মঙ্গলবার, ১৬ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

আম্ফান বিধ্বস্ত সুন্দরবনের ঝড়খালি কাঁটাজঙ্গলের বাসিন্দাদের ত্রাণ দিলেন যুবনেতা

News Sundarban.com :
মে ৩০, ২০২০
news-image

সুভাষ চন্দ্র দাশ,ক্যানিং –

করোনা কিংবা আম্ফান যাই হোক না কেন বিপদের সময় মানুষের পাশে থেকে পরিত্রাতার ভুমিকা পালন করে আসছেন ক্যানিং ১ ব্লক যুবতৃণমূল নেতা তথা সমাজসেবী পরেশরাম দাস।করোনার শুরু থেকেই বাসন্তী,ক্যানিং এলাকায় প্রায় পাঁচ হাজারের ও বেশী অসহায় মানুষকে ত্রাণ সহ অন্যান্য সাহায্য সহযোগিতা করে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। পরবর্তী আম্ফান সাইক্লোনের পর ও ধারাবাহিক ভাবে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সাহায্য সহযোগিতার কাজ করে চলেছেন।শুক্রবার সকালে প্রত্যন্ত সুন্দরবনের ঝড়খালি কাঁটাজঙ্গল এলাকার আম্ফান বিধ্বস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ালেন ত্রাণ নিয়ে। প্রায় চারশো অসহায় মানুষের হাতে তুলেদিলেন ত্রাণ সামগ্রী।

উল্লেখ্য একবুক আশা ভরসা নিয়ে ঘর বেঁধেছিল ওরা। ওরা আসলে প্রত্যন্ত সুন্দরবন এলাকার ঝড়খালির কাঁটাজঙ্গল এলাকার বাসিন্দা। জলে কুমীর আর ডাঙায় বাঘের সাথে তুমুল লড়াই করে এক বুক আশাভরসা নিয়ে সুন্দরবনবাসী হিসাবে বেঁচে রয়েছেন।গ্রামের চাষীরা ধ্বংস স্তুপেরর মাঝে দাঁড়িয়ে তবু আশার আলো দেখছেন। হয়তো আবার কোন এক মুহূর্তে আনন্দের নতুন সূর্যোদয় ঘটবে!তাঁদের আশা ভরসা আবার হয়তো সব বাধা বিপর্যয় কাটিয়ে আবারও সুন্দরবনের বুকে নতুনভাবে বসবাস শুরু করবেন নিশ্চিন্তে।তা স্বতেও তাঁদের চোখেমুখে একরাশ আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট। কারণ কয়েকদিন আগেই আম্ফান সাইক্লোনে সবকিছুই হারিয়ে গেছে যে!আশ্চর্য সেই সব হারানোর পর কোনও অভিযোগও নেই এই কাঁটাজঙ্গলের বাসিন্দাদের!সরকারি ত্রাণের আশায় চাতকের মতো তাকিয়ে। মৃদু কন্ঠে করুণ সুরে শুধুমাত্র একটাই আওয়াজ অন্তত একটি ত্রিপল আর কিছু খাবার পেলে খুব ভাল হতো।সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এই দ্বীপে সাইক্লোন নামক দানব ব্যাপক তান্ডব চালিয়ে সব কিছুই লন্ডভন্ড করে দিয়েছে।মাথা গোঁজার ঠাই নেই।খড় কিংবা চালা ঘরে পুরোটাই উড়িয়ে নিয়ে গিয়েছে।একটা খড়কুটো পর্যন্ত বাঁচেনি কিংবা চেষ্টা করেও হয়তো বাঁচাতে পারেনি কাঁটাজঙ্গলের বাসিন্দারা।এখন আবার কালবৈশাখীর ভয়। যখন তখন ঝড়-বৃষ্টি হতে পারে।গাছের তলায় আশ্রয় নেওয়া ছাড়া কোন উপায়। এলাকার অনিমেশ বেরা,তপতি জানা’রা জানিয়েছেন শুধু যে ঘরের চাল উড়েছে তা নয়,নদীর লবণাক্ত জল এলাকায় ঢুকে পুকুরের মাছগুলো সব মেরে দিয়েছে।ক্ষেতের সমস্ত ফসল নোনাজলে নিমজ্জিত হয়ে পচন ধরে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। আর ঘরবেঁধে থাকা সম্ভব নয়!পেটের ক্ষুধা নিবারণ করতে পারছি না। তারপর আবার ঘর?কোথায় পাবো টাকা?
তাহলে কি ভাবে পরিবার পরিজনদের নিয়ে এই সুন্দরবনের দ্বীপে বসবাস করবেন?এমন প্রশ্ন করতেই তপতি দেবীর জবাব “কেউ যদি একটা ত্রিপল আর কিছুু খাবার সামগ্রী দেয়,সেটা দিয়ে দিব্যি লড়াই চালিয়ে বেঁচে থাকা যাবে।”
সরকারি সাহায্যের প্রসঙ্গেও ক্ষোভ নেই। বললেন, “ওটাও তো একটা বিশাল বড় সংসার। সরকার কত দেবে?কতজনকেই বা দেবে? এই ঝড়খালির কাঁটাজঙ্গল এলাকায় প্রায় কয়েক হাজার পরিবারের বসবাস। শুধুতো আর ঝড়খালির এই কাঁটাজঙ্গলে ক্ষতি হয়নি। ক্ষতি হয়েছে সমগ্র সুন্দরবন সহ অন্যান্য এলাকাও।কারোর মাথায় ছাদ নেই।চাষের জমিতে নোনা জলে ভরপুর। একটা গাছও দাঁড়িয়ে নেই।এখানে যদি এতো ক্ষতি হয়,তাহলে গোটা রাজ্যে কত না ক্ষতি হয়েছে।
আম্ফান পরবর্তী সময়ে কাঁটাজঙ্গলের বাসিন্দাদের এমন করুণমর্মর বেদনাময় অবস্থার কথা শুনেছিলেন ক্যানিং ১ ব্লকের যুবতৃণমূল নেতা পরেশরাম দাস।এমন করুণ কাহিনী শোনার পর নিজেকে স্থীর রাখতে পারেন নি। শুক্রবার সকালে কাঁটাজঙ্গল এলাকায় গিয়ে ত্রাণ দিলেন।এলাকার প্রায় চারশো পরিবারের হাতে তুলে দিলেন পর্যাপ্ত পরিমান খাদ্যসামগ্রী।সাময়িক ভাবে ত্রাণের খাদ্যসামগ্রী পেয়ে খুশি এই কাঁটাজঙ্গলের আম্ফান বিধ্বস্ত পরিবারগুলো।
ত্রাণ দেওয়ার পর পরেশরাম দাস জানিয়েছে “এই কাঁটা জঙ্গল এলাকার আম্ফান বিধ্বস্ত বাসিন্দাদের মাথার ছাদ হিসাবে এই মুহূর্তে ত্রিপল প্রয়োজন।আগামী কয়েকদিনের মধ্যে ত্রিপলের ব্যবস্থা করে আম্ফান বিধ্বস্ত অসহায় কাঁটাজঙ্গলের বাসিন্দাদের হাতে তুলে দেবো