শনিবার, ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

চরম বিভ্রান্তির মধ্যে সুরাপায়ীরা মদ পেয়ে খুশি হয়ে বাড়িতে ফিরছে

News Sundarban.com :
মে ৫, ২০২০
news-image

বিশ্লেষণ মজুমদার, ক্যানিং –

রাজ্যেমদের দোকান খোলা নিয়ে  রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট  ভাবে কোন নির্দেশ না আসায়  সুরাপায়ীদের মধ্যে চুড়ান্ত বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। ৪ মে সকাল ১০ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত রেড-অরেঞ্জ-গ্রীন সবকটি জোনে মদের দোকান খুলে যাবে বলে সর্বত্র খবর রটে যায়। সেই মত সুরাপ্রেমীরা দোকানের সামনে ভীড় জমায়।

বিগত দুই দফা লকডাউন মিলিয়ে এপর্যন্ত পর্যন্ত প্রায় ৪১ দিন বাজারে মদ নিখোঁজ ছিল। এমনিতেই সুরাপায়ীদের মধ্যে চরম হাহাকার সৃষ্টি হয়েছে। তার ওপর একশ্রেণীর অসাধু সরকারি লাইসেন্স প্রাপ্ত মদের দোকানদারদের সঙ্গে যোগসাজসে পিছনের দরজা দিয়ে সরকার নির্ধারিত মূল্যের প্রায় তিন-চার গুণ বেশি দামে মদ বিক্রিকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছিল।সবমিলিয়ে কবে থেকে সরকারি ভাবে মদ পাওয়া যাবে- তাই নিয়ে উদ্বেগ ও কৌতূহল চরমে পৌঁছায় চাতকের মতো তাকিয়ে থাকা সুরাপায়ীদের।উল্লেখ্য কেন্দ্রীয় সরকার লকডাউনের প্রথম দিন থেকেই সমগ্র দেশে মদ বিক্রি নিষিদ্ধ করে দেয়। যদিও দ্বিতীয় দফার লকডাউন শেষ হবার পর তা তুলে নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। কিন্তু ‘আবগারি’ দপ্তর রাজ্যের অধিনস্ত হওয়ায় ,এক্ষেত্রে রাজ্যের নিজের মত সিদ্ধান্ত নেবার স্বাধীন অধিকার রয়েছে। এছাড়াও লকডাউনের ফলে রাজ্য সরকারের অনান্য বহু ক্ষেত্রে আয় প্রায় তলানিতে এসে ঠেকেছে। মদ বিক্রিতে রাজ্য সরকারের বিপুল পরিমান একটা রাজস্ব আদায় হয়। এমনিতেই করোনা মোকাবিলায় রাজ্য সরকারের কোটি কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় হচ্ছে।আর সেই আয়-ব্যয়ের অনুপাতিক হারকে সঠিক পর্যায়ে রাখতে এবং রাজ্যের রাজকোষের ঘাটতি মেটাতে মদের দোকান খুলে দেবার পক্ষপাতি রাজ্যের আমলাদের বড় একটা অংশ।
এছাড়াও যারা রোজ মদ্যপান করেন, তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের কথাও চিন্তা করা দরকার বলে মনে করা হচ্ছে। এই শ্রেণীর মানুষরা কিন্তু নিতান্ত বাধ্য হয়েই কালোবাজারিদের থেকে বহুগুণ বেশি দামে মদ কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। এছাড়াও দিনমজুর ও নিম্নবিত্তের মদ্যপায়ীরা স্থানীয় চোলাই মদের (হাঁড়িয়া বা পচানী ) দিকে ঝুঁকছে। সেক্ষেত্রে রাজস্ব ক্ষতি ছাড়াও, এই ধরনের মদের বিষক্রিয়ায় বহু মানুষের মৃত্যু হওয়াও অসম্ভব কিছু নয়।
আর এই সমস্ত দিক বিচার-বিবেচনা করেই রাজ্যে মদের দোকান যথাশীঘ্র সম্ভব খুলে দেবার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। এর সাথে সাথেই রাজস্ব আদায় বাড়াতে সমস্ত রকম মদের দাম নির্ধারিত দাম থেকে আরো প্রায় ৩০ শতাংশ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।সোমবার থেকে সম্ভবত মদ তৈরির কারখানা গুলি চালু হওয়ার কথা ছিল। সেক্ষেত্রে সরকারের নির্দিষ্ট সরবরাহ ডিপোগুলি ( বেভকো ) থেকে দোকানগুলিতে মদ পৌঁছে, তা বিক্রি শুরু হতে আরও কদিন সময় লাগবে বলে সূত্রের খবর।
জেলার বেশ কয়েকটি মদের দোকানের মালিকের সাথে কথা বলে জানা গিয়েছিল রাজ্য আবগারি দপ্তরের স্পষ্ট নির্দেশ ও পর্যাপ্ত পুলিশি নিরাপত্তা না পেলে তাদের পক্ষে মদের দোকান খোলা কোনভাবেই সম্ভব নয়। এছাড়াও তাদের দোকানের মজুত হয়ে থাকা পুরানো দামের মদের বোতলের উপর সরকার নতুন দামের ‘স্টিকার’ লাগিয়ে না দিলে, খরিদ্দারদের সাথে তাদের বচসা ও গোলমাল হতে পারে।
অন্যদিকে রাজ্য আবগারি দপ্তরের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার এক পদস্থ আধিকারিক জানিয়েছিলেন,মঙ্গলবার দুপুর থেকে মদের দোকান খোলা হতে পারে।
সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত অধৈর্য্য হয়ে মদের দোকানের সামনে যথারীতি ঠায় দাঁড়িয়ে। কিন্তু লকডাউনে মদের দোকানও যে লক করা রয়েছে। খুলবে কে?অগত্যা বিমর্ষ হয়ে বাড়িতে ফিরে যায় সুরাপায়ীদের দল। আবার যথারীতি মঙ্গলবার সকাল থেকে মদের দোকান খোলার আগে থেকে দোকানের সামনে দীর্ঘ লাইন পড়ে যায় ।খুলে যায় মদের দোকান। হুলস্থুল বেধে যায় কে আগে মদ কিনতে পারবে। লাইন ঠিক করতে হিমসীম খেতে হয় পুলিশকেও। যদিও এদিন সুরাপায়ীরা দুটি করে মদের বোতল কিনতে পেরে খুব খুশি। শতদল মন্ডল,লক্ষণ সরদার,ভীম বারিকদের মতো নিত্য সুরাপায়ীরা জানায় “অতিরিক্ত পয়সা যায় যাক।দীর্ঘ প্রায় চল্লিশ দিন পর মদ পেয়ে তারা খুশি। অনেকে আবার জানিয়েছে আজ মদ খেয়ে একটু নিশ্চিন্তে বিশ্রাম নিতে পারবো।