শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুর কাতর আবেদনে সাড়া দিলেন তৃণমূল যুবনেতা

News Sundarban.com :
জুন ১, ২০২০
news-image

বিশ্লেষণ মজুমদার, ক্যানিং –

ঘড়ির কাটা টিকটিক করে রাত ১২ টার দিকে এগিয়ে চলেছে।দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার সুন্দরবনের প্রত্যন্ত বাসন্তী ব্লকের বগুলাখালি গ্রামে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত বছর সাতেকের শিশুকন্যা কে নিয়ে চিন্তায় বিমর্ষ হয়ে পড়েছেন লতিকা পুরকাইত। রাত পোহালেই থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশু কন্যা পায়েল পুরকাইতের রক্তের প্রয়োজন।গত এক সপ্তাহ হন্যে হয়ে খুঁজেছেন রক্তের সন্ধানে।কোথাও জোগাড় করতে পারেনি। আনেক রক্তদাতা রক্ত দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে থাকলেও করোনা সংক্রমণের ভয়ে কেউ রক্ত দিতে চাইছেন না।হাসপাতালেও রক্তের জোগান না থাকায় চিকিৎসকরা জানিয়ে দিয়েছেন, গ্রুপ মিল করে রক্তদাতা কে সাথে করে আনলে রক্ত দেওয়া সম্ভব।না হলে রক্ত দেওয়া সম্ভব নয়।আচমকা গভীর রাতে কান্নাকাটি করে ছোট শিশু পায়েল তার মায়ের হাত থেকে ফোন নিয়ে খেলা করতে থাকে। আচমকা ফোন থেকে একটি কল চলে যায় ক্যানিং ১ ব্লক যুবতৃণমূল নেতা পরেশরাম দাসের কাছে।গভীর রাতে ফোন। ফোনের অপর প্রান্তে ছোট্ট শিশুর কন্ঠস্বর,আশ্চর্য্য হয়ে যায় যুবনেতা। তিনি পাল্টা কলব্যাক করেন।ফোন আসতেই ফোন ধরেই শিশুকন্যা পায়েল বলতেই থাকে “কাকু আমাকে বাঁচান।আমি থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত। আমার রক্তের প্রয়োজন। রক্ত না পেলে বাঁচবো না।”

গভীর রাতে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুর এমন কাতর আবেদন সারাটা রাত ঘুমাতে পারেননি এই যুবতৃণমূল নেতা।সোমবার সকালেই থ্যালাসেমিয়া আক্রান্তদের জন্য ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে আয়োজন করেন রক্তদান শিবির।সেখানেই যুবতৃণমূল নেতা পরেশরাম দাসের ডাকে সাড়া দিয়ে ৬০ জন রক্তদাতা রক্তদান করেন। রক্তদান শেষেই ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালেই থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশু পায়েল পুরকাইত ও রাজ মন্ডলের রক্তের ব্যবস্থা করেদেন এই যুবনেতা।রক্ত পেয়ে খুশিতে মন ভরে যায় দুই শিশু সহ তাদের পরিবারের সদস্যদের।
যুব তৃণমূল নেতা পরেশ রাম দাস জানিয়েছেন “রবিবার গভীর রাতে রক্ত চেয়ে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত পায়েল পুরকাইত নামে এক শিশু বাসন্তীর বগুলাখালি গ্রাম থেকে কাতর আবেদন করেছিল।থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত ছোট্ট শিশু পায়েল পুরকাইত ও রাজ মন্ডলের জন্য তড়িঘড়ি রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হয়।সোমবার থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত দুজন শিশুকে রক্ত দিতে পেরে ভালো লাগছে।পাশাপাশি প্রতিমাসে রক্তের জন্য হন্যে হয়ে ঘুয়তে না হয় তারজন্য ডোনারের ব্যবস্থা করা হবে দুজন শিশুর জন্য।”
অন্যদিকে রক্ত পেয়ে খুশি পায়েলের মা লতিকা পুরকাইত ও রাজ এর মা উমা মন্ডল।
লতিকা ও উমা দেবী জানিয়েছে “পরেশরাম দাস শেষ মুহূর্তে রক্ত জোগাড় করে দেওয়ায় প্রানে বেঁচেছে দুজন শিশু।মানবিক পরেশবাবুর কাছে আমরা কৃতঞ্জ।পরেশ বাবু না থাকলে কি যে হতো সেটা একমাত্র ভগবানইশশ জানেন। ”

উল্লেখ্য লকডাউনের শুরু থেকে কোথাও রক্তদান শিবির না হওয়ায় প্রায় প্রতিনিয়ত রক্তের সঙ্কট চলছে।সেই রক্তশূণ্যতার ঘাটতি পুরণ করার লক্ষ্যে পরেশরাম দাস ইতিমধ্যে তিনবার রক্তদান শিবির করছেন ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে। এমনকি তিনি নিজেও রক্তদান করতে দ্বিধাবোধ করেননি।জানা গেছে এপর্যন্ত পরেশ রাম দাসের উদ্যোগে প্রায় ২০০ জন রক্তদাতা স্বেচ্ছায় রক্তদান করেছেন।