এক ফোনেই জরুরি ওষুধ সহ অন্যান্য সামগ্রী বাড়ির চৌকাঠে পৌঁছে দিচ্ছে যুবক
নিজস্ব প্রতিনিধি, ক্যানিং -করোনা সংক্রমণের আতঙ্ক ছিনিয়ে নিতে পারেনি মানবিক মনুষ্যত্ববোধ।তারই উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত নজির ক্যানিংয়ের এক যুবকের। মানবিকতার অনন্যা দৃষ্টান্ত। এক ফোনেই ক্যানিং মহকুমার যেকোন প্রান্তে অসুস্থ বৃদ্ধ বৃদ্ধাদের জরুরি ওষুধ সহ অন্যান্য সামগ্রী বাড়ির চৌকাঠে পৌঁছে দিচ্ছেন সম্পূর্ণ নিখরচায়।দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ক্যানিংয়ের ১ নম্বর দিঘীরপাড় গ্রামের বাসিন্দা যুবক সমরেশ দোলুই। পেশায় একজন ক্ষুদ্র চাউমিন ব্যবসায়ী।
দেশজুড়ে করোনায় জর্জরিত মানুষজন। জারি রয়েছে লকডাউন। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে এখন মূল অস্ত্র একটাই ‘বাড়িতে থাকুন’। আর এমন মহামারী পরিস্থিতিতে এলাকার বয়স্ক মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে একক উদ্যোগে তাঁদের হেঁসেল সচল রাখার দায়িত্ব পালন করে চলেছেন এই যুবক। পাশাপাশি জরুরী ওষুধপত্রও।
গত ২৩ মার্চ জনতা কার্ফু চালু থেকেই নিখরচায় হোম ডেলিভারি পরিষেবা চালু করেছেন যুবক সমরেশ। নায্যমূল্যের একান্ত প্রয়োজনীয় ওষুধ সহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী হাতে পেয়ে খুশি বয়স্করা।
করোনা নিয়ে সমগ্র বিশ্ব জুড়ে চলছে ত্রাহি ত্রাহি রব।দফায় দফায় লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা।সেই সাথে মৃত্যু তালিকাও দীর্ঘায়িত হচ্ছে। সংক্রমণ ঠেকাতে দেশ জুড়ে জারি রয়েছে লকডাউন। সরকারি তরফে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে নিয়ম বিধি মেনে চলার। আর এমনই ভয়ানক পরিস্থিতি তে জরুরী ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ওষুধ,চাল,ডাল,আলু থেকে সবজীর দোকান খোলা থাকলেও দৌড় ঝাঁপ করতে পারছেন না বয়সের ভারে ভারাক্রান্ত বৃদ্ধ বৃদ্ধারা। আর তাঁদের অক্ষমতার কথা ভেবেই এবং লকডাউন কে সফলতা করতে এগিয়ে এসেছেন ক্যানিংয়ের যুবক সমরেশ দোলুই।আপনারা বাড়িতেই থাকুন। সমরেশ দোলুই বিপদে আপদে আপনাদের জন্য বাইরে রয়েছে।সোস্যাল মিডিয়ায় এমন বার্তা দিয়েছেন এই যুবক। যোগযোগ করতে হচ্ছে ৭০০১৫৮৬০২৩ এই নম্বরে। সেখানে ফোন করলেই সমরেশ নিজেই বাইক চালিয়ে বাড়িতে বাড়িতে পৌঁছে দিচ্ছেন একান্ত প্রয়োজনীয় ওষুষপত্র সহ চাল ডাল তেল থেকে নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী।
সোস্যাল সাইটে ফোন নম্বর পেয়ে আশা ভরসা নিয়ে ফোন করেছিলেন ক্যানিংয়ের রাজীব মাঠের বাসিন্দা সুগারে আক্রান্ত দেবব্রত ঘোষাল।ফলও মিলেছে ঘন্টা চারেক ব্যবধানে। ওষুধ নিয়ে বাইক হাঁকিয়ে দেবব্রত বাবুর বাড়ির কড়া নাড়তেই অবাক দেবব্রত বাবুর পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা।প্রয়োজনীয় ওষুধ পেয়ে খুশি। ”
বাসন্তী ব্লকের বাসন্তী বাজার পাড়ার বাসিন্দা বছর পঁয়ষট্টির চন্দ্রা চ্যাটার্জী। তিনি হার্ট,সুগার ,ডায়াবেটিস সহ অন্যান্য রোগে আক্রান্ত। ডাক্তারের প্রেসক্রিপশনে লেখা ওষুধপত্র ক্যানিং মহকুমার এলাকার বিভিন্ন ওষুধ দোকানে খুঁজে ও পাননি। হতাশ হয়ে পড়েন। পরে সমরেশ দোলুইয়ের সাথে যোগাযোগ করতেই দুই দিনের মধ্যে কলকাতা থেকে ওষুধ নিয়ে এসে বাড়িতে পৌঁছে দেয় সমরেশ।বাড়িতে বসে একপয়সা খরচ না করে প্রয়োজনীয় ওষুধ হাতের মুঠোয় পেয়ে খুশি চন্দ্রাদেবীও।
অন্যদিকে ক্যানিংয়ের গোলকুঠি পাড়ার বছর বাহাত্তর বয়সের বাসিন্দা কালিপদ মুখার্জী। তিনি ইউরিন সমস্যায় জর্জরিত। ওষুধ ছাড়া তিনি বাঁচেন না। দুদিন ক্যানিংয়ের বহু ফার্মেসীতে খোঁজ করে ও পানিন প্রয়োজনীয় ওষুধ। সেখানেও সমরেশের ডাক পড়ে। কলকাতা থেকে একদিন পরেই ওষুধ এনে বৃদ্ধার বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছেন।
লকডাউনের বাজারে বিনা পারিশ্রমিকে নিত্য প্রয়োজনীয় ওষুধ সহ অন্যান্য সামগ্রী হোম ডেলিভারি পেয়ে খুশি এলাকার সাধারণ মানুষজন।
অন্যদিকে সমরেশের কথায় “সমাজসেবার কাজে নিজেকে নিয়োজিত করার জন্য প্রাণপন চেষ্টা করে চলেছি। করোনা বিধি মেনেই সতর্কতার সাথেই এই কাজ করছি। লকডাউন যতদিন থাকবে ততদিনই এই পরিষেবা দিতেই বিনা পারিশ্রমিকে পৌঁছে যাবো বাড়িে বাড়িতে।”