বৃহস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

জনসাধারণ কে সচেতন করতে রাজপথে নামলো খোদ করোনা

News Sundarban.com :
মে ২, ২০২০
news-image

সুভাষ চন্দ্র দাশ,ক্যানিং –

লকডাউন মেনে চলা এবং করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে জনসাধারণ কে সচেতন করতে রাজপথে নামলো খোদ করোনা।করোনা তান্ডবের শুরুতেই লকডাউন চলাকালীন জনসাধারণ কে সচেতন করতে পুলিশ প্রশাসন থেকে শুরু করে সরকারী কর্মকর্তারা একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।আর সেই সমস্ত ভাবধারা সচেতনতা কে অবলম্বন করে করোনা সচেতনতা করতে এক অভিনব পন্থা অবলম্বন করে উদ্যোগ নিল ক্যানিংয়ের এক যুবক।নাম সমরেশ দলুই। পেশায় একজন ব্যবসায়ী সমাজসেবী ও বটে।শনিবার সকালে স্থানীয় ক্যানিং শহরে বিভিন্ন প্রান্তে সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে মহামারী করোনা ভাইরাসের ছদ্মবেশে রাস্তায়,বাজারে,ষ্টেশন,মহিলা থানা,ক্যানিং থানা,বিভিন্ন রাষ্ট্রায়াত্ব ব্যাঙ্ক সহ জনবহুল এলাকায় গিয়ে করোনার ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতনতা করেন। শুধুমাত্র সচেতনতা করাই মূল লক্ষ্য নয়। পাশাপাশি থার্মাল স্কিনিং থার্মোমিটার দিয়ে রীতিমতো জনসাধারণের তাপমাত্রা পরীক্ষা করেন। সম্ভাব্য করোনা রয়েছে কি না।আর করোনার এমন ছদ্মবেশে সাধারন মানুষজন প্রথমে ভয় পেয়ে হকচকিয়ে যায়। পরে অবশ্য সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখেই শারীরীক সুস্থ রয়েছেন কিনা তা পরীক্ষা করিয়ে নেন।পরীক্ষার পাশাপাশি ছদ্মবেশী করোনা কে বলে শোনা যায় “আমি করোনা। আমায় থেকে দূরত্ব বজায় রাখুন,লকডাউন মেনে চলুন,মুখে মাস্ক ব্যবহার করুন। অন্যথায় সচেতন না হলে আমি অনায়াসেই মানুষের শরীরের নাক,মুখ দিয়ে প্রবেশ করবো। কেউই আটকাতে পারবে না। তারপর ঠাঁই হবে সোজা শশ্মানে কিংবা কবরস্থানে। আমি এতোটাই ভয়ানক ,যার জন্য কেউ সাহস দেখিয়ে শেষ দেখা দেখতে যাওয়ার আগে শতবার ভাবতে হবে তাকে।”
আচমকা কেন এমন উদ্যোগ?জানতে চাইলে সমরেশ জানিয়েছেন “স্ত্রী সুমি ও দুই পুত্র সন্তান সৌম্য ও শ্রাবণ কে নিয়ে ক্যানিংয়ের দিঘীরপাড়া এলাকায় বসবাস করেন।দুই ছেলের জন্মদিন পালন করে ধূমধাম করে। সেই মতো দুই ছেলের জন্য দুটি লক্ষ্মী ভান্ডার কিনে দিয়েছিলেন টাকা জমানোর জন্য।বছর শেষে সেই জমানো টাকা খরচ করে জন্মদিন অনুষ্ঠিত হয়।ছোট ছেলে শ্রাবণের ২২ শ্রাবণ জন্মদিন।সেই প্রস্তুতির শুরু আগাম চলছিল। ইতিমধ্যে থাবা বসিয়েছে মহামরী করোনা ভাইরাস।চলছে লকডাউন। একে একে পুরীর রথযাত্রা থেকে শুরু করে বড় বড় ক্লাব কর্তারা জানিয়ে দিয়েছেন পূজো হবে না চলতি বছরে।পাশাপাশি করোনার জেরে বিয়ে,শ্রাদ্ধ,অন্নপ্রাশন সহ প্রায় সমস্ত প্রকার সামাজিক অনুষ্ঠানও বয়কট রয়েছে।চলতি বছর বাড়ির ছোট ছেলের জন্মদিন পালন করা অসম্ভব ধরে নিয়ে চিন্তায় পড়েন দলুই পরিবার।
ইতিমধ্যে বিভিন্ন পত্রপত্রিকা,টিভি চ্যানেল,সহ অন্যান্য স্যোশাল মিডিয়ায় করোনা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকম সচেতনার ছবি দেখে উদ্বুদ্ধ হয় বছর পাঁচেকের শ্রাবণ।বৃহষ্পতিবার দুপুরে আচমকা সে তার লক্ষ্মী ভান্ডার ভেঙে ফেলে।জমানো কুড়ি হাজার টাকা শ্রাবণ তুলে দেয় তার বাবা সমরেশের হাতে।ছোট্ট ক্ষুঁদে শ্রাবণ তার বাবার হাতে টাকা তুলে দিয়ে জানায় জন্মদিন পালন করতে হবে না।জমানো টাকা দিয়ে খরচ করে জনসাধারণ কে সচেতন করতে বলে।
ছেলের এমন কথা শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন সমরেশ। কি করবেন ভেবে উঠতে পারছিলেন না। অবশেষে তার সহধর্মিনী সুমী সমরেশ কে এমন অভিনব সচেতনতার কথা বলে। সেই মতো অর্ডার করে কলকাতা থেকে থার্মাল স্কিনিং যন্ত্র নিয়ে আসে। স্থানীয় এক দর্জিকে দিয়ে অভিনব পোশাকও তৈরি করে নেয়। শনিবার সকাল থেকে অভিনব প্রচার করতে মাঠে নেমে পড়ে সমরেশ।শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পায় ৫০০ লোক কে পরীক্ষা করে সচেতনতার বার্তাদেন।পাশাপাশি ধারাবাহিক ভাবে এমন সচেতনতা চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েন সমরেশ।
সমরেশের এমন ভূমিকায় স্বভাবতঃ খুশি সাধারণ মানুষজন।চা বিক্রেতা তারক দাস,দেবব্রত মুখার্জী,হকার সিকান্দর সাহানী,কালিদাস দেবনাথ,রেলপুলিশ জোয়ান শান্তিময় ঘোষ,অলি আহমেদ’রা জানিয়েছেন “যুবক সমরেশ করোনা মহামারী ঠেকাতে একক ভাবে এমন অনন্য উদ্যোগ গ্রহন করায় খুশি তারা। ”