শনিবার, ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

রাস্তাতেই মৃত্যু রোগীর

News Sundarban.com :
মে ৯, ২০২০
news-image

রাজবংশী রায়

সরকারি হোক বা বেসরকারি- যে কোনো হাসপাতালে করোনা সন্দেহভাজন রোগী এলে তা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনা সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষে জানাতে হবে। গত ৩০ এপ্রিল এরকম একটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত ওই নির্দেশনায় বলা হয়, সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালে কোনো মুমূর্ষু রোগী কভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত বলে যদি সন্দেহ হয়, কোনো কারণে ওই হাসপাতালে ভর্তি করানো যদি সম্ভব না হয়, সেক্ষেত্রে রোগীকে অপেক্ষমাণ রেখে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষের চারটি নম্বরের যে কোনোটিতে ফোন করে ওই রোগীর চিকিৎসা বা ভর্তি-সংক্রান্ত বিষয়ে পরামর্শ নিতে হবে।

সংশ্নিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, করোনার লক্ষণ-উপসর্গ নিয়ে কোনো রোগী সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হতে গেলে তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। রোগী ও তাদের স্বজনের কাছ থেকে এমন বেশকিছু অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এ নির্দেশনা জারি করে। বাস্তবতা হচ্ছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওই নির্দেশনার পরও হাসপাতাল থেকে রোগী ফিরিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটছে। সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলো ওই নির্দেশনা আমলে নিচ্ছে না।

গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর সরকারি-বেসরকারি ছয়টি হাসপাতালে সারাদিন ঘুরেও ভর্তি হতে পারেননি শেওড়াপাড়ার বাসিন্দা রেবেকা সুলতানা চৌধুরী। করোনা ভাইরাস নেই- এমন নথি দেখাতে না পারাসহ নানা অজুহাতে ওই নারীকে কোনো হাসপাতালেই ভর্তি রাখা হয়নি। করোনা পরীক্ষার জন্য সরকারি তিনটি হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্য বাতায়নের ৩৩৩ নম্বরে স্বজনরা বারবার ফোন দিলেও সাড়া মেলেনি। শেষ পর্যন্ত ৯ ঘণ্টা ধরে এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ঘুরতে ঘুরতে বিকেল ৫টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সেই তার মৃত্যু হয়। স্বজনরা জানান, অসুস্থ হওয়ার পর রোগী নিয়ে তারা বিআরবি, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন, বারডেম হাসপাতাল, আয়েশা মেমোরিয়াল, যা বর্তমানে ইউনিভার্সাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে গিয়েছিলেন। পরীক্ষার জন্য মুগদা হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়েও গিয়েছিলেন। কোনো হাসপাতালই রোগীকে ভর্তি করেনি। করোনার পরীক্ষাও করাতে পারেননি তারা।

এ অবস্থায় সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের উদ্দেশ্যে জারি করা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওই নির্দেশনা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। সংশ্নিষ্ট হাসপাতালগুলোর সঙ্গে কথা বলে সমকাল জানার চেষ্টা করেছে যে, তারা ওই রোগীর চিকিৎসা কিংবা ভর্তির বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হটলাইনে যোগাযোগ করেছিলেন কিনা? ইউনিভার্সাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চেয়ারম্যান প্রীতি চক্রবর্তী সমকালকে বলেন, ওই রোগীকে তাদের হাসপাতালে কয়েক ঘণ্টা রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছিল। রোগীর স্বজনরা হৃদরোগজনিত সমস্যার কথা বলার পর হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। এরপর আরও দুই চিকিৎসক তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। ইসিজি থেকে শুরু করে কয়েকটি পরীক্ষা করা হয়। এতে তার হৃদরোগসহ অন্য কোনো শারীরিক সমস্যা খুঁঁজে পাওয়া যায়নি। এ অবস্থায় চিকিৎসকরা তাকে করোনা সন্দেহভাজন হিসেবে গণ্য করে তাকে নমুনা পরীক্ষার পরামর্শ দেন। এরপরই স্বজনরা রোগী নিয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হটলাইনে জানানোর নির্দেশনার বিষয়ে অবহিত নন বলে জানান প্রীতি চক্রবর্তী।

হার্ট ফাউন্ডেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা শাহজাদী ডলি সমকালকে বলেন, ওই রোগী বিআরবি হাসপাতালে নিয়মিত ডায়ালাইসিস করতেন। তাকে হার্ট ফাউন্ডেশনে রেফার করা হয়। চিকিৎসকরা কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখতে পান, রোগীর কিডনিজনিত সমস্যার পাশাপাশি বহুবিধ রোগ রয়েছে। কিন্তু হার্ট ফাউন্ডেশনে কিডনি ডায়ালাইসিসহ ওইসব রোগের চিকিৎসার ব্যবস্থা না থাকায় ভর্তি করা হয়নি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনার বিষয়ে তারাও অবহিত নন বলে জানান