুনি বসিয়ে ছিলেন বছর আশি বয়সের বৃদ্ধ তামিজ উদ্দিন সরদার। সেই মতো মাছ ধরার জন্য বুধবার সকাল ৬ টা নাগাদ গিয়েছিলেন ঘুনি তুলতে।ঘুনি তুলতেই বিশাল বড় একটি কেউটে সাপ ফোঁস ফোঁস শব্দে বিশাল গর্জন করতে থাকে।তামিজ উদ্দিন কোন রকমে জল থেকে ঘুনি তুলে ডাঙায় এনে সাপটি বের করে লাঠি দিয়ে মেরে ফেলেন। সাপটি মারার আগেই আচমকা তামিজ কে কামড় বসিয়ে দেয়।যদিও বৃদ্ধ কোন প্রকার বুঝতে পারেন নি। তিনি ঘুনি এবং অল্প দুএকটি মাছ নিয়ে বাড়িতে ফিরে এসে বিশ্রাম করতে থাকেন।সময়ের সাথে বৃদ্ধার হাত যন্ত্রণা করতে থাকে এবং হাত টি নীল হয়ে যায়।তখনই বৃদ্ধ বাড়ির লোকজনদের কে জানায় হয়তো সাপে কামড় দিয়েছে তাকে।

যদিও তিনি বুঝতে পারেন নি এবং সাপটিকে মেরে ফেলেছেন।পরিবারের সদস্যরা আর একমুহূর্ত সময় দেরী না করে তাঁকে স্থানীয় সরবেড়িয়া হাসপাতালে নিয়ে যায় ।সেখানে বৃদ্ধের অবস্থা আশাঙ্কাজনক হলে দুপুরেই তাঁকে ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যায় চিকিৎসার জন্য।সেখানেই আইসোলেশনে থাকা সর্প বিশেষঞ্জ তথা কোভিড হাসপাতালের চিকিৎসক সমর রায়ের পরামর্শে ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালের অন্যান্য চিকিৎসকরা বৃদ্ধ তামিজ উদ্দিনের চিকিৎসা শুরু করেন। তাঁকে ১০ টি এভিএস দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে বৃদ্ধ বিপদ মুক্ত অবস্থায় ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। অন্যদিকে চিকিৎসক সমর রায়ে এমন মানবিক দিক জানতে পেরেই প্রশংসায় পঞ্চমূখ বিশিষ্টজনেরা।