শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

আন্তর্জাতিক পরিবেশ দিবসের প্রাক্কালে ত্রাণের সাথে চারাগাছ বিতরণ

News Sundarban.com :
জুন ৫, ২০২০
news-image

নিজস্ব প্রতিনিধি, ক্যানিং -৫ জুন আন্তর্জাতিক পরিবেশ দিবস। সেই আন্তর্জাতিক পরিবেশ দিবসের প্রাক্কালে প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় রাখার আহ্বান জানিয়ে আম্ফান বিধ্বস্ত প্রত্যন্ত সুন্দরবন এলাকায় চারাগাছ বিতরণ করলেন এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্যরা।বুধবার দুপুরে গোসাবা ব্লকের রাঙাবেলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের রাজাপুর,রাণীপুর সহ বাগবাগান এলাকার শতাধিক আম্ফান বিধ্বস্ত পরিবারের হাতে তুলে দিলেন ত্রাণ।পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষার জন্য শতাধিক মেহগনি চারাগাছও তুলেদেন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্যরা।গত ২০ মে সুপার সাইক্লোন আম্ফানের দাপটে সুন্দরবন সহ রাজ্যের সাত সাতটি জেলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।প্রচুর বাড়িঘর,বিদ্যুতের খুঁটি,গাছপালা সহ নদীবাঁধ ভেঙে যায় অসংখ্য নদীবাঁধ।আন্তর্জাতিক ম্যানগ্রোড অরণ্য সুন্দরবন সহ সমগ্র দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলাজুড়ে প্রায় লক্ষাধিক গাছ ভেঙে পড়ে।

