মঙ্গলবার, ২৩শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ওষুধ কেনার সামর্থ নেই,যে কোন মুহূর্তে পৃথিবীর বুক থেকে হারিয়ে যেতে পারে কোলন আক্রান্ত ছাত্র

News Sundarban.com :
জুন ১৯, ২০২০
news-image

সুভাষ চন্দ্র দাশ,ক্যানিং –

ওষুধ কেনার সামর্থ নেই,যে কোন মুহূর্তে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে পৃথিবীর বুক থেকে চিরতরে হারিয়ে যেতে পারে কোলন আক্রান্ত এক ছাত্রী।প্রিয়াংকা মন্ডল নামে বছর ২৪ বয়সের এই ছাত্রীর বাড়ি প্রত্যন্ত সুন্দরবন এলাকার গোসাবা ব্লকের রাঙাবেলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের রাজাপুর গ্রামেই।বাবা সুশান্ত মন্ডল একজন দীনমজুর শ্রমিক। মা অর্চনা মন্ডল গৃহবধু। একমাত্র ভাই সন্দীপ মন্ডল।ছেলে-মেয়ে-স্ত্রীকে নিয়ে দিব্যি চলছিল দরিদ্র পরিবারের এই সংসার।২০০৯ সালে বিধ্বংসী আয়লার দাপটে সুন্দরবন এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।আয়লার ঝাপটায় নদীবাঁধ ভেঙে পড়ে। সুশান্ত বাবুর ১৫ কাঠার বসত বাড়ি নদী গ্রাস করে নেয়। সবকিছু বাধাবিপত্তি অতিক্রম করে সংসার নির্বাহ করছিলেন সুশান্ত বাবু। গত ২০১৬ সালে পাঠানখালি হাজীদেশারত কলেজে বিএ তৃতীয় বর্ষে পড়াশোনা করাকালীন দুরারোগ্য কোলন ডিজিট রোগের উপসর্গ দেখা দেয় মেয়ে প্রিয়াংকার।তা স্বত্বেও পড়াশোনা চালিয়ে ৪৫ শতাংশ নম্বর নিয়ে কলা বিভাগে স্নাতক হয়। ইতিমধ্যে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হওয়ায় প্রিয়াংকার পরিবারের লোকজন বিমর্ষ হয়ে পড়েন।স্থানীয় চিকিৎসক থেকে শুরু করে কলকাতা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল,কেপিসি,নীলরতন সরকার হাসপাতাল,চিত্তরঞ্জন হাসপাতাল সহ রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা করালেও কোন সুরাহা হয়নি।অবশেষে কলকাতার অরবিন্দ সেবানিকেতন এ মেয়েকে নিয়ে চিকিৎসা করাতে যায়। সেখানেই ধরা পড়ে কোলন ডিজিট রোগ।কয়েক মাস চিকিৎসা চললেও কোন ভালো ফল না মেলায়,মেয়েকে ভালো চিকিৎসার জন্য পরিবারের সমস্ত কিছু বিক্রি করে ভেলোরে নিয়ে যায়। সেখানে দুবার গেলেও চিকিৎসকরা সাফ জানিয়েদেন কোলন ডিজিট নিরাময় সম্ভব নয়।বেঁচে থাকার জন্য আজীবন ওষুধ খেয়ে যেতে হবে।ভেলোরের চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে খাটাখাটনি করে মেয়েকে বাঁচিয়ে রাখার উদ্যোগ নেন। প্রতিমাসে প্রায় ছয় হাজার টাকার ওষুধও কিনতে থাকেন।পরিবার অবস্থা করুণ হওয়ায় প্রিয়াংকার ছোট ভাই সন্দীপ রাঙাবেলিয়া হাইস্কুলে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা বন্ধ করেদিয়ে কাজের জন্য তামিলনাডু চলে যায়। পরিবারের কর্তা সুশান্ত বাবুও অতিরিক্ত উপার্জনের জন্য ভিন জেলায় গিয়ে হীমঘরে কাজ করেন।করোনার তান্ডবে লকডাউন শুরু হওয়ায় বাড়িতে চরম সমস্যায় পড়েন মা ও মেয়ে। একদিকে বাড়িতে খাদ্য সামগ্রীর সংকট আর অপর দিকে দুরারোগ্য রোগের জন্য ওষুধ প্রয়োজন। সরকারী রেশন সামগ্রী পেয়ে দুবেলা দুমুঠো পেটের ভাত জোগাড় হলেও সমস্যায় পড়েন ওষুধের জন্য। যা এক সপ্তাহ খেলে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়ে যাবে।সোশ্যাল মিডিয়ায় মেয়েকে বাঁচানের ওষুধ চেয়ে জন্য কাতর আবেদন জানায়। স্থানীয় এক যুবক সেই আবেদন পৌঁছেদেন দিল্লীর এক পরিচিতি বাঙালীর কাছে।তিনি একমাসের জন্য ওষুধের টাকা পাঠিয়ে দেন যুবকের কাছে। সেই মতো ঐ যুবক একমাসের ওষুধ কিনে প্রিয়াংকার বাড়িতে পৌঁছে দেয়।ইতিমধ্যে প্রিয়াংকার মা অর্চনা দেবী মেয়ের চিন্তায় জর্জরিত হয়ে স্ত্রীরোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। অপরদিকে প্রিয়াংকার ভাই সন্দীপ ভিনরাজ্য থেকে ফিরলেও তাকে আক্রমণ করেছে শ্বাসকষ্ট রোগ,সুশান্ত বাবুও চর্মরোগে আক্রান্ত!পরিবারের চার সদস্যের এমন করুণ পরিস্থিতিতে প্রাণে বেঁচে থাকার জন্য দুঃর্বিষহ পরিস্থিতির সম্মূখে দাঁড়িয়ে লড়াই করতে হচ্ছে।বেঁচে থাকার লড়াই চালিয়ে গেলেও কঠিন পরিস্থিতির সম্মূখে দাঁড় করিয়েছে প্রতি মাসে ৬ হাজার টাকার ওষুধের জন্য! নিঃস্ব পরিবারের কাছে এযেন বামন হয়ে চাঁদ স্পর্শ করার গল্প।সুশান্ত বাবু জানিয়েছেন প্রতিবেশী এক যুবক এক মাসের ওষুধ দিয়েছে। কিন্ত পরিবার কোন উপার্জন নেই !আগামী দিনে কি হবে?হয়তো মেয়েকে আর বাঁচাতে পারবো না।চোখের জল ফেলতে ফেলতে তিনি আবেদন করে বলেন আগামী দিনে সরকার কিংবা কোন সংস্থা যদি প্রিয়াংকার পাশে দাঁড়িয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় তাহলে হয়তো প্রাণে বাঁচবে। আর তা না হলে আগামী দিনে পৃথিবীর বুক থেকে চিরতরে হারিয়ে যাবে। ”