শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বাঘের সাথে তুমুল লড়াই, নিখোঁজ এক মৎস্যজীবী

News Sundarban.com :
জুলাই ২৮, ২০২০
news-image

সুভাষ চন্দ্র দাশ, সুন্দরবন 

সুন্দরবন জঙ্গলে বাঘের আক্রমণে নিখোঁজ হলেন এক মৎস্যজীবী। নিখোঁজ মৎস্যজীবীর নাম ধরণী মন্ডল(৫৮)। ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার বিকালে প্রত্যন্ত সুন্দরবনের ঝিলা ৪ নম্বর জঙ্গল সংলগ্ন এলাকায়।
স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে অভাবের তাড়নায় পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী বছর ৫৮ বয়সের ধরণী মন্ডল সুন্দরবনের নদী খাঁড়িতে মাছ কাঁকড়া ধরার কাজ করে জীবীকা নির্বাহ করতেন।করোনার তান্ডবে লকডাউন চলায় সুন্দরবনের নদীখাঁড়িতে মাছ কাঁকড়া ধরা নিষিদ্ধ হয়ে যায়। সংসার চালানোর জন্য বিপাকে পড়ে যায় ধরণী মন্ডল সহ অন্যান্য মৎস্যজীবীরা।

চরম সমস্যায় পড়ে গিয়ে শেষ পর্যন্ত গোসাবা ব্লকের কুমীরমারী গ্রাম থেকে মঙ্গলবার সকালে তাঁর তিন সঙ্গী সাথী কে নিয়ে সুন্দরবন জঙ্গলে রওনা দিয়েছিল মাছ কাঁকড়া ধরার জন্য। এদিন বিকালে ধরণী ও তার তিন সঙ্গী মৎস্যজীবী সুন্দরবনের ঝিলা ৪ নম্বর জঙ্গল লাগোয়া নদীখাঁড়িতে নৌকায় বসে মাছ কাঁকড়া ধরছিলেন। ঠিক সেই সময় আচমকা সুন্দরবনের গভীর জঙ্গল থেকে একটি বাঘ বেরিয়ে আসে। ধরণী কে টার্গেট করে তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে নদীর জলে ফেলে দেয়। এরপর মুহূর্তে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ঘাড়ে করে তুলে নিয়ে সুন্দরবনের গভীর জঙ্গলে চলে যায়। সঙ্গীকে বাঘের আক্রমণ থেকে বাঁচানোর জন্য অপর তিন সঙ্গী কাঁকড়া ধরার শিক ,নৌকার বৈঠা নিয়ে বাঘের সাথে তুমুল লড়াই শুরু করেন। অবশেষে বাঘের হিংসাত্মক আক্রমণের সামনে নিরুপায় হয়ে পিছু হটে তিন সঙ্গী। বাঘ তার শিকার নিয়ে গভীর জঙ্গলে চলে যায়। তিন সঙ্গী নৌকার বৈঠা বেয়ে দ্রুত গ্রামে ফিরে এসে খবর দেয় ধরণী মন্ডলের পরিবারের সদস্যদের কাছে। আচমকা মৃত্যুর খবর শুনে শোকে কান্নায় ভেঙে পড়েন নিখোঁজ মৎস্যজীবীর পরিবার। এমন দুর্ঘটনার কথা জানতে পেরে বাঘের আক্রমণে নিখোঁজ মৎস্যজীবীর দেহ উদ্ধারের জন্য গ্রামের অন্যান্য মৎস্যজীবীরা নৌকা করে রওনা দেয় ঘটনাস্থলে।স্থানীয় সুত্রে জানাগেছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ধরণী মন্ডলের দেহের কোন হদিশ মেলেনি।

অন্যদিকে বাঘের আক্রমণে মৎস্যজীবীর মৃত্যুর ঘটনা প্রসঙ্গে শোক প্রকাশ করে সুন্দরবন মৎস্যজীবী রক্ষা কমিটির ক্যানিং মহকুমার সভাপতি শম্ভু সাহা বলেন “ঘটনাটি অত্যন্ত মর্মান্তিক। সুন্দরবন জঙ্গলে প্রতিনিয়ত বাঘের আক্রমণে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। দরিদ্র মৎস্যজীবীরা জীবন জীবীকার তাগিদে জীবন বিপন্ন করে সুন্দরবনের নদীখাঁড়িতে মাছ কাঁকড়া ধরতে না যায় এবং বিকল্প রোজগারের সন্ধান পায় সে বিষয়ে সরকার মূখ্য ভূমিকা নিলে বাঘের আক্রমণে মৃত্যুর মিছিল কমতে বাধ্য হবে। উদ্যোগ এবং অসচেতনতার অভাবেই সুন্দরবনে বাঘের আক্রমণে মৃত্যুর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে।”
অন্যদিকে সুন্দরবন এলাকায় ব্যাঘ্র বিধবাদের নিয়ে কাজ করা শিবগঞ্জ চম্পা মহিলা সোসাইটির কর্ণধার তথা বিশিষ্ট সমাজসেবী শিক্ষক অমল নায়েক বলেন “সুন্দরবন জঙ্গলে বাঘের আক্রমণে প্রতিনিয়ত মৃত্যু মিছিল বেড়ে চলেছে। স্বামী হারিয়ে বিধবা হচ্ছে অসংখ্য মায়েরা।সুন্দরবনে দরিদ্র মৎস্যজীবীদের জন্য সরকার অবিলম্বে বিকল্প আয়ের সংস্থা না করলে সুন্দরবনে বাঘের আক্রমণে মৃত্যু মিছিল কমবে না”।