চারিদিকে শুধু হাহাকার বর।কোথাও পানীয় জলের সংকট,আবার কোথাও খাবারের জন্য হাহাকার।পাশাপাশি সাইক্লোনের তান্ডবে প্রচুর বড়িঘর ভেঙে পড়ায় কোথাও কোথাও খোলা আকাশের নীচে বসবাস করছেন আম্ফান বিধ্বস্ত মানুষজন।এমতো অবস্থায় সরকারী ভাবে ত্রাণ পৌঁছালেও প্রচুর বেসরকারী সংস্থা সুন্দরবনের বিভিন্ন প্রান্তে খাদ্যসামগ্রী,পানীয়জল,ত্রিপল সহ অন্যান্য ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছেন সুন্দরবন সহ আম্ফান বিধ্বস্ত এলাকায়।আম্ফানের তান্ডবে প্রচুর গাছ এবং বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়ায় শেষমেশ সেনা জওয়ান নামাতে হয় উদ্ধার কাজের জন্য।
বিশিষ্ট পরিবেশ বিঞ্জানীদের মতামত লকডাউনে প্রকৃতি অনেকটা দূষণ মুক্ত হয়েছিল। আবার সেই প্রকৃতির করালগ্রাসে লক্ষ লক্ষ গাছ ভূপতিত হয়েছে ধরণীতলে। ফলে পরিবেশে একদিকে যেমন অক্সিজেনের ঘাটতি হয়েছে তেমনই প্রাকৃতিক বিপর্য়য রুখতে অতি অবশ্যই গাছ লাগানো প্রয়োজন। নাহলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় থাকবে না। আবারও কোন বড়সড় প্রাকৃতিক বিপর্যয় সুন্দরবনের বুকে আঘাত হানতে পারে।অন্যদিকে আম্ফান ক্ষতিগ্রস্ত সাধারণ মানুজনদের কে বাঁচানোর তাগিদে যত্রতত্র চলছে ত্রাণ শিবির।জীবনতলা থানার মঠেরদিঘী পল্লি সেবাসদন নামক এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা করোনায় লকডাউন থেকে শুরু করে আম্ফান পরবর্তী সময়ে ক্যানিং মহকুমার বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন সময়ে একাধিকবার ত্রাণ বিতরণ করে অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে। এই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার অন্যতম সদস্য খোকন মন্ডল।জন্ম জীবনতলা থানার মঠেরদিঘী গ্রামে। ক্ষেতমজুর পরিবারের অষ্টম গর্ভের সন্তান খোকন মন্ডল। তিন বছর বয়স থেকেই পোলিও রোগে আক্রান্ত হয় দুটি পা। বাবা দিন মজুর হওয়া সত্বেও চিকিৎসার কোন ঘাটতি রাখেনি। শেষ পর্যন্ত অপারেশন ও করিয়েছিলেন, কিন্তু কোন সমাধান হয়নি।তবে খোকন হার মানার পাত্র নন।মানুষের জন্য কিছু করার জন্য চিন্তাভাবনা নিয়ে এমন পরিস্থিতির মধ্যে ক্রাচে ভর দিয়েই শুরু হয় স্কুল জীবন। মঠেরদিঘী হাইস্কুল থেকে উচ্চমাধ্যমিক ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.এ পাশ করেন।পরে সমস্ত প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে নেতাজি সুভাষ মুক্ত বিদ্যালয় থেকে সমাজ সেবা নিয়ে মাষ্টার ডিগ্রী (MSW) পাশ করেন।বর্তমানে মিশনারী ওফ চ্যারিটি ( মাদার টেরেসা) তে সাইকোলজিক্যাল কাউন্সিলর হিসাবে কর্মরত। দরিদ্র পরিবারে জন্মানোর জন্য ছোট থেকেই কষ্ট অনুভব করেছেন।হাড়ে হাড়ে অনুভব করেছেন দরিদ্র পরিবারে জন্মানো করুণ বেদনাময় জ্বালা যন্ত্রণা।আর সেই কারণে কোথাও কোন মানুষ বিপদে কিংবা অসুবিধায় পড়লে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ২০১১সালে গড়ে তোলেন মঠেরদিঘী পল্লী সেবাসদন নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। শুধু মাত্র বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের নিয়েই কাজ শুরু করেছিলেন।
আবার ২০১০ সালে ট্রাকস হোম নামে একটি অনাথ আশ্রমে কোডিনেটর হিসাবে মাত্র ২৩ দিন কাজ করেছেন।
একদিকে লকডাউন আর অন্যদিকে আম্ফান।জোড়া ফলায় বিধ্বস্ত সমগ্র সুন্দরবনবাসী। প্রত্যন্ত গ্রাম গুলিতে খাবারের অভাবে কষ্ট পাচ্ছেন অসহায় মানুষজন।সেই খবর পেয়েই তাঁদের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার জন্য যোগাযোগ করেন বন্ধুবান্ধবদের সাথে।বন্ধুবান্ধব অর্পণ দাস,সাধু কয়াল ও কলকাতার বিতান স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্ণধার অসিত কুমার শাসমলের সহযোগিতায় শেষ পর্যন্ত পৌঁছে যায় সুন্দরবনের প্রত্যন্ত আম্ফান বিধ্বস্ত অসহায় পরিবারগুলির কাছে। যেখানে এখনও পর্যন্ত সরকারী ত্রাণ পৌঁছায়নি।সেখানে হাজীর হয়েই তাঁদের সাহায্য করেন বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন বছর পঁয়ত্রিশের খোকন মন্ডল।বুধবার সুন্দরবনের গোসাবা ব্লকের রাঙাবেলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের রাজাপুর,রাণীপুর,বাগবাগান এলাকায় প্রায় শতাধিক পরিবারের হাতে তুলে দেন মুড়ি,ডাল,আলু,সরষে তেল,লবন,চিনি বিস্কুট,পিঁয়াজ,হলুদ, জিরে,ন্যাপকিন সহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র।পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য শতাধিক মেহগণি চারাগাছ তুলেদেন।
খোক মন্ডল জানান “বর্তমানে আম্ফান ঝড়ে অসংখ্য গাছপালা ভেঙে বিধ্বস্ত গোটা সুন্দরবন।সুন্দরবন আমাথের গর্ব। সেই সুন্দরবন এবং আমাদের নিজেদের সুরক্ষিত রাখার জন্য প্রচুর পরিমাণ গাছ রোপণ করতে হবে। যার জন্য ত্রাণের সাথে চারাখাছ তুলে দিয়েছি।যাতে করে সকলে পরিবেশ রক্ষা করা উৎসাহ নিয়ে চারাগাছ রোপন করেন।”

আরও দেখুন